Advertisement
E-Paper

হিসেব উল্টে বেড়ে গেল মদের চাহিদা

একে করোনা আবহ, তার উপর রাসে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি মানুষের আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি নানা দিক ভেবে সমস্ত লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানেই এ বার অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে মদ মজুত করা হয়েছিল। কিন্তু রাস যত গড়িয়েছে, ততই তাঁদের অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছে।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ০৩ ডিসেম্বর ২০২০ ০৪:৪৭
বিসর্জনের পথে। নবদ্বীপে বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

বিসর্জনের পথে। নবদ্বীপে বুধবার। নিজস্ব চিত্র।

মঙ্গলবার ভর সন্ধেবেলাতেই তিনি সমাজমাধ্যমে জানিয়ে ছিলেন, তাঁর দোকান শূন্য। হাত কামড়ে আক্ষেপ করছিলেন কেন আরও বেশি পরিমাণে মজুত করেননি! দেশি হোক বা বিলিতি, রাসের আড়ংয়ের সন্ধ্যায় নবদ্বীপের বিভিন্ন মদের দোকানে নাই নাই রব উঠে যায়। ১০০ টাকার বাংলা অথবা হাজার টাকার বিলিতি, এমনকি বিয়ারের স্টকও ফুরিয়ে ফতুর রাসের নবদ্বীপ! এমনিতে এ বার সেই অর্থে রাস ছিল অনেক শান্ত, সংযত। নানা বিধিনিষেধের বেড়াজালে অতিমারি কালের রাসের উদযাপন ছিল সম্পূর্ণ অন্য রকম। কোনও কিছুতেই প্রকাশ্য উন্মাদনা চোখে পড়েনি। কিন্তু তাতে রাসের রস যে কোনও ভাবেই শুকিয়ে যায়নি তা বলাই বাহুল্য।

একে করোনা আবহ, তার উপর রাসে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, সর্বোপরি মানুষের আর্থিক অবস্থা ইত্যাদি নানা দিক ভেবে সমস্ত লাইসেন্সপ্রাপ্ত দোকানেই এ বার অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে মদ মজুত করা হয়েছিল। কিন্তু রাস যত গড়িয়েছে, ততই তাঁদের অনুমান ভুল প্রমাণিত হয়েছে। কোনও দোকানে স্টক ফুরিয়েছে বিয়ার এবং বাংলা মদের, তো কোথাও বিলিতির স্টক শেষ হওয়ায় দোকানের ঝাঁপ ফেলে ব্যবসায়ী মেয়ে বউ নিয়ে ঠাকুর দেখতে বেড়িয়ে পড়েছেন আড়ংয়ের সন্ধ্যায়। এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘রাসের আড়ং হোক বা নাই হোক, মদ বিক্রিতে এ বারও কোনও কমতি রইল না। আগে বুঝলে আরেকটু মজুদের পরিমাণ বাড়ানো যেত।’’ লকডাউনের লোকসান পোষানোর এমন সোনার সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় তাঁদের মন খারাপ। অতিমারির আবহে এ বার উৎসবের আগে মদের মজুদের পরিমাণ অর্ধেকেরও কম করে ফেলেছিলেন বিক্রেতা সুব্রত ঘোষ। তিনি বলেন, “করোনা পরিস্থিতিতে লোকের হাতে পয়সাকড়ি কম, অনেকের কাজ নেই। এই অবস্থায় আমি গত বছরের তুলনায় চার ভাগের এক ভাগ মজুত রেখেছিলাম। গত বার সব মিলিয়ে ছ’শো পেটি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের বিলিতি মদ তুলেছিলাম। এ বার মাত্র দেড়শো পেটি তুলেছি। কারণ লকডাউন পরবর্তী সময়ে যখন দোকান খোলার অনুমতি পেলাম, তারপর থেকে কেনাবেচার ধরন দেখে আমাদের মনে হয়েছিল এ বার ব্যবসা খুব একটা ভাল হবে না।” কিন্তু তিনি জানান, এবার রাসে তাঁর কাছে বিয়ারের সঙ্গে বাংলা মদের বিক্রি সবচেয়ে বেশি হয়েছে। ফলে ওই দুটোই কার্যত ফুরিয়ে যায়। বিষ্ণুপ্রিয়া হল্ট সংলগ্ন এক দোকানের মালিক প্রবীর দেবনাথ বলেন, “এ বার সব মিলিয়ে তিন হাজার বোতল নানা ব্র্যান্ডের মদ মজুত করেছিলাম। যা গত বারের তুলনায় অর্ধেক। কিন্তু রাস শুরু হতেই চাহিদা দেখে মনে হল সিদ্ধান্ত ভুল ছিল।’’ কম পরিমাণ মজুতের ব্যাখ্যা দিয়ে প্রবীর বলেন, “লকডাউনের পর যখন মদের দোকান খোলার অনুমতি পাওয়া গেল তখন প্রথম ধাপেই এক ধাক্কায় সর্বোচ্চ তিরিশ শতাংশ পর্যন্ত মদের দাম বেড়ে যায়। এরপর পুজোর আগে আরেক দফায় ফের চল্লিশ শতাংশ দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয় বিলিতি মদের। অন্য দিকে দাম কমানো হয় বাংলা মদের। ৬০০ মিলি বাংলার দাম ১২০ টাকা থেকে কমে হয়েছে ১০০ টাকা। ১৭০ টাকার বিয়ার কমে হয়েছে ১৪০ টাকা। অন্য দিকে ৫২০ টাকা দামের মদ বেড়ে হেয়েছে ৯৮০ বা ৮৭০ টাকার সাড়ে সাতশো মিলি মদের দাম হয়েছে ১৩৫০ টাকা। উৎসবের মরসুমের ঠিক আগেই এ ভাবে দাম বেড়ে যাওয়ায় মদ বিক্রেতা ব্যবসায়ীরা স্বাভাবিক ভাবেই অন্যান্য বারের তুলনায় অনেক কম পরিমাণে মজুদ করেন। কিন্তু উৎসব তাঁদের সকলকে ভুল প্রমাণ করে ছাড়ল।

liqour Ras
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy