দিন কয়েক আগের কথা। ছেলে ভোলানো ছড়ার চেনা পঙক্তি ‘ইলশে গুঁড়ির নাচন দেখে, নাচছে ইলিশ মাছ’ যেন সত্যি হয়ে উঠেছিল ডায়মন্ডহারবার থেকে দিঘার সমুদ্র তটে। মহার্ঘ ইলিশ আপন খুশিতে ধরা দিচ্ছিল জালে। যার নিট ফল, পাঁচশো বা সাতশো টাকা কেজির ইলিশ দেড়শো টাকায় নেমে ছিল। বহুকাল পরে প্রাণ ভরে ইলিশ খেয়েছিল কলকাতা থেকে কোচবিহার।
বিশেষজ্ঞদের ব্যাখ্যা ছিল, রাজ্যে বর্ষার লম্বা ইনিংস এ বার ইলিশের অনুকূল আবহাওয়া তৈরি করেছিল। নিয়মিত নিম্নচাপের জেরে দিনভর ঝিরঝিরে বৃষ্টি, মেঘ। সঙ্গে পুবালি বাতাসের ডাক। সে কারণে, ইলিশের এমন ঢল নেমেছিল এ বছর। ইলিশের সে মরসুম শেষ হয়েছে কবেই। কিন্তু ফের দিন কয়েক ধরে জালে ধরা পড়ছে ইলিশের ঝাঁক। মুর্শিদাবাদের ফরাক্কা সংলগ্ন বাজার এখন ইলিশময়। একই ভাবে নদিয়ার কাছারিপাড়ার মৎসজীবী কার্তিক মণ্ডল বা নিখিল মণ্ডলেরা জানান, এই সময়ে তাঁরাও ভাল ইলিশ পাচ্ছেন। গড় ওজন তিনশো থেকে চারশো গ্রাম। এক আধটা পাঁচশো গ্রামের ইলিশও পড়ছে জালে। তবে বাজার ঘুরলে দেখা মিলছে ছোট ইলিশেরও। ওজন মেরেকেট দেড়শো গ্রাম। যদিও এত ছোট ইলিশ ধরা বারণ। কিন্তু সে নিষেধ শুনছে কে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, এ সময় ডিম ফুটে বের হওয়া ছোট ইলিশ নোনা জলে ফিরে যায়। এক বছর নোনা জলে থেকে পরের বার যখন ফিরবে তখন তা হবে ধরার উপযুক্ত। কিন্তু এখনই তা ধরে ফেলায় আগামী দিনে ইলিশ উৎপাদনে মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা তাঁদের।
কান্দির জেমো এনএন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক তথা ইলিশ বিশেষজ্ঞ সূর্যেন্দু দে জানান, এখন ইলিশের নদী থেকে সমুদ্রে ফিরে যাওয়ার সময়। তাঁর কথায়, গ্রীষ্মের শেষে ইলিশ সমুদ্রের নোনা জল ছেড়ে নদীর মিঠে জলে আসে ডিম পাড়তে। শ্রাবণে পাড়া সেই ডিম ফুটে ছানা ইলিশ একটু বড় করে এই সময় ইলিশের ঝাঁক ফের সমুদ্রে ফিরে যায়। ফিরে যাওয়ার সময় ঠান্ডার জন্য জলের বেশ কিছুটা নীচ দিয়ে যায় ইলিশের ঝাঁক। এ বার অনুকূল আবহাওয়ায় জলের উপর দিয়েই তারা যাচ্ছে এবং জালে ধরা পড়ছে। যে কারণে এ বার অসময়ে বাজারে ইলিশের এই বাড়বাড়ন্ত। ধরা পড়ছে ছোট ইলিশও।
সূর্যেন্দুবাবুর কথায়, “এই কারণে একটা সময়ে আমাদের দেশে বিশেষ করে পূর্ববঙ্গে বিজয়া দশমী থেকে সরস্বতী পুজো পর্যন্ত ইলিশ খাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। কেন না এখন ইলিশ ধরা মানে ছোট ছোট মাছ ধরে ভবিষ্যতে ইলিশের ভাঁড়ার নিঃশেষ করার দিকে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া।”
নিষেধ আর কবে মেনেছে মানুষ।