Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
Nadia

ইমেজে সঞ্চিত পুঁথি ও দুষ্প্রাপ্য বইয়ের সম্ভার

নবদ্বীপের অন্যতম ‘হেরিটেজ ভবন’ বলে ঘোষিত নবদ্বীপ সাধারণ গ্রন্থাগার সারস্বত সমাজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ওই গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা হয়।

সংরক্ষণের কাজ। নিজস্ব চিত্র

সংরক্ষণের কাজ। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০২২ ০৮:৩৬
Share: Save:

১ লাখ ৪৭ হাজার ৩২৮টি ছবি!

প্রায় সাড়ে সাত মাস ধরে নবদ্বীপ সাধারণ গ্রন্থাগারের প্রাচীন পুঁথি এবং দুষ্প্রাপ্য বই, পত্রপত্রিকা ডিজিটালাইজ় করার কাজের প্রথম পর্ব শেষে ইমেজ (ছবি) আকারেই সংরক্ষিত হল ওই বিপুল পরিমাণ নথি। ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল থেকে শতাব্দী-প্রাচীন ওই গ্রন্থাগারে শুরু হয়েছিল কয়েকশো বছরের দুর্মূল্য পুঁথি এবং অন্যান্য দুষ্প্রাপ্য বই ও পত্রপত্রিকা ডিজিটাল মাধ্যমে সংরক্ষণের কাজ। কলকাতার দ্য সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেস-এর তত্ত্বাবধানে গ্রন্থাগার ভবনেই কাজ চলছিল। মঙ্গলবার সেই কাজের প্রথম পর্ব সমাপ্ত হল। দ্বিতীয় পর্বের কাজ হবে কলকাতায়।

নবদ্বীপের অন্যতম ‘হেরিটেজ ভবন’ বলে ঘোষিত নবদ্বীপ সাধারণ গ্রন্থাগার সারস্বত সমাজের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রতিষ্ঠান। ১৯০৭ খ্রিস্টাব্দে ওই গ্রন্থাগার প্রতিষ্ঠা হয়। প্রথমে নাম ছিল ‘নবদ্বীপ সপ্তম এডওয়ার্ড অ্যাংলো-সংস্কৃত লাইব্রেরী।’ ১৯১১ সালে সেটির সভাপতি হন আশুতোষ মুখোপাধ্যায়। খ্যাতনামা নৈয়ায়িক ব্রজনাথ বিদ্যারত্নের ভাই হরিদাস শিরোমণির টোলবাড়ি কিনে ১৯১৫ সালে ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। বর্তমানে গ্রন্থাগারের সংগ্রহে রয়েছে প্রায় ১৭ হাজার বই।

তবে সবচেয়ে এই সমৃদ্ধ গ্রন্থাগারের পুঁথি বিভাগ। এর মধ্যে পঞ্জীকৃত পুঁথির সংখ্যা প্রায় ন’শো। পঞ্জীকরণ না হওয়া অবস্থায় ছিল ১১৭৯ বান্ডিল পুঁথি। নবদ্বীপের সমাজ ও সংস্কৃতি গ্রন্থে লেখক প্রদ্যোতকুমার গোস্বামী লিখেছেন, “এখানে তালপাতার পুঁথি আছে ১৮টি, ভূর্জপত্রের পুঁথি আছে ৪টি, তুলোট কাগজে লেখা পুঁথি আছে ১৩৪৬টি।” দুষ্প্রাপ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে প্রায় ২০০টি সংস্কৃত, ২৬৭টি ইংরেজি এবং ৩৩৫টি বাংলা বই।

গ্রন্থাগার পরিচালন সমিতির সম্পাদক নিশীথকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এই বিশাল সম্পদ রক্ষা করার জন্য আমরা বহুকাল ধরেই সচেষ্ট ছিলাম। নদিয়া জেলা গ্রন্থাগার আধিকারিক প্রবোধ মাহাতোর চেষ্টায় পূর্ণাঙ্গ ডিজিটালাইজ়েশনের কাজ সম্পন্ন হল।” পরবর্তী কালে গ্রন্থাগার এবং ‘সেন্টার’-এর মধ্যে একটি ‘মউ’ সাক্ষরিত হয়, যার ভিত্তিতে পুঁথি ও গ্রন্থ সংরক্ষণের কাজ সমাধা হল।

সেন্টার ফর স্টাডিজ় ইন সোশ্যাল সায়েন্সেসের ডকুমেন্টেশন অফিসার অভিজিৎ ভট্টাচার্য বলেন, “আমরা মোট ২০৪৭টি পাণ্ডুলিপি ডিজিটালাইজ করেছি। সেগুলির মধ্যে পুঁথির সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে। কেননা অনেক ক্ষেত্রে একটি পাণ্ডুলিপির বান্ডিলে একাধিক পুঁথি থাকতে পারে। মোট ১ লাখ ৩৮ হাজার ১৫৮টি ইমেজে সেগুলি ধরা হয়েছে। এ বারে দ্বিতীয় পর্বের কাজ হবে ওই ইমেজগুলি থেকে পুঁথির মোট সংখ্যা নিরূপণ করা এবং ক্যাটালগ তৈরি করা।” সেই সঙ্গে ১৪টি দুষ্প্রাপ্য বই ১৭১৫ ইমেজে এবং ৪৭টি পত্রপত্রিকা ৭৪৫৫ ইমেজে ডিজিটালাইজ় করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অভিজিৎ জানান, কেন্দ্র ও রাজ্যের যৌথ সহায়তায় তাঁদের ‘সেন্টার’ চলে। তাঁর কথায়, “এই কাজগুলিকে বলা হয় ‘এনডেনজার্ড আর্কাইভস প্রোগ্রাম’। এতে যাবতীয় পুঁথি বা গ্রন্থ প্রথমে ডিজিটালাইজ় করা হয়। তার পর সেগুলির ক্যাটালগ বা পঞ্জীকরণ হয়। সবশেষে যাবতীয় তথ্য ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সকলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। উৎসাহী বা গবেষকেরা বিনামূল্যে ওই সব পুঁথি বা বই ব্যবহার করতে পারবেন। ”

দ্বিতীয় পর্বের কাজ শেষ হয়ে নবদ্বীপের পুঁথি ও পুস্তকের সমৃদ্ধ ভান্ডার সকলের জন্য উন্মুক্ত হতে আর বড় জোর এক বছরের অপেক্ষা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nadia Books library
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE