Advertisement
E-Paper

‘এদের জ্বালায় দেখছি ইলিশ মাছই উধাও হয়ে যাবে!’

সকালে মাছের বাজারে ঢুকে মেজাজটাই খাপ্পা হয়ে গিয়েছিল বছর ষাটের মানুষটার। নিজের মনেই গজগজ করছিলেন, “এদের জ্বালায় দেখছি ইলিশ মাছই উধাও হয়ে যাবে। এ তো দেখছি একেবারে চুনো!” 

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৩ অগস্ট ২০১৮ ০১:৫৫
কৃষ্ণনগর পাত্রবাজারে। নিজস্ব চিত্র

কৃষ্ণনগর পাত্রবাজারে। নিজস্ব চিত্র

সকালে মাছের বাজারে ঢুকে মেজাজটাই খাপ্পা হয়ে গিয়েছিল বছর ষাটের মানুষটার। নিজের মনেই গজগজ করছিলেন, “এদের জ্বালায় দেখছি ইলিশ মাছই উধাও হয়ে যাবে। এ তো দেখছি একেবারে চুনো!”

রাগ হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। বেশ কয়েক দিন ধরেই বাজারে আসা ইলিশ ছোট হতে-হতে সপ্তাহান্তে নব্বই থেকে একশো গ্রামে নেমেছে। গত বছর বাজারে উপচে পড়েছিল ইলিশ। এক রকম জলের দরেই বিক্রি হয়েছিল একটা সময়ে। এ বারও দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে চলে এসেছে অনেকটাই। তার পরেও চুনো ইলিশ বাজারে ঢুকতে থাকায় অনেক ক্রেতা, এমনকি বিক্রেতাদেরও একটা অংশ যথেষ্টই বিরক্ত।

সরকারি নির্দেশ বলছে, পাঁচশো গ্রামের চেয়ে ছোট ইলিশ ধরা, বহন বা বিক্রি করা নিষিদ্ধ। কিন্তু শনি ও রবিবার নদিয়া জেলা জুড়ে ঢেলে বিক্রি হয়েছে একশো থেকে তিনশো গ্রামের ইলিশ। পাঁচশো থেকে ছ’শো গ্রামের ইলিশের দর যখন ছ’শো টাকার আশপাশে ঘুরছে, ছোটগুলোর দাম বড় জোর আড়াইশো থেকে তিনশো টাকা কেজি। ফলে এক শ্রেণির মানুষ বিমুখ হলেও অনেকেই চুনো ইলিশ থলিতে ভরেছেন।

কী ভাবে প্রশাসের নাকের ডগায় বিক্রি হচ্ছে চুনো ইলিশ?

পাত্রবাজারের এক ছোট ইলিশের বিক্রেতা উল্টে ঝাঁঝিয়ে ওঠেন, “বিক্রি না হওয়ার কী আছে! কিনতে দোষ নেই, খেতে দোষ নেই, শুধু বেচতেই দোষ?” কথাটা একেবারে উড়িয়ে দেওয়ার মতো নয়। কারণ অনেক শিক্ষিত লোককেই দেখা গেল ছোট ইলিশ কিনে নিয়ে যেতে। চুনো ইলিশ সাজিয়ে বসে থাকা দোকানি আবার ফুট কাটেন, “ধরা বন্ধ করলেই মিটে যায়। বিক্রির প্রশ্নই আর আসে না!”

কোথা থেকে আসছে ঝাঁকে-ঝাঁকে এত কুচো ইলিশ?

আরও পড়ুন: গিরিশ ঘোষ কার? লড়াই দুই কাউন্সিলরের

কৃষ্ণনগর শহরের অন্যতম প্রধান বাজার পাত্রবাজারের প্রতিষ্ঠিত মাছ ব্যবসায়ী নিতাই হালদারের দাবি, ‘‘দিঘা, হলদিয়া আর ডায়মন্ড হারবার থেকে জোগান আসছে। প্রশাসনকে কাঁচকলা দেখিয়ে কী করে এত ছোট মাছ ধরা হচ্ছে, বলতে পারব না।’’ বাজার সমিতি বাধা দিচ্ছে না কেন?

পাত্রবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক তারক হালদারের দাবি, “এখনই কাউকে জোর করা হচ্ছে না। কিন্তু যাদের বিক্রি করতে দেখছি, তাদের ডেকে বুঝিয়ে বলা হচ্ছে।” নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন দাসও কার্যত একই কথা বলছেন। রানাঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতা রঞ্জন দাসের দাবি, “শহরের বাইরের দু’এক জন এসে ছোট ইলিশ বিক্রি করছে। তাদের বারণ করে দেওয়া হয়েছে।”

বাস্তব হল, লাভের আশায় থাকা মাছ কারবারিদের সকলকে আটকানো সম্ভব নয়। কিন্তু থরে-থরে মাছ যখন বিক্রি হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবি ছয়লাপ হচ্ছে, প্রশাসনের কর্তারা কী করছিলেন? কে না জানে, বিক্রি বন্ধ করা গেলে ছোট মাছ ধরা আপনিই বন্ধ হবে। এক সময়ে কচ্ছপ ধরা বন্ধ করতে তো বাজারেই ধরপাকড় চলত। এ ক্ষেত্রে কী করছিল মৎস্য দফতর? জেলাশাসকই বা কী করছিলেন?

নদিয়া জেলা মৎস্য দফতরের আধিকারিক অমলেন্দু বর্মনের দাবি, “ইতিমধ্যে আমরা জেলার ১০টি ব্লকে প্রচার করেছি। এ বার পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে অভিযান চালাব।” জেলাশাসক সুমিত গুপ্তও বলছেন, “পুলিশ এবং মৎস্য দফতরের কর্তাদের নিয়ে বৈঠক করব, যাতে যৌথ ভাবে বাজারে অভিযান চালানো হয়।”

বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কর্তাদের ঘুম ভাঙতে বড্ড দেরি হয়, এই যা!

hilsa fish Fish
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy