E-Paper

শুশুক ও শাবক রক্ষাই দুশ্চিন্তার

নদিয়ার উত্তর কালীগঞ্জ ব্লক ভাগীরথী নদী দিয়ে ঘেরা। পশুপ্রেমী গণেশ চৌধুরী জানাচ্ছেন, কালীগঞ্জের পলাশি থেকে শান্তিপুর পর্যন্ত নদীতে প্রায় ৪৭টি শুশুক রয়েছে বর্তমানে।

সন্দীপ পাল

শেষ আপডেট: ২৭ মার্চ ২০২৫ ১০:০৭
শুশুক শাবক। কালীগঞ্জের নয়াচর।

শুশুক শাবক। কালীগঞ্জের নয়াচর। ছবি: সন্দীপ পাল।

এলাকায় ওরা পরিচিত শুশুক বা গাঙ্গেয় ডলফিন নামে। এই জীবের অস্তিত্ব রক্ষায় অতীতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে নদিয়া জেলা প্রশাসন। এলাকার মানুষকে এই বিষয়ে সচেতন করার পাশাপাশি শুশুক রক্ষায় প্রচার এবং বন দফতরের কর্মীদের নিয়মিত নজরদারিও চলেছে। এরই মাঝে ফের নতুন করে দুই শুশুক শাবকের খোঁজ মিলেছে নয়াচরের ভাগীরথী নদীতে। তার পরেই চিন্তায় পড়েছেন এলাকার পশুপ্রেমীরা। তাঁদের একাংশের অভিযোগ, বর্তমানে নদীর জলে ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ ধরার পরিমাণ বাড়ছে। এর ফলে ভাগীরথী নদীতে এক দিকে যেমন মাছের সঙ্কট বাড়ছে, তেমনই নির্বিচারে মরছে গাঙ্গেয় ডলফিনেরা। এলাকার জীববৈচিত্র রক্ষায় এবং গাঙ্গেয় ডলফিনদের বাঁচাতে পরিবেশ কর্মীরা অবিলম্বে প্রশাসনের পক্ষ কড়া পদক্ষেপ করার আবেদন জানাচ্ছেন। যদিও প্রশাসনের দাবি, মৎস্য দফতর থেকে শুরু করে সেচ, পরিবেশ ও পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে একাধিক বার বৈঠক করা হয়েছে।

নদিয়ার উত্তর কালীগঞ্জ ব্লক ভাগীরথী নদী দিয়ে ঘেরা। পশুপ্রেমী গণেশ চৌধুরী জানাচ্ছেন, কালীগঞ্জের পলাশি থেকে শান্তিপুর পর্যন্ত নদীতে প্রায় ৪৭টি শুশুক রয়েছে বর্তমানে। গত ২০২৩ সালে নদিয়া-বর্ধমান জুড়ে প্রায় ৯টি ও ২০২৪ সালে প্রায় ১২টি শুশুকের মৃত্যু হয়। জানা গিয়েছে, কালীগঞ্জ ব্লকের বসন্তপুর, চর বালিয়াডাঙা, ফুলবাগান-সহ নয়াচর এলাকায় মূলত শুশুক দেখা যায়। মূলত ভাগীরথী সঙ্গে ছোট নদীগুলি যে এলাকায় মিলিত হয়েছে, সেই অজয় ও বাবলা নদী এলাকায় শুশুকের বেশি দেখা মেলে। বর্ষার সময়ে ওই এলাকায় মাছ বেশি পাওয়া যায়। সেই কারণে আগে থেকেই শুশুকেরা ওই এলাকায় থাকতে শুরু করে এবং শাবক প্রসব করে বলে দাবি তাঁর। ইতিমধ্যে নয়াচর এলাকায় নতুন করে দু’টি শুশুক শাবক নজরেও এসেছে স্থানীয়দের।

জানা গিয়েছে, এলাকার বেশ কিছু অসাধু মৎস্যজীবী ব্যাটারি, বিদ্যুৎবাহী লম্বা রড ব্যবহার করে আধুনিক কায়দায় মাছ শিকার করছে। জলের ভিতরে বিদ্যুতের শক খেয়ে বড়, ছোট মাছ লাফিয়ে উঠলে বা ভেসে উঠলে জাল দিয়ে সেই সকল মাছ ধরা হচ্ছে। এর ফলে একসঙ্গে একাধিক মাছ শিকার করলেও বহু ছোট মাছের মৃত্যু হচ্ছে। আর এই ছোট মাছ শুশুকের প্রধান খাদ্য। এই খাদ্যের অভাব ঘটায় মৎস্যজীবীদের জালে মুখ ঢুকাচ্ছে শুশুকেরা। ফলে, কখনও জালে আটকে, আবার কখনও ঠোঁটে জাল আটকে গিয়ে, ঠোঁট পচে মৃত হচ্ছে শুশুকদের।

কালীগঞ্জের চর বালিয়াডাঙা দ্বীপ প্রাকৃতিক ভাবে গড়ে উঠেছে। জায়গাটি শুশুক-সহ অন্য বহু প্রাণীর বাসস্থান। সম্প্রতি চর বালিয়াডাঙা দ্বীপকে ‘ঐতিহ্যমণ্ডিত জীব বৈচিত্র পার্ক’ হিসাবে ঘোষণাও করা হয়েছে। নয়াচর এলাকার বাসিন্দা তথা পশুপ্রেমী গণেশ চৌধুরীর আক্ষেপ, “দেশের অন্য জায়গার মানুষ এই বিষয়ে জানতে চাইছেন। অথচ, এই এলাকার কিছু অসাধু মানুষ ইলেকট্রিক শক দিয়ে মাছ ধরে জীববৈচিত্রের ভারসাম্য নষ্ট করছে। এই যে নতুন শুশুক শাবক জন্ম নিয়েছে, তা খুবই আনন্দের। তবে এদের বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।”

কালীগঞ্জের বিডিও অঞ্জন চৌধুরী বলেন, “শুশুক আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। মৎস্যজীবী-সহ গঙ্গা নদীর তীরবর্তী বাসিন্দাদের সচেতন করা হয়েছে এবং হচ্ছে। ছোট মাছ যাতে মারা না যায়, নজর দেওয়া হচ্ছে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Ganges Dolphin Kaliganj

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy