E-Paper

উচ্চ মাধ্যমিকে ‘বাড়তি ফি’! বাড়ছে ক্ষোভ

সমস্ত বিদ্যালয় প্রধানদের মতে যে সব স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মেন বা সাব ভেনু হয় তাদের অনেক টাকা খরচ হয় এর জন্য।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 

শেষ আপডেট: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ০৮:২২
—প্রতীকী চিত্র।

—প্রতীকী চিত্র। Sourced by the ABP

উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীদের মাথা পিছু সেন্টার ফি বাবদ ৩০ টাকা ধার্য করেছেন উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ। কিন্তু নদিয়ার কিছু স্কুলে ওই ফি সংসদ নির্ধারিত টাকার থেকে ঢের বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল। গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিষয়টি নিয়ে নদিয়া জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক, জেলাশাসকের দফতরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বিজেপির শিক্ষা সেলের তরফে।

ওই সংগঠনের নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলার আহ্বায়ক অমিত চট্টোপাধ্যায় ওই অভিযোগ পত্রে জানিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের ধার্য করা সেন্টার ফি-এর তুলনায় অনেক বেশি টাকা নেওয়া হচ্ছে। ওই অভিযোগে নির্দিষ্ট ভাবে স্কুলের নামও উল্লেখ করা হয়েছে। অমিত চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে এ জিনিস বেশি ঘটছে। পড়ুয়াদের ওপর আর্থিক চাপ বাড়ছে। এমনিতেই গ্রামীণ মানুষ আর্থিক ভাবে বিপর্যস্ত, তার উপর এই ধরনের বেআইনি ভাবে টাকা নেওয়া ছাত্রস্বার্থের পরিপন্থী। আমরা চাই উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হোক।”

যদিও সেন্টার ফি নিয়ে অভিযোগ দীর্ঘদিনের। সমস্ত বিদ্যালয় প্রধানদের মতে যে সব স্কুলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার মেন বা সাব ভেনু হয় তাদের অনেক টাকা খরচ হয় এর জন্য। যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি খরচ গাড়ি ভাড়া বাবদ। প্রশ্নপত্র, উত্তরপত্র নিয়ে যাতায়াত। পরীক্ষার পরে সেই খাতাপত্র সিল করে পৌঁছে দেওয়া, পরীক্ষার সঙ্গে যুক্তদের চা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা-সহ নানা ধরনের খরচ হয় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিতে। অথচ পড়ুয়াদের কাছ থেকে নেওয়া মাথা পিছু ৩০ টাকাই এ ক্ষেত্রে আয়ের প্রধান উৎস। এ বছর যখন পরীক্ষার্থীর সংখ্যা অস্বাভাবিক কম তখন স্কুলগুলিকে পরীক্ষার খরচ যোগাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শিক্ষক সংগঠন গুলির অভিযোগ সেন্টার ফি বাড়ানোর জন্য বহুবার দরবার করেও কিছু লাভ হয়নি। বরং বিষয়টি ‘ম্যানেজ’ করে নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

উচ্চ মাধ্যমিকে কৃষ্ণনগরের প্রধান পরীক্ষা কেন্দ্র কৃষ্ণনগর হাই স্কুল। প্রধান শিক্ষক উৎপল ভট্টাচার্য বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে সেন্টার ফি বাড়েনি উচ্চ মাধ্যামিকে। অথচ পরীক্ষা সংক্রান্ত অন্যান্য যাবতীয় খরচ বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। পরীক্ষার আয়োজনের যাবতীয় খরচ খরচ জোগাড় করতে হয় পরীক্ষা কেন্দ্রগুলিকে। বলাবাহুল্য মাথা পিছু ৩০ টাকায় সে খরচ ওঠে না। আমরা নির্ধারিত ফি নিচ্ছি। এর জন্য গতবছরে কয়েক হাজার টাকা ঘাটতি পড়েছিল। আমাদের প্রশ্ন পরীক্ষা কেন্দ্রগুলি টাকা জোগাড় করবে কী ভাবে? সরকার কেন দায়িত্ব নেবে না?”

বাম শিক্ষক সংগঠন এবিটিএয়ের নদিয়া জেলা সম্পাদক সৌমেন পাল বলেন, ‘‘১৬০ টাকা নেওয়া যেমন ভীষণ অনুচিত, তেমনই সংসদেরও তো ভাবা দরকার এই মূল্যবৃদ্ধির বাজারে কি করে এতবড় একটা পরীক্ষার আয়োজন করবে কেন্দ্রগুলি ওই সামান্য অর্থে। আমরা চাই এই দায়িত্ব সরকার বহন করুক। যাতে পড়ুয়াদের ওপর কোন চাপ না পড়ে।”
পশ্চিমবঙ্গ প্রধানশিক্ষক সমিতির নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী বলেন “উচ্চ মাধ্যমিকের সেন্টার ফি বাবদ যে টাকা মাথা পিছু ধার্য করা আছে তার বেশি নেওয়াটা বাঞ্ছনীয় নয়। কাউন্সিল যা ধার্য করে সেটা নেওয়া উচিত বলে মনে করি।” পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক রমেন ঘোষ বলেন, “উচ্চ-মাধ্যমিকের মতো পরীক্ষা আয়োজন করতে কেন্দ্রগুলির যে খরচ হয় তার সবটা সেন্টার ফি থেকে পাওয়া যায় না। তাই বলে যদি কোথাও সেন্টার ফি বাবদ ১৬০ টাকা নেওয়া হয় সেটাও মেনে নেওয়া যায় না। প্রধান পরীক্ষাকেন্দ্রকে কিন্তু কিছু অর্থ দেওয়া হয় পরীক্ষা বাবদ। আমরা চেষ্টা করছি যাতে সেন্টার ফি বাড়ায় সংসদ।” নদিয়ার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক শুভ্রকান্তি নন্দ অবশ্য জানিয়েছেন তিনি এমন অভিযোগ এখনও জানেন না। বলেন, “অভিযোগ পেলে তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Higher Secondary Exam

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy