একটা সবুজ মাঠ। চারি দিকে বইয়ের স্টল। মাঝে কয়েক জন বসে রয়েছেন। তাঁদের দেখতে সকলে এগিয়ে আসছেন। অনেকে বিশ্বাস করতে পারছেন না। মাঠের কোণ থেকে দৌড়ে আসছেন কেউ কেউ। যদি এসে ওই দৃশ্য না দেখতে পান। কে এ কজন বলে বসলো, মেলালেন তিনি (বই)মেলালেন।
হ্যাঁ। সত্যি তিনিই সকলকে মিলিয়ে ছাড়ল বইমেলার ময়দান। বেলডাঙা বইমেলা চলছে শনিবার থাকে। চলবে ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এই বইমেলা মাঠে সব রাজনৈতিক দলের নেতারা মাটি থেবড়ে বসে গল্পে মাতলেন। কেউ কারওর কাছে রাজনৈতিক আলোচনা বন্ধ রেখে শরীরের খোঁজ খবর নিলেন।
কে কে আছেন সেখানে?
রয়েছেন বেলডাঙার তৃণমূল বিধায়ক, তৃণমূলের শহর সভাপতি, তৃণমূলের পুরপ্রধান তাঁর পাশে রয়েছেন কংগ্রেসের শহর সভাপতি, তাঁর পাশে বিজেপির নেতা তথা পুরসভার বিরোধী দলনেতা। তারপাশেই সিপিএমের প্রবীণ নেতা। সকলে তাঁদের মুখগুলোর দিকে তাকাচ্ছে। তারা কেউ কারওর পোশাকের প্রশংসা করছেন। কেউ ব্যবহৃত সুগন্ধির আমেজে ফুরফুরে আস্বাদ নিচ্ছেন। সকলেই যেন মজে আছেন।
বেলডাঙার বিধায়ক হাসানুজ্জামান শেখ সোজা তাকিয়ে বলছেন, ‘‘সকলেই তো মানুষ। আর পৃথিবী গোল। বইমেলাকে কেন্দ্র করে মানুষ যদি ভেদাভেদ ভুলে মিলিত হতে পারে, তা হলে আমরা পারব না কেন? আমরা তো তাঁদের নির্বাচিত প্রতিনিধি। আমাদের এক জায়গায় আসতে বাধা কোথায়।’’ পাশে বসে কংগ্রেসের বেলডাঙা শহর সভাপতি কিশোর ভাস্কর বলেন, ‘‘আমার খুব ভাল লেগেছে। মনের মধ্যে কোনও দ্বিধা দ্বন্দ্ব কাজ করেনি। মানুষ আমাদের দেখেছে। এতে একটা ভাল বার্তা পৌঁছেছে।’’ বিজেপির প্রবীণ নেতা তথা বেলডাঙা পুরসভার বিজেপির বিরোধী দলের নেতা আলোক ঘোষ বলছেন, ‘‘ওটা মানুষের মিলন স্থল। সেখানে কে কী রাজনীতি করে তার খোঁজ নিয়ে লাভ কি। বই এখানে সকলকে মিলিয়ে দিয়েছে। এটাকে সামনে রেখে এগিয়ে যেতে হবে।"
তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন সিপিএমের প্রবীণ নেতা সাফিকুর রহমান। তিনি এক সময় বেলডাঙা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি ছিলেন। ছিলেন সিপিএমের বেলডাঙা জানাল কমিটির সম্পাদক। এই বর্ষীয়ান সিপিএমের নেতা হাসছেন। তাঁর কথায়, ‘‘তাই তো, তিনিই তো মেলালেন।’’
যাঁরা বেলডাঙা বইমেলায় যাতায়াত করছেন তাঁরা বলছেন, ওই দিন বইমেলার প্রারম্ভিক শোভাযাত্রা ছিল। নাগরিক সমাজের সকলেই সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁদের মধ্যে রাজনৈতিক বিশিষ্ট জনেরাও ছিলেন। তাঁরা পদযাত্রা শেষ করে মাঠের মধ্যখানে বসেন। কে কোথায় বসেছেন সেটা খেয়ালও করেননি। তার পরেই সকলে সেখানে উপস্থিত হন। অনেকে ছবি তোলেন। অনেকে ভিডিয়ো করতে থাকেন। জমে ওঠে বইমেলা প্রাঙ্গণ।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)