Advertisement
E-Paper

যানজট থেকে মুক্তি চায় করিমপুর

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রান্তিক জনপদ, করিমপুর আড়ে-বহরে বেড়েছে অনেকটাই। বেড়েছে জনসংখ্যাও। কিন্তু নাগরিক পরিষেবার মান সেই অর্থে বাড়েনি। বহু আবেদন-নিবেদন, অভিযোগ-অনুযোগের পরেও করিমপুরে আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি কোনও স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড। রাস্তার পাশে একফালি জায়গার উপর গড়ে উঠেছে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড। সেখানে দাঁড়নোর জায়গা না পেয়ে রাস্তার উপরে উঠে আসে বাস।

কল্লোল প্রামাণিক

শেষ আপডেট: ২৮ অক্টোবর ২০১৪ ০১:০০
রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাস।

রাস্তার উপরে দাঁড়িয়ে রয়েছে বাস।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে প্রান্তিক জনপদ, করিমপুর আড়ে-বহরে বেড়েছে অনেকটাই। বেড়েছে জনসংখ্যাও। কিন্তু নাগরিক পরিষেবার মান সেই অর্থে বাড়েনি। বহু আবেদন-নিবেদন, অভিযোগ-অনুযোগের পরেও করিমপুরে আজ পর্যন্ত তৈরি হয়নি কোনও স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড। রাস্তার পাশে একফালি জায়গার উপর গড়ে উঠেছে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ড। সেখানে দাঁড়নোর জায়গা না পেয়ে রাস্তার উপরে উঠে আসে বাস। ফলে সারাক্ষণই যানজটে হাসফাঁস করছে করিমপুর। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সমস্যার সমাধানের জন্য প্রশাসনকে একাধিকবার জানানো হয়েছে। তাতে ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে’, ‘দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হবে’ গোছের দায়সারা কিছু আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। তাতে স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ বেড়েছে বই কমেনি।

এক সময় নদিয়ার সদর শহর কৃষ্ণনগর থেকে শিকারপুর বা গোপালপুরঘাট পর্যন্ত সারা দিনে কয়েকটি বাস চলত। কোনও বাসস্ট্যান্ড ছিল না করিমপুরে। থাকার মধ্যে একটা বাসস্টপ। ফাঁকা জায়গায় পাশেই জঙ্গল। হাতে গোনা দু’একটি দোকান। কিন্তু দিন যত গিয়েছে বদলে গিয়েছে করিমপুর। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও পুরসভা গঠিত হয়নি। তবে করিমপুর-১ ও করিমপুর-২ গ্রাম পঞ্চায়েত মিলে তৈরি হয়েছে করিমপুর গঞ্জ-শহর। বর্তমানে দুই পঞ্চায়েত মিলিয়ে মোট জনসংখ্যা ৫২ হাজারের কিছু বেশি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, কাজের সুযোগ বেশি থাকায় আশেপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ এসে বসবাস করতে শুরু করেন করিমপুরে। রয়েছে গ্রামীণ হাসপাতাল, উচ্চ বিদ্যালয়, মহাবিদ্যালয়ও। যাতায়াতের জন্য বেড়েছে যানবাহনের সংখ্যা। কিন্তু সে ভাবে চওড়া হয়নি এলাকার রাস্তা। আজও তৈরি হয়নি কোনও স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড। যে অস্থায়ী বাসস্ট্যান্ডটি রয়েছে তাতে সব বাস দাঁড়ানোর জায়গা হয় না। তাই জায়গা না পেয়ে কিছু বাস রাস্তার উপর দাঁড়িয়ে থাকে। ফলে তাদের পাশ কাটিয়ে অন্যান্য গাড়ি যাতায়াতের সময় ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। প্রতিদিন নতিডাঙা মোড় থেকে নাটনা মোড় পর্যন্ত এই যানজটের যন্ত্রণা কিছুতেই যেন পিছু ছাড়ছে না স্থানীয় বাসিন্দাদের। শুধু তাই নয়, প্রতি শনি ও মঙ্গলবার করিমপুরে সব্জি ব্যবসায়ীদের হাট বসে। আশেপাশের এলাকা থেকে প্রচুর মানুষ রিকশা, লছিমন, সাইকেল, ট্রাক্টরে সব্জি বোঝাই করে করিমপুরে বিক্রি করতে আসেন। তার ফলে ওই দু’দিন যানজটে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যায় করিমপুর।

আনন্দপল্লির গৃহবধূ পিঙ্কি বিশ্বাস, স্কুল শিক্ষিকা লিপিকা ঘোষের কথায়, “সারা বছর তো বটেই, বিশেষ করে প্রতি মঙ্গলবার ও শনিবার রাস্তায় ব্যাপক যানজট হয়। বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে চিন্তায় থাকতে হয়। আমরা নিজেরা যাতায়াত করতেও খুব ভয় পাই। মানুষের কথা ভেবে প্রশাসনের এ দিকে নজর দেওয়া উচিত।”

যানজটে থমকে গিয়েছে করিমপুর।

একই কথা শোনা গেল পেশায় ব্যবসায়ী শান্তনু বিশ্বাস, মহামায়াপল্লির বাসিন্দা মৃন্ময় চক্রবর্তীর মুখেও। তাঁরা বলছেন, “দিন দিন জনসংখ্যা এবং যানবাহনের সংখ্যা বাড়লেও এলাকার পরিকাঠামো সেই অর্থে বাড়েনি। কোনও বিকল্প রাস্তাও নেই।” রাস্তার উপর সামান্য জায়গায় তৈরি পুরোনো বাসস্ট্যান্ডের পরিবর্তন না হলে আগামী দিনে যানজট আরও ভয়ঙ্কর রূপ নেবে বলে আশঙ্কা করেছেন তাঁরা।

বিকল্প কোনও রাস্তা না থাকায় করিমপুর এবং আশেপাশের এলাকার মানুষকে একটি রাস্তার উপর দিয়েই যাতায়াত করতে হয়। কয়েক দিন আগে করিমপুর-১ পঞ্চায়েতের উদ্যোগে করিমপুর বাসস্ট্যান্ড ও নতিডাঙা মোড়ে আলোর ব্যবস্থা করার ফলে মানুষের বেশ সুবিধা হয়েছে। কিন্তু যান নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থা না থাকায় নাটনা চার মাথার মোড়ে মাঝে মধ্যেই দুর্ঘটনা ঘটে।

করিমপুর বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক সুবোধ রায় বলেন, “করিমপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে বহরমপুরে প্রতিদিন প্রায় ৮০টি ও কৃষ্ণনগর রুটে প্রায় ১২০টি বাস যাতায়াত করে। বেড়েছে বাস, ট্রাকের সংখ্যা। ছোট গাড়ির সংখ্যাও কমবেশি দেড়শোটি। মহকুমা আধিকারিক, বিডিও এবং এলাকার বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে বৈঠক করেও কোনও সমাধানসূত্র মেলেনি।”

করিমপুর-১ গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান কংগ্রেসের তারক সরখেল বলেন, “করিমপুরে একটা স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের খুবই প্রয়োজন। তা না হলে যানজটের সমস্যা দূর করা কঠিন। এখানে নতিডাঙা মোড় থেকে নাটনা মোড় অবধি যাওয়ার একটিমাত্র রাস্তা। দ্বিতীয় কোনও পথ নেই। এলোমেলো ভাবে যেখানে সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রী নামানো আর তোলার কারণে অকারণ রাস্তায় যানজট হয়।”

তিনি জানান, করিমপুরের রেগুলেটেড মার্কেটের মাঠে একটা জমি বিপণন দফতরের দেওয়ার কথা হয়েছে। পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে একবার সেখানে রাস্তার বাস দাঁড়ানোর জন্য মাটি তুলে দেওয়া হয়েছে। বাসস্ট্যান্ড হলে সেই কাজে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেবেন বলে জানান তারকবাবু।

করিমপুরের বিধায়ক সিপিএমের সমরেন্দ্রনাথ ঘোষ বলেন, “যানজট করিমপুরের একটা প্রধান সমস্যা। সেই সমস্যা সমাধানে দল-মত নির্বিশেষে সকলের উচিত করিমপুরের রাস্তা ও বাসস্ট্যান্ডের জন্য আরও বেশি উদ্যোগী হওয়া। নতুন বাসস্ট্যান্ডের তৈরির জন্য আমি বিধায়ক তহবিলের এক অর্থ বর্ষের টাকা দিয়ে দেব।”

করিমপুর-১ তৃণমূলের প্রাক্তন ব্লক সভাপতি সুবল চন্দ্র ঘোষ বলেন, “করিমপুরে স্থায়ী বাসস্ট্যান্ডের জন্য দলীয় ভাবে বিভাগীয় মন্ত্রীদের বিষয়টি জানিয়েছি। রেগুলেটেড মার্কেটের মধ্যে বাসস্ট্যান্ডের জন্য জমি হস্তান্তর প্রক্রিয়া চালু হয়েছে। আশা করি খুব শীঘ্রই নতুন বাসস্ট্যান্ড তৈরির কাজ শুরু হবে।”

তেহট্টের মহকুমাশাসক অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “করিমপুরে যানজটের বিষয়টি জানি। ওখানে স্থায়ী বাসস্ট্যান্ড তৈরির জন্য বিপণন দফতরের এক একর দুই শতক জমি দেওয়ার কথা আছে। সেই জমি পরিবহন দফতরের হাতে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ হলেই কাজ শুরু হবে।”

‘হচ্ছে-হবে’, আশ্বাস, প্রতিশ্রুতি অনেক হয়েছে। এ বার সত্যিই কাজ দেখতে চায় করিমপুর।

—নিজস্ব চিত্র

amar shohor kallal pramanik karimpur latest news online news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy