কেন্দ্র সরকারের ওয়াকফ বিল সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের পর থেকেই জেলার একাধিক জায়গা থেকে অশান্তির বাতাবরণ তৈরি হয়। বেশ কিছু দিন অতিক্রম
করলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে, এ কথা মানতে নারাজ শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ান-সহ জেলার একটা অংশের বাসিন্দারা। জেলার শতাব্দী প্রাচীন শহর জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ শহরের মানুষেরা চান জেলায় দ্রুত শান্তি ফিরুক।
জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জ পুর এলাকায় ১৭টি ওয়ার্ডের মধ্যে হিন্দু, শিখ, খ্রিস্টান, বৌদ্ধ, মুসলিম-সহ একাধিক ধর্মের মানুষ নিরুপদ্রবে পাশাপাশি রয়েছেন কয়েকশো বছর ধরে। কিন্তু শমসেরগঞ্জ, ধুলিয়ানের ঘটনার পরে একটু হলেও উদ্বিগ্ন তাঁরা। জেলার একাংশের মধ্যে সেই আতঙ্ক রয়েছে, বলে জানাচ্ছেন শহরের বাসিন্দারা।
জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা তথা অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সমীর ঘোষ বলেন, “শৈশব থেকে প্রৌঢ় হলাম এই শহরে। আমাদের শহরে হিন্দু-মুসলিমের মধ্যে জাতপাতের কোনওরকম বিভাজন আজ পযর্ন্ত আমর চোখে পড়েনি। আজ পর্যন্ত আমরা ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে অটুট রয়েছি এবং আগামীতেও থাকব।”
এই শহরের বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বিভিন্ন পুজো পার্বণে একত্রিত হয়। স্বভাবতই
এ দৃশ্য গোটা রাজ্য তথা জেলার কাছে সম্প্রীতির একটা বড় দৃষ্টান্ত। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্মী তথা জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা আকবর আলি বলেন, “মণ্ডপে দুর্গা প্রতিমা নিয়ে আসা থেকে প্রতিমা নিরঞ্জন পর্যন্ত, এখনও বছরের ওই ক’টা দিন মণ্ডপেই কেটে যায়। একই সঙ্গে হিন্দু দাদা-ভাইদের সঙ্গে ইদের শুভেচ্ছে বিনিময়, যেন আমাদের মধ্যে চিরাচরিত প্রথা। দু’টো সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হলে, আমাদের আগামী প্রজন্মের কাছে কী বার্তা পৌঁছবে, এট ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।”
জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা চন্দন রাও বলেন, “দুষ্কৃতী দমনে ও সাম্প্রদায়িক প্ররোচনা রুখতে সরকারকে আরও দৃঢ় পদক্ষেপ করতে হবে। অঙ্কুরে বিনাশ না হলে এর চেহারা আরও ভয়াবহ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।” জিয়াগঞ্জ-আজিমগঞ্জের পুরপ্রধান প্রসেনজিৎ ঘোষ বলেন, “যে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুর-প্রশাসন সব সময় তৎপর রয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ প্রশাসনের ঘটনার ওপর সতর্ক দৃষ্টি রেখে চলেছে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)