Advertisement
০৪ মে ২০২৪
Murshidabad Murder

ফের অধীরের ‘হাত’ ধরতে চেয়েছিলেন বলেই কি খুন মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতা? নেপথ্য-কারণ নিয়ে ধন্দ

রবিবার ভরদুপুরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হন জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সত্যেন। সেই সময় দু’টি বাইকে করে তিন জন এসে তাঁকে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করেন।

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২৪ ২০:০২
Share: Save:

এক সময়ে অধীর চৌধুরীর ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত ছিলেন এলাকায়। রাজ্যে পালাবদলের পর শাসকদলে যোগ দিয়ে বহরমপুরের ‘বেতাজ বাদশা’! মুর্শিদাবাদের তৃণমূল নেতা সেই সত্যেন চৌধুরী খুনে সম্প্রতি বদলে যাওয়া রাজনৈতিক সমীকরণকেই দায়ী করছেন অনেকে। তবে তদন্তকারীদের একাংশের মত, সত্যেন খুনের নেপথ্যে ব্যবসায়িক শত্রুতাও থাকতে পারে। পুলিশ সূত্রে খবর, সব দিকই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) ওয়াসিম খান বলেন, ‘‘এলাকার সমস্ত সিসিটিভির ফুটেজ খতিয়ে দেখছে পুলিশ। আশা করছি খুব তাড়াতাড়ি দুষ্কৃতীদের চিহ্নিত করে ফেলা হবে।’’

রবিবার ভরদুপুরে দুষ্কৃতীদের গুলিতে ঝাঁঝরা হন জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক সত্যেন। বহরমপুরের ভাকুড়ি মোড়ে কয়েক জন অনুগামীকে নিয়ে একটি নির্মীয়মাণ বহুতলের কাছে বসেছিলেন তিনি। সেই সময় দু’টি বাইকে করে তিন জন এসে তাঁকে ঘিরে ধরেন। কিছু বুঝে ওঠার আগে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে সত্যেনকে গুলি করেন তাঁরা। স্থানীয়েরা সত্যেনকে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসক। সত্যেন খুনে রাজনৈতিক-যোগের তত্ত্ব উঠে এসেছে। ঘনিষ্ঠ মহলের দাবি, গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই শাসকদলের সঙ্গে সত্যেনের দূরত্ব বাড়ছিল। উল্টে নতুন করে যোগাযোগ তৈরি হয়েছিল অধীরের সঙ্গে। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে আবার তাঁর কংগ্রেসে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। সে সব নিয়ে দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে সত্যেন খুন হয়ে থাকতে পারেন বলে দাবি ঘনিষ্ঠদের।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বাম আমলে অধীরের ‘খাস লোক’ বলে পরিচিত ছিলেন সত্যেন। এক বার জোড়া খুনের খুনের মামলায় জেল খেটেছিলেন বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর। সেই মামলাতেও তাঁর নাম উঠে এসেছিল। ২০০৪ সাল নাগাদ সুতির মাঠ সেবা সমিতিতে বোমা উদ্ধারের ঘটনায় প্রধান অভিযুক্ত ছিলেন সত্যেন। পরে পুরভোটের সময় স্বর্ণময়ী এলাকায় একটি ওয়ার্ডের প্রার্থীপদ নিয়ে অধীরের সঙ্গে প্রথম বার দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন তিনি। ২০১১ সালে রাজ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার তৈরি হলে অধীরের হাত ছেড়ে সত্যেন তৃণমূলে যোগ দেন। শাসকদলে নাম লেখাতেই জেলা সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ জুটে যায় তাঁর। অধুনা ১২ নম্বর জাতীয় সড়ক ছেড়ে চালতিয়া ছুঁয়ে সুতির মাঠ হয়ে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ পর্যন্ত বহরমপুর পুরএলাকার ওই বিস্তৃত অঞ্চলে ‘প্রবল দাপট’ও ছিল সত্যেনের। কিন্তু এককালের অধীর-ঘনিষ্ঠ হওয়ার কারণে তৃণমূলের একটি গোষ্ঠী কখনওই তাঁকে মেনে নিতে পারেনি। ফলে সেই বিরুদ্ধ গোষ্ঠী সর্বদা সত্যেনের বিরুদ্ধে সক্রিয় ছিল বলেই দাবি ঘনিষ্ঠ মহলের।

দলীয় সূত্রে খবর, তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর সত্যেন বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন। একাধিক ক্লাবের নিয়ন্ত্রণ ছিল তাঁর হাতে। সেই সঙ্গে ছিল প্রোমোটারির ব্যবসা। ফ্ল্যাট কেনাবেচার কারবার ছিল সত্যেনের। দাবি, ভাকুরি থেকে স্বর্ণময়ী পর্যন্ত এলাকায় একাধিক নির্মীয়মাণ বহুতল রয়েছে তাঁর নামে। অনেকের অভিযোগ, সারগাছি থেকে বাইপাস হয়ে স্বর্ণময়ী পর্যন্ত এলাকায় কোনও বিল্ডার নতুন ফ্ল্যাট তৈরি করতে গেলেই নাকি সত্যেনকে ‘নজরানা’ দিতে হত! এ সব নিয়ে ক্ষোভ থেকে তৃণমূল নেতাকে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলেও মনে করা হচ্ছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ‘‘একাধিক বেনামী সম্পত্তি ও ব্যবসা ছিল সত্যেন চৌধুরীর। পুলিশ তদন্ত করে দেখুক, কারা তাঁকে খুন করেছে।’’ পাল্টা মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের সভাপতি অপূর্ব সরকার বলেন, ‘‘ভোটের আগে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি করতেই এই খুন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE