Advertisement
E-Paper

শিক্ষক কম, পড়ুয়া বেশি

কলকাতার বেসরকারি স্কুলে এক ছাত্রীর মৃত্যুর পরে কতটা সতর্ক জেলার স্কুলগুলি? শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে কি পড়ুয়াদের মনের খবর রাখা সম্ভব হয়? খোঁজ নিল আনন্দবাজার কলকাতার বেসরকারি স্কুলে এক ছাত্রীর মৃত্যুর পরে কতটা সতর্ক জেলার স্কুলগুলি? শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে কি পড়ুয়াদের মনের খবর রাখা সম্ভব হয়? খোঁজ নিল আনন্দবাজার

সামসুদ্দিন বিশ্বাস

শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৯ ০৪:১৪
প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

জুনের তৃতীয় সপ্তাহে কলকাতার বেসরকারি একটি স্কুলে অস্বাভাবিক মৃত্যু হয় এক ছাত্রীর। শৌচাগার থেকে দশম শ্রেণির ওই ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হওয়ার পরে রাজ্য জুড়ে হইচই শুরু হয়। প্রশ্ন ওঠে স্কুলের ভূমিকা নিয়ে। মানসিক অবসাদে ভুগলেও কেন তা স্কুলের নজরে এল না সে প্রশ্নও যেমন অভিভাবকরা তুলেছেন, তেমনি স্কুলের নিরাপত্তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। মুর্শিদাবাদেও কয়েক হাজার সরকারি ও বেসরকারি স্কুল রয়েছে। কলকাতার বিদ্যালয়ের ওই ঘটনার পরে পড়ুয়াদের মন বোঝা ও নিরাপত্তার ব্যাপারে জেলার বিদ্যালয়গুলিও নিরাপদ কি না তা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ ও অভিভাবকেরা।

মুর্শিদাবাদে এমনও বিদ্যালয় আছে যেখানে পড়ুয়ার সংখ্যা আড়াই-তিন হাজার। তাদের প্রত্যেককে আলাদা ভাবে নজর দেওয়া বিদ্যালয়ের পক্ষে কতটা সম্ভব? বহরমপুরের সৈয়দাবাদ মণীন্দ্রচন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রায় দেড় হাজার পড়ুয়া রয়েছে। ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জসীমউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘‘সত্যি কথা বলতে প্রত্যেক পড়ুয়ার প্রতি আলাদা ভাবে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে স্কুল চত্বরে শিক্ষক-শিক্ষিকারা মিলে তাদের নজরে রাখার চেষ্টা করি।’’ জসীমউদ্দিন জানাচ্ছেন, পড়ুয়া বিদ্যালয়ে থাকে ছ’ঘণ্টা। আর বাড়িতে বাবা মায়ের সঙ্গে থাকে ১৮ ঘণ্টা। ফলে বাবা মায়েদেরও পড়ুয়াদের প্রতি নজর রাখতে হবে। কেউ অবসাদগ্রস্ত হলে বিদ্যালয়ে জানানো জরুরি।

ডোমকলের এক শিক্ষক জানাচ্ছেন, সরকারি বিদ্যালয়গুলিতে পরিকাঠামোর বড়ই অভাব। যে অনুপাতে ছাত্র-শিক্ষক থাকার কথা, তা বেশিরভাগ সরকার পোষিত বিদ্যালয়ে নেই। ফলে পড়াশোনা থেকে শুরু করে সব কিছুতেই সমস্যা হয়। লালগোলার এক শিক্ষক জানাচ্ছেন, ৪০ জন পড়ুয়া পিছু এক জন শিক্ষক থাকার কথা। কিন্তু জেলার বেশিরভাগ স্কুলে ৮০-১০০ জন পড়ুয়া পিছু এক জন শিক্ষক রয়েছেন। এক জন শিক্ষকের পক্ষে এত পড়ুয়াকে সামাল দেওয়া খুবই কঠিন।

ওই শিক্ষকের দাবি, আনুপাতিক হারে শিক্ষকের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে পড়াশোনার পাশাপাশি অন্য দিকে বাড়তি নজর দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় স্কুল কর্তৃপক্ষকে। তবে শুধু পরিকাঠামোর অভাবকে দায়ী করলে হবে না। ভাল পরিকাঠামো রয়েছে এমন বিদ্যালয়েও নজরদারির অভাব যেমন রয়েছে, তেমনি পরিকাঠামোর অভাব থাকা সত্ত্বেও বাড়তি নজর দেwওয়া হয় এমন বিদ্যালয়ের নজিরও রয়েছে।

কাদাইয়ের বাসিন্দা চিরঞ্জীব ঘোষের ছেলে শহরের একটি বেসরকারি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির পড়ুয়া। চিরঞ্জীব বলছেন, ‘‘এখন সন্তানেরা যেন বাবা মায়ের স্বপ্নপূরণের যন্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ভাবে ছেলেমেয়েকে যন্ত্রে পরিণত হতে দেওয়া ঠিক নয়। বাবা-মাকেও সচেতন হতে হবে। তবেই এ ধরনের ঘটনা এড়ানো সম্ভব।’’ তাঁর দাবি, বিদ্যালয়ে এক জন শিক্ষককে ৪০ জন পড়ুয়ার উপর নজর রাখতে হয়। সেখানে অভিভাবকেরা এক জন বা দু’জন সন্তানকে দেখেন। ফলে বিদ্যালয়ের তুলনায় বাবা-মায়ের দায়িত্ব অনেক বেশি।

বহরমপুরের এক অভিভাবিকা রহিমা বিবি বলছেন, ‘‘কলকাতার ঘটনা আমাদের নাড়িয়ে দিয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের ভরসায় আমরা নিশ্চিন্তে থাকি। আমরা আশাবাদী শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের প্রতি আরও নজর দেবেন।’’

বহরমপুরের বানজেটিয়ার একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ সন্তোষকুমার দাস বলছেন, ‘‘স্কুল চত্বরে সিসিটিভি লাগানো রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষিকারাও নজর রাখেন।’’ তাঁর দাবি, পড়ুয়াদের মনের অবস্থা জানতে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কাউন্সেলিং করেন। মাঝে মাঝে মনোবিদ নিয়ে এসেও কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়।

বহরমপুরের এক শিক্ষক বলছেন, ‘‘বেসরকারি স্কুলের মতো সরকারি স্কুলে সেই পরিকাঠামো নেই। দু’তিন হাজার পড়ুয়ার মধ্যে কে কখন শৌচাগারে যাচ্ছে, কে জল খেতে যাচ্ছে, তার নজর রাখা প্রায় অসম্ভব।

তা হলে স্কুল কর্তৃপক্ষের কিছুই করার নেই?

Murshidabad Education
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy