Advertisement
E-Paper

পদ্মার ইলিশ এখন স্মৃতি!

পদ্মাপাড়ে জামাইষষ্ঠীর বাজারে দিনভর ছড়িয়ে পড়ল এমনই হা-হুতাশ! আর হবে না-ই বা কেন! একটা সময় বাবাজীবনের পাতে পদ্মার ইলিশ না দিলে মান থাকত না। আর ইলিশ বলে ইলিশ!

অনল আবেদিন

শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০১:৪৪
আহারে ইলিশ: শুক্রবার বহরমপুরের বাজারে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

আহারে ইলিশ: শুক্রবার বহরমপুরের বাজারে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

কোথায় সেই পদ্মার ইলিশ, আর কোথায় এই চালানি জিনিস!

পদ্মাপাড়ে জামাইষষ্ঠীর বাজারে দিনভর ছড়িয়ে পড়ল এমনই হা-হুতাশ! আর হবে না-ই বা কেন! একটা সময় বাবাজীবনের পাতে পদ্মার ইলিশ না দিলে মান থাকত না। আর ইলিশ বলে ইলিশ! ভাপা, পোস্ত, ভাজা, দই, সর্ষে, কালো জিরে দিয়ে পাতলা ঝোল— সে এক লম্বা লিস্টি!

গরিব, বড়লোকেরও ভেদাভেদ ছিল না। পদ্মার কৃপায় রাজার ঘরেও যে ইলিশ, টুনির ঘরেও তাই। ইলিশের হাত ধরেই তখন হেঁশেলে হেঁশেলে শোনা যেত সাম্যবাদের গান।

একটা সময় পদ্মাপাড়ের লালগোলায় মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকত ঘোড়ার গাড়ি। গাড়িতে থাকত পাঁচ-সাতটা ঝাঁকা ভর্তি ২০০-৩০০ ‘পিস’ ইলিশ। এক একটি ইলিশের ওজন দেড় থেকে দু’কিলোগ্রাম। লালগোলা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহাঙ্গির মিঞার স্পষ্ট মনে আছে, ‘‘বাংলাদেশ থেকে চোরাপথে আসা পেল্লাই সাইজের ইলিশ বিএসএফ ও শুল্ক দফতরের হাতে ধরা পড়ত। সেই ইলিশ স্থানীয় লোকজনের মধ্যে বিএসএফ ও শুল্ক দফতর বিলিয়ে দিত। আহা, সেই ইলিশের স্বাদের সঙ্গে কোনও তুলনা হয় না। দু’-তিন দিন ধরে হাতে গন্ধ লেগে থাকত।’’

লালগোলার নেতাজি মোড়ে ও বাসস্টপে প্রতি সন্ধ্যায় পদ্মার টাটকা মাছের দু’টি বাজার বসে। জামাইষষ্ঠীর আগের দিন, শুক্রবার সন্ধ্যায় পদ্মার টাটকা ইলিশের খোঁজে দু’টি বাজারে গিয়ে মাথায় হাত লালগোলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান অজয় ঘোষের। তিনি বলছেন, ‘‘সান্ধ্য মাছের বাজার দু’টির কোনওটাতেই ইলিশ ওঠেনি।’’ ফলে তাঁর ভরসা আজ শনিবারের সকালের বাজারের চালানি ইলিশ। তিনি বলেন, ‘‘অগত্যা আকাশছোঁয়া দাম দিয়ে ডায়মন্ড হারবার ও কোলাঘাটের ৫০০-৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশেই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।’’

পঁঞ্চাশ ছুঁইছুঁই অজয় ঘোষের শাশুড়ি মঞ্জু ভট্টাচার্যের বয়স সত্তরের কাছাকাছি। জামাইষষ্ঠীর কথা উঠতেই তাঁর মন বেশ ভার হয়ে উঠে। তার পাঁচ ননদ। তাঁদের বিয়ে হয়েছে জেলার বাইরে। বরাবর পাঁচ ননদই তাঁদের স্বামী সন্তান নিয়ে লালগোলায় বাবার বাড়ি জামাইষষ্ঠীতে আসতেন।

অজয় বলছেন, ‘‘ষষ্ঠী পালনের থেকে তাঁদের বেশি টান ছিল পদ্মার টাটকা ইলিশ, গাছপাকা আম ও লিচুর দিকে। কয়েক বছর থেকে পদ্মার ইলিশ, গাছপাকা আম ও লিচু— সবই অমিল।’’ এখন মঞ্জু ভট্টাচার্যের পাঁচ ননদের কেউই আর স্বামী সন্তানদের নিয়ে লালগোলায় ষষ্ঠীতে আসেন না।

মঞ্জুদেবীর মনে পড়ে, আঁশবটি দিয়ে দেড়-দু’ কেজি ওজনের রুপোলি ইলিশ কাটার আনন্দ। তিনি বলেন, ‘‘সর্ষে ইলিশ, জিরে ফোড়ন দেওয়া ইলিশের ঝোল, ভাতের হাঁড়ির ভিতরে রান্না করা ভাপা ইলিশ, ভাজা ইলিশ, কচুর পাতা, নয়তো চালকুমড়ো দিয়ে ইলিশের মাথা রান্না করা পদের বাটি জামাইদের পাতের চারপাশ ঘিরে থাকত। খেয়ে জামাইরা তৃপ্তির ঢেকুর তুলত। আমরাও তাদের খাওয়াতে পেরে গর্ব অনুভব করতাম। সেই সব সুখের দিন কোথায় যে হারিয়ে গেল!’’

সুখের দিনও হারিয়ে গেল, অমিল হয়ে গেল পদ্মার রুপোলি শস্যও।

Bengali Festival Jamai Sashti Special Hilsa Padma River
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy