Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গরমে হাসফাঁস শহর, আগুন ষষ্ঠীর বাজার

পারদ চড়েছে চল্লিশের ঘরে। গরমে হাঁসফাঁস করছে গোটা শহর। সকাল ন’টা বাজতে না বাজতেই পথঘাট সুনসান। দোকান-বাজারের চেহারা দেখলে ধর্মঘট বলে ভ্রম হতে পারে। শেষ বৃষ্টি হয়েছিল গত শনিবার। তারপর থেকে তাপমাত্রা ক্রমে বেড়েই চলেছে। এমন দাবদাহে পর্যটন থেকে ব্যবসা সবই প্রায় লাটে ওঠার জোগাড়। গরমের ছুটি পড়তে বাইরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু সূর্যদেবের এমন ‘কৃপা’ দেখে তাঁদের কেউ কেউ সে পরিকল্পনা বাতিল করেছেন।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় ও সুদীপ ভট্টাচার্য
নবদ্বীপ ও কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০০:১৭
Share: Save:

পারদ চড়েছে চল্লিশের ঘরে। গরমে হাঁসফাঁস করছে গোটা শহর। সকাল ন’টা বাজতে না বাজতেই পথঘাট সুনসান। দোকান-বাজারের চেহারা দেখলে ধর্মঘট বলে ভ্রম হতে পারে। শেষ বৃষ্টি হয়েছিল গত শনিবার। তারপর থেকে তাপমাত্রা ক্রমে বেড়েই চলেছে।

এমন দাবদাহে পর্যটন থেকে ব্যবসা সবই প্রায় লাটে ওঠার জোগাড়। গরমের ছুটি পড়তে বাইরে বেড়ানোর পরিকল্পনা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু সূর্যদেবের এমন ‘কৃপা’ দেখে তাঁদের কেউ কেউ সে পরিকল্পনা বাতিল করেছেন। ওই একই কারণে জামাইষষ্ঠীর বাজারটাও মাঠে মারা গেল বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীদের একাংশ। তাঁরা জানাচ্ছেন, বেলা ১১টা বাজতে না বাজতেই অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। সন্ধ্যার আগে দোকান খুলতে ভরসা পাচ্ছেন না কেউ। নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাস বলেন, ‘‘জামাইষষ্ঠীর বাজার খুব খারাপ গেল। বৃষ্টি না নামলে এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে বলে মনে হয় না।’’

বাজার খারাপ গেলেও বাজারদর কিন্তু বেশ চড়া। আম ছাড়া সব কিছুই এখন মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে। ১৫ থেকে ২০ টাকার মধ্যে খুব ভাল জাতের আম মিললেও লিচু থেকে কলা, আপেল থেকে ন্যাসপাতি সবের দাম আকাশছোঁয়া। ১২০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে আপেল-ন্যাসপাতির দর। ভাল কলার ডজন কমপক্ষে ৪০ টাকা। আর কড়কড়ে ৭০ টাকা গুনলে তবেই মিলছে লিচুর ছড়া। তালশাঁসও ১০ টাকায় ৩টি। তুলনায় সব্জির বাজারে কিছুটা স্বস্তি। চন্দ্রমুখী আলু বিকোচ্ছে ১২-১৩ টাকা কেজি দরে। জ্যোতি ৭-৮ টাকা। পটল, ঝিঙে, ঢ্যাড়সের দাম ৮ থেকে ১০ টাকা। বেগুন ২০-৩০ টাকা। অসময়ে দেখা মিলছে ফুলকপিরও। দাম ১৫ থেকে ২৫ টাকা।

কৃষ্ণনগর গোয়ারি বাজারের ফলের পাইকার জয়ন্ত অধিকারী জানান, ষষ্ঠীর বাজার তেমন জমল না। যে আম গত কয়েকদিন আগেও কেজি প্রতি ১৮ থেকে ২০ টাকা পাইকারি বাজারে বিক্রি হয়েছে, এখন তার দাম নেমে এসেছে ১২ থেকে ১৪ টাকায়। ষষ্ঠীর বাজারে আম অনেক বেশি এসেছে। কিন্তু খুচরো বিক্রেতারা এই গরমে রাস্তায় বসে বিক্রি করতে পারছেন না। সেই কারণেই আমের দাম পড়ে গিয়েছে।

জামাইদের মাছ খাওয়াতে গিয়ে নাজেহাল শ্বশুরকুল। ৭০০-৮০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ শনিবার নবদ্বীপ বাজারে বিক্রি হয়েছে ১২০০ থেকে ১৩০০ টাকা কেজি দরে। কৃষ্ণনগরে এ দিন ইলিশের দাম ছিল ৯০০ থেকে এক হাজার টাকা। চিতলের দরও প্রায় একই রকম। ৯০০-১০০০ টাকা থেকে শুরু চিংড়ি আর ভেটকির দাম। খাসির মাংস ৪৫০ টাকা। মুরগি ১৬০ টাকা কেজি। নবদ্বীপের লাল দই ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা। সাদা দই ১২০। তবে এই গরমে সবচেয়ে কদর বেড়েছে আইসক্রিম ও ঠান্ডা পানীয়ের। ৫-৫০ টাকা নানা দামে বিকোচ্ছে হরেক রকমের আইসক্রিম।

অতিরিক্ত গরমে পর্যটনের শহর নবদ্বীপ কার্যত পর্যটক শূন্য। মঠ, মন্দির, অতিথিশালা সব ফাঁকা। নবদ্বীপ জলপথ পরিবহণ সমবায় সমিতির সম্পাদক অলোক মণ্ডল বলেন, ‘‘গরমে যাত্রীসংখ্যা অর্ধেরও বেশি কমে গিয়েছে। সকাল ৮টা পর্যন্ত কিছু লোকজন পারাপার হন। তারপরে আর কারও দেখা নেই। নৌকা চালানোর খরচটুকুও উঠছে না।’’একই সুর নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতির কর্তাদের গলাও। সমিতির তরফে অসীম দত্ত বলেন, ‘‘১০টার পর অধিকাংশ রুটে যাত্রীসংখ্যা এত কমে যাচ্ছে যে কোথাও কোথাও বাধ্য হয়ে ট্রিপ বন্ধ রাখতে হচ্ছে।’’ মায়াপুর ইসকন মন্দিরের জনসংযোগ আধিকারিক রসিক গৌরাঙ্গ দাস বলেন, ‘‘গরমের কারণে পর্যটকের সংখ্যা কমেছে। তাপপ্রবাহ না কমা পর্যন্ত এমনই চলবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE