Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Russia Ukraine War

Russia-Ukraine War: সকালেই হাজির এক দল ‘যোদ্ধা’, রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে ‘ধোঁয়া’ দিচ্ছে পাড়ার চায়ের দোকান

গুটিগুটি একে একে দোকানে পা রাখেন ‘যোদ্ধা’রা। না, তাঁরা কেউ রাশিয়া বা ইউক্রেনের বাসিন্দা নন। তাঁরা ঝালে-ঝোলে-অম্বলে নেয়াপাতি ভুঁড়িসুদ্ধ নিখাদ বঙ্গবাসী।

চায়ের দোকানে জমজমাট ‘যুদ্ধ’।

চায়ের দোকানে জমজমাট ‘যুদ্ধ’। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ

প্রণয় ঘোষ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৬ মার্চ ২০২২ ১৮:১৮
Share: Save:

কাকভোরের ধোঁয়া ওঠা উনুন। পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া প্রাতর্ভ্রমণকারীদের দল। এ হেন সাতসকালেই মোবাইলে ঢুকছে একের পর এক নোটিফিকেশন— টুং-টাং, পিং-পং। এবং খবরের কাগজওয়ালার সৌজন্যে সেই চেনা শব্দ— থপাস! জেলা, রাজ্য, দেশ, বিদেশের সব খবর একসঙ্গে ‘ল্যান্ড’ করল চায়ের দোকানে। আর কিছু ক্ষণ পরেই অবশ্য সেই দোকান লড়াইয়ের রিংয়ে পরিণত হবে।

এর পর গুটিগুটি একে একে দোকানে পা রাখেন ‘যোদ্ধা’রা। না, তাঁরা কেউ রাশিয়া বা ইউক্রেনের বাসিন্দা নন। তাঁরা ঝালে-ঝোলে-অম্বলে নেয়াপাতি ভুঁড়িসুদ্ধ নিখাদ বঙ্গবাসী। কিন্তু হাবেভাবে, চালচলনে পুরোদস্তুর ‘যুদ্ধং দেহি’ মেজাজ তাঁদের।

—‘‘কী হে, যুদ্ধ কেমন জমল?’’
—‘‘শুধু যুদ্ধ? কেন, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ হবে না?’’
—‘‘হবে... হবে...। দ্যাখ, আজকের কাগজে কী লিখছে...’’
এই বলে কাগজটা টেনে নিয়ে শুরু হয়ে যায় যুদ্ধ চর্চা। এর মাঝেই এক জন ফুট কাটেন, ‘‘ধুস কাগজ! অলনাইন বা ইউটিউব দ্যাখ...ওগুলোই লেটেস্ট আপডেট দেয়...’’

এর পর একে একে দোকানের বেঞ্চ দখল হয়ে যায়। উড়ে যায় ভাঁড়ের পর ভাঁড় চা। যুক্তির উপরে ছড়ি ঘোরায় পাল্টা যুক্তি। তর্কের দাপটে চলকে পড়ে চা। গরম চায়ের কাপে নিজেকে ধরে রাখতে পারে না পলকা বিস্কুট। মনে হয়, এই বুঝি হাতাহাতি শুরু হয়ে যাবে। কিন্তু অভিজ্ঞ চা বিক্রেতা মুচকি হাসেন ‘বিধাতা’র মতোই। তিনি জানেন, এ সব কিস্যু হবে না। বরং এই যুদ্ধের মোক্ষম সময়ে তিনি খেই ধরিয়ে দেন, ‘‘দাদাবাবুদের আর এক কাপ করে চা দিই তা হলে?’’ যেন অভিজ্ঞ অস্ত্র ব্যবসায়ী, যুদ্ধের সময়ে সময়ে গোলাবারুদ প্রয়োজন কি না জেনে নিচ্ছেন।

যুদ্ধ হোক বা খরা, করোনা হোক বা মড়ক, এ বঙ্গে রঙ্গের অভাব নেই। আর জাকারবার্গের যৌথখামারে সে রঙ্গে ‘লাইক’, ‘কমেন্ট’ আর ‘ওয়াও’-এর অভাবও হয় না। অতএব, সেই রঙ্গ সমানে চলছে। এ দিকে, চায়ের দোকানের পাশের বাড়ির ছেলেটি দুলে দুলে পড়ছে—
‘‘ছেলেরা দুই সারি পুতুল সাজিয়ে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলছে।
রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “কার সঙ্গে কার যুদ্ধ?”
তারা বললে, “কর্ণাটের সঙ্গে কাঞ্চীর।”
রাজা জিজ্ঞাসা করলেন, “কার জিত, কার হার?”
ছেলেরা বুক ফুলিয়ে বললে, “কর্ণাটের জিত, কাঞ্চীর হার।”
মন্ত্রীর মুখ গম্ভীর হল, রাজার চক্ষু রক্তবর্ণ, বিদূষক হা হা করে হেসে উঠল।’’

মুখুজ্জেদা মুখ খুললেন, ‘‘তা হলে কী বুঝছো হে, ইউক্রেনের অবস্থা তো সঙ্গিন!’’
বিশ্বাসদা বললেন, ‘‘সঙ্গিন আবার কিসের! এ ভাবেই তো চলছে। দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার!’’
এরই মধ্যে মণ্ডলদা আবার একাই হি হি করে হাসছেন। আর মোবাইলের স্ক্রিনের তাকিয়ে বলছেন, ‘‘মার... মার...।’’
‘‘আরে হলটা কী?’’

মণ্ডলদা ফের ভিডিয়োটা প্রথম থেকে চালালেন। সেখানে দেখা যাচ্ছে, তিন জন দাঁড়িয়ে। এক জনের মাথার উপরে লেখা ‘ইউএসএ’। তাঁর বাঁদিকে দাঁড়িয়ে, ‘ইউক্রেন’ এবং ডানদিকে ‘রাশিয়া’। আচমকা ‘ইউএসএ’ ‘ইউক্রেন’কে সপাটে চড় কষায় লুকিয়ে। যাতে ‘ইউক্রেন’ মনে করে চড়টি ‘রাশিয়া’ই মেরেছে। এর পর আরও এক বার চড়। তার পর ‘ইউক্রেন’ ‘রাশিয়া’কে মেজাজ দেখায়, প্রতিবাদ করে। ‘রাশিয়া’ আবার এমন বেঘোরে ‘অপমান’ বরদাস্ত করে না। সে ‘ইউক্রেন’কে ‘সবক’ শেখায়। এর পর দূর থেকে ‘শাড়ি’ পরা নেটোকে ছুটে আসতে দেখা যায়। তত ক্ষণে ‘রাশিয়া’ ‘ইউক্রেন’কে বেধড়ক মারধর শুরু করেছে। মিমশিল্পের সৌজন্যে চায়ের দোকানের গমগমে পরিবেশ বদলে যায় সমস্বরের হাসিতে।

প্রায় প্রতি দিনই কেউ না কেউ ইউক্রেন থেকে বহু কষ্টে বাড়ি ফিরে আসছেন। কেউ হেঁটেছেন মাইলের পর মাইল। কেউ জীবন বাজি রেখে পা বাড়িয়েছেন ঘরের পথে। ঘরে পৌঁছনর পরে তাঁদের চোখেমুখে আতঙ্কও কাটেনি। কিন্তু চায়ের দোকানে এ সব কী হচ্ছে?

মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের বিভাগীয় প্রধান রঞ্জন ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘সাধারণ মানুষ ভাল নেই। তাঁরা এমনিতেই দৈনন্দিন নানা সমস্যায় জর্জরিত। এমন আবহে ইউক্রেন আর রাশিয়ার যুদ্ধ এখন ‘টক অব দ্য টাউন’ হয়ে গিয়েছে। চায়ের দোকানেও তার ছাপ পড়ছে। তবে এটা মাথায় রাখতে হবে, যুদ্ধ যুদ্ধই। তাতে ক্ষতিই হয়।’’

কিন্তু সে কথা শুনছে কে! অতএব, চায়ের কাপে যুদ্ধ নিয়েই তুফান উঠেছে। চায়ে চুমুক দিয়ে রসিক রুশপক্ষের সহাস্য বিবৃতি, ‘‘নামে ক্রেন থাকলেও যুদ্ধ বেশি দিন টানতে পারবে না ইউক্রেন।’’ আবার ইউক্রেনের পক্ষ নিয়ে কারও ঢাল, ‘‘রাশিয়া সম্প্রসারণবাদী।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Russia Ukraine War Tea shop tea stall Argument
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE