একে লকডাউন। কোথাও যাওয়ার নেই। সেই সঙ্গে নেই কাজও। হাতের পুঁজি ফুরিয়েছে অনেকের। পিছিয়ে পড়া জেলা মুর্শিদাবাদে তাই অনেক সংসারে এখন রোজকার ভাত-ডাল জোগাড় করাটাই শক্ত। কিন্তু তা বলে কি মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করে না?
সেই ইচ্ছেটিরই দাম দিলেন দৌলতাবাদের ছ’ঘড়ির ময়রারা। তাঁরা বানিয়েছেন দু’টাকার রসগোল্লা। স্বাদে ভাল। দামে কম। লকডাউনের মধ্যে জলের দরে সেই রসগোল্লার কথা লোকমুখে ছড়িয়ে পড়েছে। কোনও মতে দৌলতাবাদ থানার ছয়ঘরি পৌঁছে গেলেই কেল্লা ফতে। পকেটের দশটা টাকা থাকলেই পাঁচটা রসগোল্লা কিনে নেওয়া যায়। এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ বলছেন, ‘‘অন্য কোথাও মিষ্টি কিনতে গেলে ১০ টাকায় দুটো মিষ্টি হবে না। সেখানে ছ’ঘড়ি হলে পাঁচটা মিষ্টি মিলে যাবে ১০ টাকায়।’’ মাপ একটু ছোট হলেও স্বাদে গন্ধে কিন্তু অতুলনীয়। কম দামের এই মিষ্টি নিতে চলতি পথে অনেকেই দাঁড়িয়ে যান রাজ্য সড়কের পাশে এই ছোট্ট গঞ্জে। ডোমকলের বাসিন্দা এনামুল হক বলছেন, ‘‘বহরমপুর গেলে ফেরার পথে ওখান থেকে মিষ্টি নিয়ে ফিরি বাড়িতে। দাম কম স্বাদ ভাল। লকডাউনের বাজারে এর থেকে ভালো আর কিছু হয় না।’’
কিন্তু যে সময়ে দু’টাকায় এক প্যাকেট বিড়িও হয় না, সে সময় একটা আস্ত রসগোল্লা দেন কিভাবে? ছয়ঘরির মিষ্টি ব্যবসায়ী আব্দুর রশিদ বলছেন, ‘‘অন্যরা যখন একটু বেশি লাভ করেন, আমরা তখন বেশি বিক্রি করি। ৫০ থেকে ৬০ কেজি ছানার কাজ করি। তা ছাড়া আমার পাশাপাশি আরও পাঁচটা সংসার চলছে আমার এই মিষ্টির দোকানে কাজ করে। দিনের শেষে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা পকেটে ঢুকলেই হয়ে যায় আমাদের।’’ লকডাউনের মধ্যে দূরের গ্রাম থেকে সাইকেল, মোটরসাইকেল উজিয়ে দু’টাকার মিষ্টি কিনতে আসছেন অনেকে। কেউ আবার জরুরি কাজ সেরে বহরমপুর থেকে ফেরার সময় কিনে নিচ্ছেন কম দামের মিষ্টি। ডোমকলের এক ওযুধ ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘ওষুধ কিনতে মাঝে মাঝেই বহরমপুর যেতে হয় আমাদের, ফেরার পথে ওষুধের সঙ্গে এক দেড়শো টাকার রসগোল্লা কিনে ঘরে ফিরি। লকডাউনের বাজারে ১০০ টাকায় ৫০টা মিষ্টি পাওয়া কম কিসের।’’