গঙ্গার ভাঙনে এমনই ভয়ঙ্কর দশা। —নিজস্ব চিত্র।
কেউ বাড়িহারা। কারও উঠোন পর্যন্ত উঠে এসেছে গঙ্গা। কারও আবার চাষের জমি চলে গিয়েছে নদীগর্ভে। আবার গঙ্গার ভাঙনের আতঙ্কে নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদের একাধিক এলাকার মানুষ। কেউ কেউ প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন।
নিম্নচাপের বৃষ্টিতে জলস্ফীতি ঘটেছে ভাগীরথীতে। সেখান থেকে আবার নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে গঙ্গায়। নদিয়ার নবদ্বীপ, শান্তিপুর-সহ মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জে নদীগর্ভে তলিয়ে যাচ্ছে একের পর এক বাড়ি। গঙ্গার গ্রাসে সমস্ত কৃষিজমি। খারাপ আবহাওয়ায় পার বাঁধানোর কাজও থমকে গিয়েছে। এখন ভাগীরথীর জলস্তরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে আতঙ্কে দিনযাপন করছেন দুই জেলার গঙ্গার পারের বাসিন্দারা। যদিও প্রশাসনের তরফে দ্রুত পদক্ষেপের ব্যাপারে আশ্বস্ত করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, ভাগীরথীর জল বাড়তেই নদিয়ার নবদ্বীপের মহিশুরা পঞ্চায়েত এলাকাতে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। গত এক সপ্তাহে ভাগীরথীর ভাঙনে কয়েক বিঘা জমি ফসল-সহ নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। এমনিতেই মহিশুরা ভাঙনপ্রবণ এলাকা। তার উপর টানা বৃষ্টিতে জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাঙনের তীব্রতা বেড়েছে। পাশাপাশি, চৌধুরীপাড়া, মালিতাপাড়া, কুর্মিপাড়ার মতো এলাকায় নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। বিঘার পর বিঘা ভুট্টার জমি ইতিমধ্যে ভাগীরথীর গর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে শুক্রবার সেচ দফতরের একটি বিশেষজ্ঞ দল ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। তারা জেলাশাসককে একটি রিপোর্ট দেয়। তাতে বলা হচ্ছে, প্রায় একশোর বেশি বাড়ি নদীগর্ভে তলিয়ে গিয়েছে। শুধুমাত্র ওই এলাকায় ভাগীরথীর গ্রাসে পঞ্চাশেরও বেশি পাকা বাড়ি রয়েছে। প্রতাপগঞ্জ, শিবদাসপুর এলাকায় নতুন করে ছড়িয়েছে ভাঙনের আতঙ্ক। শিবপুর, ধনঘরার গৃহহীনদের ঠাঁই হয়েছে মধুপুরের ত্রাণ শিবিরে।
মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জ ব্লকের মহেশটলার বাসিন্দা রবিন মণ্ডল নামে এক ভুক্তভোগী বলেন, ‘‘বেশির ভাগ বাড়িই নদীগর্ভে। যে ক’টা বেঁচে আছে, সেগুলো প্রায় ঝুলে আছে। আস্তে আস্তে ঝুরঝুরিয়ে ভেঙে পড়ছে সেই সব বাড়ি। ভিটেমাটি, উঠোন— সবই এখন গঙ্গাগর্ভে।’’ মহিশুরা পঞ্চায়েতের বাসিন্দা শুকদেব হালদার প্রায় তিন বিঘা জমিতে ভুট্টার চাষ করেছিলেন। সে সবই এখন নদী গর্ভে। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় ১৫ বিঘারও বেশি জমি গঙ্গা গর্ভে চলে গেল।’’ তাঁর খেদ, ‘‘প্রশাসন সঠিক সময়ে ব্যবস্থা নিলে আটকানো যেত।’’
গত কয়েক দিনের নিম্নচাপের বৃষ্টিতে ভাগীরথীর জলস্তর বৃদ্ধি পাওয়ায় থমকে গিয়েছে শান্তিপুরের চর সাগর এবং পার্শ্বস্ত এলাকার বাঁধ নির্মাণের কাজ। স্থানীয়দের আশঙ্কা, তাড়াতাড়ি এই কাজ শেষ না হলে গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে যাবে শান্তিপুরের ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের সমস্ত বাড়ি।
ভাঙন নিয়ে মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক রাজর্ষি মৈত্র বলেন, ‘‘জেলা প্রশাসন ভাগীরথীর ভাঙনের উপরে সজাগ দৃষ্টি রেখেছে। স্থানীয় প্রশাসনকেও সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।’’ নদিয়ার জেলাশাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, ‘‘আপৎকালীন ব্যবস্থা হিসাবে বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্তদের ত্রাণ সামগ্রীর ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেচ দফতরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy