Advertisement
E-Paper

রক্ষিবিহীন এটিএম, উদ্বিগ্ন ডোমকল

শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রটি চললেও সেখান থেকে ঠান্ডা হাওয়া বেরোচ্ছে না। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র কাগজের টুকরো। গুমোট ছোট্ট ঘরটায় টাকা তুলতে গিয়ে দরদর করে ঘামছিলেন মনোজিৎ মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০১:০৫
গরম থেকে বাঁচতে। ডোমকলে বিশ্বজিৎ রাউতের তোলা ছবি।

গরম থেকে বাঁচতে। ডোমকলে বিশ্বজিৎ রাউতের তোলা ছবি।

চিত্র এক: শীততাপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রটি চললেও সেখান থেকে ঠান্ডা হাওয়া বেরোচ্ছে না। মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে অজস্র কাগজের টুকরো। গুমোট ছোট্ট ঘরটায় টাকা তুলতে গিয়ে দরদর করে ঘামছিলেন মনোজিৎ মণ্ডল। বেশ কয়েকবারের চেষ্টায় টাকা পাওয়ার পরে মনোজিৎবাবুর প্রতিক্রিয়া, ‘‘ঘাম না ঝরিয়ে এই এটিএম থেকে টাকা মেলে না!’’

চিত্র দুই: পাড়ার মধ্যে এটিএমের ঠান্ডা ঘরে ভিড় কচিকাঁচাদের। গরম থেকে মুক্তি পেতে ভরদুপুরে বাড়ি ছেড়ে তারা জড়ো হয়েছে সেখানে। টাকা তুলতে ভিতরে ঢুকতে গিয়ে থমকে দাঁড়িয়ে পড়েছিলেন বাবু শেখ। সঙ্গে সঙ্গে দরজাটা ফাঁক করে ভিতর থেকে কচিকাঁচারা বাবুকে আশ্বস্ত করেছিল, ‘‘ও কাকু ভিতরে চলে আসুন। আমরা উল্টো দিকে মুখ করে বসে থাকব। আপনার কোনও অসুবিধে হবে না।’’

ডোমকল এলাকার বেশ কয়েকটি এটিএম কাউন্টারে ঢুঁ মেরে উঠে এসেছে এমনই কিছু ছবি। বেশিরভাগ এটিএমেই কোনও রক্ষী নেই। নেই সিসিটিভির ব্যবস্থাও। এমন অবস্থায় এটিএমে টাকা তুলতে গিয়ে রীতিমতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে সীমান্তবর্তী ডোমকল। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, এটিএমের ভিতরের অবস্থার কথা ছেড়েই দিন। এসি চলে না, পাখার ব্যবস্থা নেই। ভিতরে পড়ে থাকে কাগজের টুকরো, নোংরা। পরিষ্কার করার কেউ নেই। কিন্তু সবথেকে বড় কথা কোনও নিরাপত্তারক্ষী নেই। যে কোনও সময় বড় অঘটন ঘটে যেতে পারে।

নিরাপত্তরক্ষী না থাকার ফলে ডোমকল মহকুমা এলাকার বেশ কয়েকটি এটিএম ভেঙে টাকা লুঠের চেষ্টা করেছিল দুষ্কৃতীরা। টাকা তুলতে গিয়েও প্রতারিত হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয়। ডোমকলের কুপিলা গ্রামের বাবর আলি বলেন, মাস কয়েক আগে তাঁর এক আত্মীয় ডোমকলের একটি এটিএম কাউন্টারে টাকা তুলতে গিয়েছিলেন। তাঁর কাছ থেকে কার্ড বদলে নিয়ে প্রায় ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেন এক মহিলা। বাবরের অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষী থাকলে কখনই এমনটা ঘটত না।

স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর ক্ষোভ, এখানকার এটিএমগুলিতে কোনও নিয়মও মানা হয় না। একসঙ্গে ভিতরে অনেক লোকজন ঢুকে পড়েন। বাইরে যাওয়ার কথা বললে উল্টে শুনতে হয়—‘আমরা কি এখানে চুরি করতে এসেছি।’ সম্প্রতি বেশ কয়েকটি এটিএম ভেঙে টাকা লুঠেরও চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন থেকে শুরু করে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ কারও টনক নড়েনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষগুলির সঙ্গে কথা বলে এটিএমে নিরাপত্তরক্ষীর ব্যবস্থা করা।

রক্ষীবিহীন এটিএমে যে কোনও সময় বড় বিপদ যে ঘটতে পারে সে কথা কবুল করছে প্রশাসনও। জেলা পুলিশের এক কর্তার কথায়, ‘‘দেশের বিভিন্ন জায়গায় এটিএমে হামলার ঘটনা ঘটেছে। জখমও হয়েছেন কয়েকজন। ডোমকলেও ওই একই ঘটনা ঘটতে পারে। নিরাপত্তারক্ষী রাখার বিষয়ে ডোমকলের বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথাও বলেছি। কিন্তু নিরাপত্তারক্ষী মোতায়েনের জন্য খরচের কথা শুনে ব্যাঙ্কগুলি পিছিয়ে যায়।’’ ওই পুলিশকর্তার কথা মেনে নিয়েই নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক ব্যাঙ্ক ম্যানেজার বলেন, ‘‘বিষয়টি আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও জানিয়েছি। কিন্তু অতিরিক্ত খরচের কারণেই এখনও পর্যন্ত সেখান থেকে কোনও সবুজ সঙ্কেত মেলেনি।’’

ডোমকলের মহকুমাশাসক পুষ্পেন্দু মিত্র বলেন, ‘‘ ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সঙ্গে এই বিষয়ে কথা বলে দ্রুত পদক্ষেপ করা হবে।’’

domkal atm money bank police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy