Advertisement
E-Paper

মণিগ্রামে ফের পাওয়া গেল পাথরের একাধিক মূর্তি

সাগরদিঘির মণিগ্রামে বাড়ি তৈরির ভিত খুঁড়তে গিয়ে রবিবার দুপুরে ফের মাটির তলা থেকে উদ্ধার হল ৩টি পাথরের মূর্তি। এর মধ্যে একটি মূর্তি দ্বিখণ্ডিত। গত ২৭ মার্চ এই মনিগ্রামেই ২০ ফুট দূরে একই ধরনের কালো পাথরের ৪ ফুট উচ্চতার একটি নারায়ণ মূর্তি উদ্ধার হয় বাড়ি তৈরির জন্য মাটি খোঁড়ার সময়। সেই মূর্তিটি গ্রামবাসীরা গ্রামের মন্দিরে রেখে দিলেও সোমবার ৩টি মুর্তি উদ্ধারের খবর পেয়েই সাগরদিঘি থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মুর্তিগুলি থানায় নিয়ে যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০১৪ ০০:৪২
উদ্ধার হওয়া মূর্তি। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

উদ্ধার হওয়া মূর্তি। অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়ের তোলা ছবি।

সাগরদিঘির মণিগ্রামে বাড়ি তৈরির ভিত খুঁড়তে গিয়ে রবিবার দুপুরে ফের মাটির তলা থেকে উদ্ধার হল ৩টি পাথরের মূর্তি। এর মধ্যে একটি মূর্তি দ্বিখণ্ডিত।

গত ২৭ মার্চ এই মনিগ্রামেই ২০ ফুট দূরে একই ধরনের কালো পাথরের ৪ ফুট উচ্চতার একটি নারায়ণ মূর্তি উদ্ধার হয় বাড়ি তৈরির জন্য মাটি খোঁড়ার সময়। সেই মূর্তিটি গ্রামবাসীরা গ্রামের মন্দিরে রেখে দিলেও সোমবার ৩টি মুর্তি উদ্ধারের খবর পেয়েই সাগরদিঘি থানার পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মুর্তিগুলি থানায় নিয়ে যায়। ছ’বছর আগে মণিগ্রাম থেকে মাইল খানেক দূরে হাটপাড়ায় রাজ্য প্রত্ন দফতর খননকার্য চালিয়ে প্রায় ২৪০টি প্রস্তর আয়ুধ উদ্ধার করে। পুণের ডেকান কলেজের দুই প্রত্ন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শরদ রাজগুরু ও ভাস্কর দেওতার তখন হাটপাড়ায় এসে খননের বিভিন্ন মাটির স্তর ও উদ্ধার হওয়া প্রস্তর আয়ুধগুলি প্রাথমিক ভাবে পর্যবেক্ষণের পর রাজ্য প্রত্ন দফতরকে জানান, বহু আগে প্রস্তর-অস্ত্র নির্মাণের কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল এই এলাকায়। ১৮ থেকে ২০ হাজার বছর আগের প্রাচীন সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সেখানে।

সাগরদিঘির এই এলাকা থেকে এর আগেও কালো পাথরের বহু মূর্তি উদ্ধার হয়েছে। গত বছরের ৩১ মে সুতির আহিরণে জাতীয় সড়ক তৈরির সময় বহু স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যায়। উদ্ধার করা ১১টি স্বর্ণমুদ্রা পরীক্ষার পর রাজ্য প্রত্ন দফতর জানায়, সেগুলি দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তের আমলের। সেই সব স্বর্ণমুদ্রাগুলি পরে কলকাতার রাজ্য সংগ্রহালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। জানা যায়, ওই রাস্তা নির্মাণের জন্য মাটি আনা হয়েছিল মণিগ্রাম ও তার আশপাশের এলাকা থেকে। পুলিশ জানায়, সোমবার সকালে মণিগ্রামে ঈদগাহের পাশে মোস্তাকিম শেখ নিজের জায়গায় বাড়ি তৈরির জন্য ভিত কাটছিলেন। তখনই মাটির প্রায় ৪ ফুট গভীরতা থেকে উদ্ধার হয় কালো পাথরের মূর্তিগুলি। মূর্তিগুলি মার্চ মাসে পাওয়া নারায়ণ মূর্তির মতো অত চকচকে ও নিখুঁত নয়। বহু জায়গা ভেঙে গিয়েছে। মোস্তাকিম বলেন, “সাত মাস আগে আমার দাদা কাজেম শেখও মাটি খোঁড়ার সময় একটি ৪ ফুট উঁচু কালো পাথরের মূর্তি পায়। আমার জায়গাটি প্রায় তার পাশেই। একই ভাবে উদ্ধার হয় এই মূর্তিগুলি। একটি মূর্তি প্রায় ২ ফুট উঁচু।”

চলছে ভিত খোঁড়ার কাজ।

রাজ্য প্রত্ন দফতর এই এলাকায় এর আগে সমীক্ষা করেন। সমীক্ষার সময় দেখা যায়, যে সব এলাকাগুলিতে প্রত্ন নিদর্শন মেলার সম্ভাবনা রয়েছে তার প্রায় সবই বর্তমানে ব্যক্তি মালিকানার দখলে। ফলে সর্বত্র খনন কাজ চালানো সম্ভব হয় না। সাগরদিঘির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে রাজ্য প্রত্ন বিভাগ খুবই আশাবাদী যে, এখানে মাটির নীচে উন্নততর অতীত নগর জীবনের সন্ধান মিলবে। এর আগে বর্ধমানের বীরভানপুরে কেন্দ্রীয় প্রত্ন সর্বেক্ষণ দফতর খনন কার্য চালিয়ে প্রাপ্ত প্রস্তর আয়ুধগুলিকে প্রত্ন বিশেষজ্ঞ বি বি লাল ১০ হাজার বছরের প্রাচীন বলে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে রিপোর্ট দেন। হাটপাড়ার প্রস্তর সংস্কৃতি যে আরও প্রাচীনতর তার আভাস দিয়ে যান পুণের প্রত্ন বিশেষজ্ঞরা। তারা রাজ্য প্রত্ন দফতরকে পরামর্শ দিয়ে যান খননকার্য চালানো হলে পশ্চিমবঙ্গের প্রত্ন ইতিহাসে সাগরদিঘির এই এলাকা গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু হাটপাড়ার পর গত ৬ বছরে রাজ্য প্রত্ন দফতর আর খনন কাজ চালাতে উদ্যোগী হয়নি। ফলে বিভিন্ন সময় উদ্ধার হওয়া বহু প্রত্নসামগ্রী বেহাত হয়ে গিয়েছে সাগরদিঘি থেকে। এলাকার বহু বাড়িতে এই সব মূল্যবান সামগ্রী রেখে দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা আইনজীবী তারক মুখোপাধ্যায় বলেন, “হাটপাড়া গ্রামে আমাদের জমিতেই রাজ্য প্রত্ন বিভাগ ২০০৮ সালে খনন শুরু করেন। আমরা চাই, এলাকার প্রাচীন ইতিহাস জনসমক্ষে আসুক। তার জন্যই প্রত্ন দফতরকে জমিটি খননের অনুমতিও দেওয়া হয়েছিল। মাস দুই খননের পর উদ্ধার হওয়া প্রত্ন সামগ্রী থেকে জানা যায় প্রায় ২০ হাজার বছর আগে উন্নততর সভ্যতা গড়ে উঠেছিল এই এলাকায়। কিন্তু তারপর ৬ বছর কেটে গেলেও পরবর্তীতে আর খননকাজ শুরু হয়নি। এটা খুবই দুঃখের।”

২০১১ সালের ১ এপ্রিল সাগরদিঘির গয়েসাবাদ থেকে একটি ইট ভাটার মাটি কাটার সময় প্রায় সাড়ে ৫ ফুট লম্বা ও দেড় ফুট উচ্চতার একটি কালো পাথরের চৌকাঠ খণ্ড উদ্ধার হয়। মাটির ৬ ফুট গভীরতা থেকে। সেই প্রস্তর খণ্ডের গায়ে প্রায় এক ইঞ্চি খোদাই করে গড়ে তোলা হয়েছে সুদৃশ্য গণেশ মূর্তি। সেই চৌকাঠ খণ্ডটি সাগরদিঘি থানার পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসে থানায়। সেটি বর্তমানে থানার চত্বরে রোদ বৃষ্টির মধ্যেই অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন জিয়াগঞ্জ প্রত্ন সংগ্রহশালার কিউরেটর মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “পুলিশের উচিত উদ্ধার হওয়া সমস্ত মূর্তি রাজ্য প্রত্ন দফতরের হাতে তুলে দেওয়া। কারণ এই সব মূর্তির গবেষণা থেকেই ইতিহাসের নানা তথ্য মেলার সম্ভাবনা রয়েছে।” সাগরদিঘির ওসি পিন্টু মুখোপাধ্যায় অবশ্য জানান, “২০১১ সালেই মূর্তি উদ্ধারের কথা জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছিল রাজ্য প্রত্ন দফতরকে। কিন্তু তাঁরা নিয়ে যাওয়ার কোনও ব্যবস্থা করেননি।”

sagardighi manigram archaeological statues old statues latest news
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy