Advertisement
০১ মে ২০২৪

লোকালে সামাল সামাল পকেট

ট্রেনের গতি নয়, কথা হচ্ছে পাকা ‘শিল্পীদের’ ক্ষিপ্রতা নিয়ে। প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকছে। যাত্রীরা নিজেদের মতো ‘পজিশন’ নিয়েছেন। এক হাতে ব্যাগ, অন্য হাতে খুদের মুঠো।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৮ ০৬:৪০
Share: Save:

লোকালেও যে এমন এক্সপ্রেস গতি হতে পারে, কে জানত!

ট্রেনের গতি নয়, কথা হচ্ছে পাকা ‘শিল্পীদের’ ক্ষিপ্রতা নিয়ে। প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢুকছে। যাত্রীরা নিজেদের মতো ‘পজিশন’ নিয়েছেন। এক হাতে ব্যাগ, অন্য হাতে খুদের মুঠো। তার আগে পকেটে হাত দিয়ে দেখে নেওয়া হয়ে গিয়েছে মোবাইল ও মানিব্যাগের অবস্থান ঠিক আছে কি না। ভোঁ দিয়ে লোকাল ঢুকল।

যাঁরা নামছেন, তাঁরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন আগের স্টেশন ছাড়ার পর। যাঁরা উঠবেন, তাঁদের পাখির চোখ আসন দখল। নিট ফল, ধাক্কাধাক্কি, রাগারাগি। শেষ পর্যন্ত কেউ সিট পেলেন, কেউ আশ্বাস, ‘দু’টোর পরেই নেমে যাব’। এই হুড়োহুড়ির মধ্যেই মিশে থাকে কিছু সহযাত্রী। তাদের কোনও তাড়া নেই। ঠিক সময়ে নিজের কাজটা সেরে ফেলে নিষ্ঠার সঙ্গে। শাঁসালো হলে প্ল্যাটফর্ম ছেড়ে লোকাল বেরনোর আগে টুপ করে নেমে পড়েন। আর ব্যাগ রুগ্ণ হলে ‘মাইলস টু গো’।

ইতিমধ্যে কামরায় শুরু হাহাকার। কেউ চিৎকার করছেন, ‘আমার মানি ব্যাগটা কোথায় গেল? এই তো একটু আগেও ছিল!’ সহযাত্রীরাও নিজেদের জিনিস ফের এক বার দেখে নিলেন। তার মধ্যে কোনার দিক থেকে কেউ ডুকরে উঠলেন, ‘আমার মোবাইলটা?’

গত কয়েক মাসে নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদে এমন কিছু পকেটমারির ঘটনায় উদ্বিগ্ন যাত্রী ও রেল কর্তৃপক্ষ। ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, ‘‘পলক ফেলার আগেই কাজ সেরে ভিড়ে মিশে যাচ্ছে ওরা। যতক্ষণে বুঝতে পারছি, অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে।’’

দিন কয়েক আগে কল্যাণী থেকে শান্তিপুর যাচ্ছিলেন এক শিক্ষিকা। নামার সময়ে দেখেন বাঙ্কে রাখা তাঁর আস্ত ব্যাগটাই হাওয়া। পরের দিন ওই একই ট্রেনে উঠেছিলেন শিক্ষিকা। কিছুক্ষণ পরে তিনি দেখেন, তাঁর সামনে দাঁড়ানো এক মহিলার কাঁধে তাঁরই খোয়া যাওয়া ব্যাগ! পরে তাকে রেল পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

রেল পুলিশের এক কর্তা জানান, আসলে মেয়েটি ভাবতে পারেনি, ওই শিক্ষিকা পরের দিন ওই একই ট্রেনে মহিলা কামরায় উঠবেন। সম্প্রতি রানাঘাট-লালগোলা প্যাসেঞ্জারে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালের নার্স রুবি কুণ্ডুর মোবাইল, ব্যাগ নিয়ে সারগাছি স্টেশনে পালানোর চেষ্টা করে এক যুবক। শেষরক্ষা হয়নি। রুবি তাকে ধরে ফেলেন। কিন্তু ওই ছিনতাইকারীর মারে গুরুতর জখম রুবি। পুলিশ ওই যুবককে গ্রেফতার করে।

শনিবার বিকেলে কৃষ্ণনগর থেকে বছর পাঁচেকের শিশুপুত্রকে নিয়ে ট্রেনে উঠেছিলেন দমদমের এক মহিলা। মহিলা কামরায় উঠেই তিনি দেখেন, বাঁ কাঁধের ব্যাগ থেকে পার্স উধাও। হইচই, জিআরপি-র কাছে অভিযোগ, সবই হয়েছে। কিন্তু ব্যাগ মেলেনি। ওই মহিলার অভিযোগ, ব্যাগে ছিল নগদ টাকা, এটিএম কার্ড। তিনি বলছেন, ‘‘ভাগ্যিস, খুচরো শ’খানেক টাকা, ট্রেনের টিকিট ও মোবাইলটা ছিল অন্য একটি ব্যাগে। নইলে বাড়ি ফেরা মুশকিল হয়ে যেত।’’

ট্রেনের টিকিটে লেখা ‘শুভ যাত্রা’ কি মুখ টিপে হাসল?

(চলবে)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE