পাশে: জাহাঙ্গির, সাইদের পাশে বিডিও। নিজস্ব চিত্র।
করোনা আবহে দীর্ঘ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে স্কুল। নতুন ক্লাসে উঠলেও শুরু হয়নি পঠনপাঠন। কবে স্কুল খুলবে তারও নিশ্চয়তা নেই। ফলে 'দুয়ারে সরকার' শিবিরের চিনেবাদামের পসরা সাজিয়ে বসেছে জাহাঙ্গীর সেখ, সাঈদ সেখ, বাসিদুল সেখরা। তারা কেউ সিক্স, কেউ সেভেন, কেউ আবার ক্লাস টেনের পড়ুয়া। ব্লকের বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় বিগত প্রায় এক মাস ধরে বসছে 'দুয়ারে সরকার' কর্মসূচির শিবির। শিবিরে সহায়তা পাওয়ার জন্য লোক সমাগমও হচ্ছে বেশ ভালোই। ফলে বাদাম বিক্রি করে সংসারে কিছুটা হলেও অভাব পূরণ করছে এই খুদেরা।
মঙ্গলবারও হরিহরপাড়া হাজি একে খান কলেজে আয়োজিত 'দুয়ারে সরকার' কর্মসূচির শিবিরে বাদাম বিক্রি করতে দেখা গেল তাদের। জানা গিয়েছে হরিহরপাড়ার কেদারতলা গ্রামে বাড়ি জাহাঙ্গিরের। সে নিশ্চিন্তপুর হাইস্কুলের ক্লাস টেনের ছাত্র। তার বাবা সাফিউল ইসলাম স্থানীয় একটি বেসরকারি ইসলামি মাদ্রাসার মৌলানা। করোনা আবহে বন্ধ রয়েছে মাদ্রাসা। ফলে রোজগার কমেছে তাঁরও। সংসারে কিছুটা বাড়তি আয় জোগাতে মাস খানেক ধরে বাদাম বিক্রি করতে শুরু করেছে জাহাঙ্গির।
একই গ্রামের বাসিন্দা বছর তেরোর সাঈদ সেখ ও বাসিদুল সেখ স্থানীয় মিঞারবাগান জুনিয়র হাইস্কুলের ক্লাস সিক্সের পড়ুয়া। জানা গিয়েছে সাঈদের বাবা সরিফুল সেখ গ্রামে মরসুমি ফসল কেনাবেচা করেন, বাসিদুলের বাবা মুর্ত্তুজ সেখ হাটে হাটে কাপড়ের ব্যবসা করেন। করোনা আবহে লকডাউনের সময় থেকেই তাদের ব্যবসায় মন্দা৷ ফলে এই দুই পড়শি কিশোরও বেছে নিয়েছে বাদাম বিক্রির পথ।
প্রতিদিন গড়ে ১৫-২০ কেজি বাদাম বিক্রি করে ১৫০-২০০ টাকা আয় হচ্ছে বলেও জানায় জাহাঙ্গির, সাঈদরা। ফলে মাস খানেক ধরে পরিবারে কিছুটা হলেও তাদের আয়ে স্বস্তি ফিরেছে। তবে অনেকেই মনে করছেন এরকম চলতে থাকলে বা কিশোর বয়সেই রোজগার করতে শুরু করলে স্কুল ছুট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জাহাঙ্গির জানায়, "এখন স্কুল বন্ধ তাই বাদাম বিক্রি করছি। স্কুল খুললে ফের স্কুলে যাব।’’ একই কথা সাঈদ, বাসিদুলেরও।
বাসিদুলের বাবা মর্তুজা শেখ বলেন, "কয়েক মাস ধরে স্কুল বন্ধ। আমারও রোজগার কমেছে। ছেলে আয়ে নুন-তেলের পয়সাটা তো হচ্ছে। স্কুল খুললে আর বাদাম বিক্রি করতে দেবনা। স্কুলেই পাঠাব।" বিভিন্ন মেলা বা লোকসমাগম হলে বাদাম বিক্রি ভালো হয় দেখেই তারা বাদাম বিক্রি শুরু করে বলে জানা গিয়েছে।
মঙ্গলবার হরিহরপাড়ার শিবিরে গিয়ে বিষয়টি জানতে পেরে বাদাম বিক্রেতা পড়ুয়াদের সাথে কথা বলেন হরিহরপাড়ার বিডিও রাজা ভৌমিক। তাদের পড়াশোনা করার জন্য উৎসাহ দেন তিনি। তাছাড়া তাদের সমস্ত বাদাম কিনে নেওয়ার পর তাদেরই সেগুলো খাবার জন্য দিয়ে দেন বিডিও। বিডিও রাজা ভৌমিক বলেন, ‘‘ওই পড়ুয়ারা যাতে পড়াশোনা ছেড়ে না দেয় তার জন্য বলেছি। আমরা ওদের পরিবারের লোকেদের সাথেও যোগাযোগ করব। স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সাথেও কথা বলব। প্রয়োজনে পরিবারের পাশে দাঁড়াবে ব্লক প্রশাসন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy