মৃত তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস।
খুন হওয়ার আগের মুহূর্তে পাড়ার ক্লাবের অনুষ্ঠান স্থলে বসে কৃষ্ণগঞ্জের তৎকালীন তৃণমূল বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস পাড়ার বউদি, কাকিমাদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। হঠাৎ একটা শব্দ শুনে সেখানে ছুটে যান ক্লাবের সভাপতি মিলন সাহা। গিয়ে দেখেন, সত্যজিৎ মাটিতে পড়ে আছেন। তাঁকে ধরে তোলেন এবং চিৎকার করে ওঠেন। তাঁর চিৎকারে অন্যরা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। মঙ্গলবার বিশেষ আদালতে সত্যজিৎ হত্যা মামলার সাক্ষ্য দিতে গিয়ে অভিযুক্তের আইনজীবী সুবীর দেবনাথের জেরার মুখে বিচারকের সামনে এই কথাই জানিয়েছেন মামলার অন্যতম প্রধান সাক্ষী মিলন সাহা। সত্যজিৎ-ঘনিষ্ঠ মিলনই এই ঘটনায় হাঁসখালি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছিলেন।
সত্যজিৎ বিশ্বাস খুনের মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে বিধাননগর ময়ূখভবনের বিশেষ আদালতে বিচারক মনোজজ্যোতি ভট্টাচার্যের এজলাসে। গত সপ্তাহে বৃহস্পতি এবং শুক্রবার পরপর দু’দিন সাক্ষ্যগ্রহণের পর মঙ্গলবার তৃতীয় দিন অভিযুক্তের আইনজীবীরা জেরা করেন মিলন সাহাকে। এ দিন দু দফায় ম্যারাথন জেরা করা হয়। প্রথম অর্ধে দুপুর ১২.২০ মিনিট থেকে ৩টে পর্যন্ত এবং বিরতির পর ৩.৩০ থেকে বিকেল প্রায় সোয়া পাঁচটা পর্যন্ত তাঁকে জেরা করেন অভিযুক্তের আইনজীবীরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, সরস্বতী পুজোর আগের রাতে নদিয়ার হাঁসখালিতে নিজের বাড়ির কাছেই পাড়ার ক্লাবের সরস্বতী পুজোর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে খুন হয়েছিলেন সত্যজিৎ বিশ্বাস। স্থানীয় মাজিদপুর দক্ষিণপাড়ার ফুলবাড়ি ফুটবল মাঠে ‘আমরা সবাই ক্লাবের’ সেই অনুষ্ঠানে মঞ্চের সামনের চেয়ারে বসেছিলেন সত্যজিৎ।
মিলন লিখিত অভিযোগে জানিয়েছিলেন, খুব কাছ থেকে সত্যজিতের মাথায় গুলি করে অভিজিৎ পুন্ডারী। বন্দুক হাতে দাঁড়িয়েছিল সুজিত মণ্ডল। রক্তাক্ত সত্যজিৎ চেয়ার থেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। ওই অবস্থায় তাঁকে দ্রুত শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করেন। ঘটনাটি ঘটেছিল আনুমানিক রাত ৮.১৫ মিনিট নাগাদ। সে দিন অনেক রাতে শক্তিনগর থেকে ফিরে হাঁসখালি থানায় চার জনের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন মিলন সাহা।
এ দিন সাক্ষ্যগ্রহণের শুরুতে আইনজীবী সুবীর দেবনাথ জানতে চান— ‘লোকসভা, বিধানসভা বা পঞ্চায়েত যে কোনও ভোটের আগে এক-একটি আসনের জন্য একাধিক নাম প্রস্তাবিত হয়। তার মধ্যে থেকে এক জনকে বেছে নেওয়া হয় প্রার্থী হিসাবে। আপনি কখনও ভোটে দাঁড়াননি। তবে আপনি পঞ্চায়েত ভোটে দাঁড়াতে চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু সত্যজিৎ বিশ্বাস আপনার নাম ‘রেকমেণ্ড’ করেননি।’ জবাবে মিলন জানান, তিনি কখনও ভোটে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেননি।
এর পর সুবীর দেবনাথ আদালতে একটি ভিডিও ক্লিপিংস জমা দেন। তাতে মিলন সাহার একটি বক্তব্য রয়েছে। সত্যজিৎ হত্যার ঠিক পড়ে দেওয়া ওই ভিডিও-বক্তব্যে মিলন জানিয়েছিলেন, খুনের ঠিক আগে সত্যজিৎ পাড়ার পরিচিত কাকিমা, বউদিদের সঙ্গে গল্প করছিলেন। সেই বক্তব্যের ‘ট্রান্সক্রিপ্টেড কপি’ আদালতে জমা দেওয়া হয়। আদালত সেটি তথ্য-প্রমাণ হিসাবে গ্রহণ করেছে। আইনজীবী এর পর জানতে চান, বিভিন্ন সময়ে সাক্ষী বলেছেন যে, তিনি দেখেছেন অভিযুক্তেরা দৌড়ে এসে সত্যজিৎকে গুলি করেছিল। আইনজীবী সুবীর দেবনাথের প্রশ্ন ছিল, ‘‘অভিযুক্তরা দৌড়ে আসছে দেখেও আপনি তাদের বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেননি, চেঁচামেচি করে লোক জড়ো করেননি বা সত্যজিৎকে সতর্ক করেননি।” মিলন মেনে নেন যে, তিনি সে সব কিছুই করেননি।
আরও প্রশ্ন করা হয়, “পুলিশ বা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে আপনি বলেছিলেন শক্তিনগর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই সত্যজিৎ মারা গিয়েছে।” মিলনের জবাব বলেন, “হ্যাঁ।” পরের প্রশ্ন ছিল, “ঘটনার দিন সত্যজিৎ যে তাঁর দেহরক্ষীকে ছুটি দিয়েছিলেন এটা আপনি জানতেন এবং আপনি এটা পুলিশকেও বলেছেন।” এ দিনের শেষ প্রশ্ন ছিল, “আপনাকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে গোপন জবানবন্দি দিতে কে নিয়ে গিয়েছিল?” সাক্ষী উত্তর দেন, “পি পি।” আগামি ৩১ অগস্ট এই মামলার পরবর্তী শুনানি হওয়ার কথা। সে দিন সাক্ষ্য দেবেন সত্যজিৎ বিশ্বাসের ভাই সুমিত বিশ্বাস।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy