Advertisement
০৩ মে ২০২৪

শিক্ষারত্নের টাকা স্কুল তহবিলে দিলেন শিক্ষক

সংসারে অভাব ছিল। স্কুলে যাওয়া-আসার পথের মাঝে অনেকটা দূরত্ব ছিল। কিন্তু তার পরেও দমিয়ে রাখা যায়নি ওই কিশোরকে। জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করেছেন হায়দার। আজ তিনি শিক্ষক পেশার সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কারেও সম্মানিত। 

 হায়দর আলি বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

হায়দর আলি বিশ্বাস। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর  শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৪৩
Share: Save:

বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে স্কুল। বন্ধুরা সাইকেলে চেপে পাশ দিয়ে চলে যেত বেল বাজাতে বাজাতে। কিশোর হায়দার আলি বিশ্বাস স্কুলে যেতেন পায়ে হেঁটেই। কৃষক পরিবারের সন্তান কিশোর হায়দারের যে সাইকেল কেনার ক্ষমতা নেই। আট ভাই-বোন। সংসার সামলে সমস্ত সন্তানের শিক্ষার ব্যবস্থাটুকু করেছিলেন বাবা আব্দুর রহমান বিশ্বাস। তবে তার পরে আর অর্থনৈতিক ক্ষমতা ছিল না বড় ছেলেকে সাইকেল কিনে দেওয়ার।

সংসারে অভাব ছিল। স্কুলে যাওয়া-আসার পথের মাঝে অনেকটা দূরত্ব ছিল। কিন্তু তার পরেও দমিয়ে রাখা যায়নি ওই কিশোরকে। জীবনের সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করেছেন হায়দার। আজ তিনি শিক্ষক পেশার সঙ্গে যুক্ত। একই সঙ্গে ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কারেও সম্মানিত।

তবে নিজের লড়াইয়ের সেই সব দিন ভুলতে পারেননি। তাই শিক্ষারত্ন পুরস্কার হিসাবে প্রাপ্ত ২৫ হাজার টাকার সঙ্গে আরও ৭৫ হাজার টাকা যোগ করে মোট এক লক্ষ টাকা তিনি তুলে দিয়েছেন স্কুল পরিচালন সমিতির হাতে। সেই টাকা খরচ করা হবে স্কুলের অভাবি-মেধাবি পড়ুয়াদের পড়াশোনার জন্য।

১৯৮৭ সালে ধুবুলিয়া দেশবন্ধু হাইস্কুলে সহশিক্ষক হিসাবে যোগ দেন নাকাশিপাড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম শুকপুকুরের বাসিন্দা হায়দার আলি বিশ্বাস। ২০০১ সালে ওই স্কুলেই সহকারি প্রধান শিক্ষক এবং ২০০৪ সালে প্রধান শিক্ষক হিসাবে যোগ দেন। শুধু স্কুলের পড়ুয়াদের সঙ্গেই নয়, স্কুলের ইট-কাঠ-পাথরের সঙ্গেও যেন তাঁর আত্মিক টান।

৫ সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবসে নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে হায়দার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত থেকে নিয়েছেন ‘শিক্ষারত্ন’ পুরস্কার। জানাচ্ছেন, সেই মুহূর্তেই তিনি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেলেন এই পুরস্কারের টাকা তিনি তুলে দেবেন তাঁর মতো অভাবি পড়ুয়াদের পড়াশোনার খরচের খাতিরে। সেই মাফিক স্কুল-ফান্ডে এক লক্ষ টাকা জমা করেলেন ওই ছাত্র-দরদি শিক্ষক।

কেন এই সিদ্ধান্ত? উত্তরে হায়দার আলি বিশ্বাস বলছেন, “অভাবকে আমি আমার জীবন দিয়ে উপলব্ধি করেছি। লড়াইটা যে কতটা কঠিন, সেটা আমি জানি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Man Donated Prize Hyder Ali Biswas Sikhsaratna
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE