শীতকাল মানেই কব্জি ডুবিয়ে খাওয়া-দাওয়া। নলেন গুড়, কেক, কমলালেবুর পাশাপাশি গরম গরম ফুলকপির পকোড়ায় মন ডুবে যায় খাদ্যরসিকদের। বিয়েবাড়ি থেকে পিকনিকের আসর—সর্বত্র খাদ্যতালিকায় অবশ্য-পদ ফুলকপি। লুচির সঙ্গে গরম ধোঁয়া ওঠা আলু-ফুলকপির তরকারি, ফুলকপির সিঙারা, পকোড়া দেদার খাওয়া চলে এই সময়। খাদ্যরসিক বাঙালির অতি প্রিয় শীতের এই আনাজ। তবে সম্প্রতি ফুলকপির দাম এতটাই নেমে গিয়েছে যে অনুষ্ঠান বাড়ি তো বটেই, গৃহস্থ বাড়ির হেঁশেলেও তার আর ঠাঁই
হচ্ছে না।
ভোজের পাতে ‘ব্রাত্য’ হওয়ার জন্য ফুলকপির অতিরিক্ত উৎপাদনকেই দায়ী করছেন ক্রেতারা। শেষবেলার শীতেও ফুলকপি তার অতুলনীয় স্বাদ-গন্ধ ধরে রেখেছে। কিন্তু দাম নেই। বিক্রি হচ্ছে না। বিক্রেতার কাছে পড়ে থেকে থেকে এক সময় তা পচে যাচ্ছে। এক রসিক বিক্রেতা আক্ষেপ করে বলছিলেন, ‘‘নিজেকে সস্তা করে ফুলকপি কৌলীন্য হারিয়েছে।’’
কেটারিং ব্যবসায়ী এবং হোটেল মালিকদের একাংশের বক্তব্য, ‘‘অনুষ্ঠানের আয়োজকদের অনেকে মনে করছেন দু’ থেকে তিন টাকা দামের ফুলকপি খাদ্যতালিকায় দেখলে ক্ষুণ্ণ হতে পারেন অতিথি। তাই ফুলকপির পদ তাঁরা চাইছেন না।’’ বেলডাঙায় কেটারিং ব্যবসার কারবারি মনোজিৎ সাহা বলেন, “দিন দুয়েক আগে আমাদের একটি অনুষ্ঠানে খাওয়ানোর দায়িত্ব ছিল। গৃহকর্তার সঙ্গে আগে কথা হয়েছিল, খাদ্য তালিকায় আলু-ফুলকপির তরকারি রাখা হবে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তিনি সেই পদ বদলে এঁচোড়-চিংড়ির তরকারি অন্তর্ভুক্ত করালেন। ভাগ্যিস, আনাজ বাজার তখনও করা বাকি ছিল।’’ কেটারার সনাতন মণ্ডলের কথায়, “পরপর তিনটি অনুষ্ঠানে খাওয়ানোর দায়িত্বে ছিলাম। দু’টি বাড়িতে ফুলকপির পদ আগে থেকে ঠিক করা ছিল। শেষ মুহূর্তে তা বাদ দিতে হয়। তার বদলে কড়াইশুঁটি দিয়ে আলুর দম এবং নবরত্ন (কুচনো পনির দিয়ে পাঁচমিশেলি তরকারি) অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গৃহকর্তা তো রাখঢাক না করে বলেও দিলেন, সস্তার ফুলকপি খাওয়ালে তাঁর মান থাকবে না।’’ বহরমপুরে পাইস হোটেলের মালিক রাখহরি সামন্ত বলেন, “আমরা এই সময় আলু-ফুলকপির তরকারি খাদ্যতালিকায় রাখি। কিন্তু অনেক ক্রেতা সেই পদ চাইছেন না। তাই ফুলকপি বাদ।’’
সরস্বতী পুজোর পরে বিভিন্ন স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের খাওয়ানো হয়েছে। সেখানেও বাদ ফুলকপি। বেলডাঙার একটি উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের খাদ্য তালিকায় ফুলকপির পদ রাখা নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে
মতানৈক্যও হয়েছিল।
ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহে রাজ্য থেকে বিদায়ের পথে শীত। তবে শীতের ফুলকপি থেকে খাদ্যরসিক মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন অনেক আগেই।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)