নতুন করে জটিলতা বাড়ল রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়ায়। বুধবার সুপ্রিম কোর্ট ২০১৬ সালে নিয়োগ পাওয়া সমস্ত শিক্ষকের চাকরি বাতিলের পর ফের নতুন করে পরীক্ষা নেওয়াকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট জটিলতার জন্য স্কুল সার্ভিস কমিশনকেই দায়ী করেছে। এতে পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াই ফের বিশ বাঁও জলে চলে গেল বলে আশঙ্কা করছেন নদিয়ার চাকরিহারা শিক্ষক এবং নতুন চাকরিপ্রার্থী— এই দুই তরফই।
দীর্ঘদিন ধরে নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব, নদিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেনের ক্ষোভ, “আমরা ২০১৬ সালের অপেক্ষমান তালিকায় থাকা যোগ্য অথচ দুর্নীতির কারণে বঞ্চিত চাকরিপ্রার্থী।” তাঁর মতে, সুপ্রিম কোর্টের রায় অনুযায়ী স্কুল সার্ভিস কমিশনের উচিত ছিল ২০১৬ সালের জন্য আলাদা পরীক্ষা এবং নতুনদের জন্য আলাদা পরীক্ষা নেওয়া। তাঁর দাবি, “কিন্তু স্কুল সার্ভিস কমিশন ইচ্ছাকৃত ভাবে সমস্ত বিষয়টা ঘেঁটে দেওয়ার জন্য এই পরিকল্পনা করেছে।” মোয়াজ্জেমের আরও আপত্তি চাকরির প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় আগে থেকে কাউকে অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া নিয়েও। তাঁর দাবি, “যদি অভিজ্ঞতার নম্বর দিতেই হয়, তবে তা ইন্টারভিউয়ের পরে দেওয়া উচিত। লিখিত পরীক্ষার নম্বরের সঙ্গে অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর যোগ করা বাতিল হোক।”
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষা দিয়ে চাকরি পাওয়া সমস্ত শিক্ষকের চাকরি বাতিল হওয়ার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গত সেপ্টেম্বরে নতুন নিয়োগের পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে। অতিরিক্ত ১০ নম্বর দেওয়া, চিহ্নিত দাগি প্রার্থীদের পরীক্ষায় বসা প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ে একাধিক মামলা দায়ের হয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে ইচ্ছা করে জট পাকানো হয়েছে বলে মনে করছেন আরব গাজী। ২০১৬ সালের ইংরেজির পরীক্ষার্থী আরবের মতে, “যাতে আমাদের চাকরি দিতে না হয়, সেই জন্যই সরকার জেনে-বুঝে হিসাব করে এই ঘটনা ঘটিয়েছে।”
এই বছরের নতুন পরীক্ষার্থী মিনারুল হক বলছেন, “যোগ্য শিক্ষকদের চাকরি থাকুক, এটা আমরাও চাই। তা বলে আমরা যারা নতুন পরীক্ষার্থী তাদের আগে থেকেই ১০ নম্বর বঞ্চিত করার অর্থ কি? ইচ্ছা করে বিভেদ সৃষ্টি করা?” তাঁর ধারণা, “রাজ্য সরকার দাগিদের আড়াল করতে চাইছে বলেই পরিকল্পিত ভাবে এ সব জট পাকাচ্ছে।”
বাংলার শিক্ষক মহাফিজ আজিজ এখন দিন গুনছেন। স্কুলে নিয়োগে দুর্নীতির জেরে বাতিল তালিকায় পড়ে যাওয়া যোগ্য শিক্ষকদের অন্যতম তিনি। আদালতের নির্দেশ মতো আগামী ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত তাঁরা স্কুলে যেতে পারবেন। তার মধ্যে স্বচ্ছ ভাবে নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এসএসসি-কে। কিন্তু স্বচ্ছতার বদলে জল আরও ঘোলা হয়েছে। মহাফিজও মনে করছেন, সবটাই সরকারের ইচ্ছাকৃত। তাঁর কথায়, “যা অবস্থা দাঁড়াল, তাতে অলৌকিক কিছু না ঘটলে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সব সম্পূর্ণ হওয়া অসম্ভব। জানি না, আমাদের জন্য কী অপেক্ষা করছে।”
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)