E-Paper

ধারণা বদলে ফল মিলছে কলা বিভাগে

স্প্রিংডেল হাইস্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া শীর্ষে থাকলেও পরের স্থানটি দখল করেছেন বাণিজ্য বিভাগের পড়ুয়ারা। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা নানা দিক থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।

লিখছেন দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২৩ ০৮:২৬
উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র হাতে ছাত্রীরা।

উচ্চ মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র হাতে ছাত্রীরা। — ফাইল চিত্র।

সদ্য প্রকাশিত উচ্চ মাধ্যমিকে মেধা তালিকায় শীর্ষস্থান দখলের নিরিখে বিজ্ঞানের পাশে সমান ভাবে জায়গা করে নিয়েছেন কলা বিভাগের পড়ুয়ারাও। রাজ্যওয়াড়ি ফলাফলে অনেক ক্ষেত্রে বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের ছাপিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। নদিয়ায় সর্বোচ্চ নম্বরের অধিকারী, রাজ্যে ষষ্ঠ স্থানাধিকারী সৌমিলী মণ্ডলও কলা বিভাগেরই ছাত্রী।

উচ্চ মাধ্যমিকে এ বছর নদিয়ায় সার্বিক পাশের হার ছয় শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত বছর যেখানে পাশের হার ছিল ৮৬.৩১%, এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৯২.৮৬%। রাজ্যের ২৩টি জেলার মধ্যে শতকরা পাশের হারে নদিয়া চতুর্থ স্থানে উঠে এসেছে। এর মধ্যে বিভিন্ন স্কুলেই দেখা যাচ্ছে, কলা বিভাগের ফল অত্যন্ত ভাল। চাকদহের বসন্তকুমারী বালিকা বিদ্যাপীঠ, কল্যাণী স্প্রিংডেল হাইস্কুল, শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুল, চাকদহ রামলাল অ্যাকাডেমি, কৃষ্ণনগর কলেজিয়েট স্কুল বা নবদ্বীপ হিন্দু স্কুলের এখনও পর্যন্ত যে ফলাফল জানা গিয়েছে তাতে কলা ও বিজ্ঞান শাখাপ সাফল্য তুল্যমূল্য। পিছিয়ে নেই বাণিজ্য বিভাগের পড়ুয়ারাও।

নবদ্বীপ হিন্দু স্কুলের সর্বোচ্চ স্থানাধিকারী দু’জনের এক জন বিজ্ঞান, অন্য জন কলা বিভাগের পড়ুয়া। স্প্রিংডেল হাইস্কুলে বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়া শীর্ষে থাকলেও পরের স্থানটি দখল করেছেন বাণিজ্য বিভাগের পড়ুয়ারা। বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা নানা দিক থেকে বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলছেন, পাঠ্যসূচি এবং প্রশ্নের ধরন এর একটা বড় কারণ। আবার কেউ বলছেন, বিষয় নির্বাচনে এখন যত রকম ‍‘কম্বিনেশন’-এর সুযোগ রয়েছে তাতে আগের ‘পিওর সায়েন্স’-এর ধারণা অনেকটা পাল্টে যাচ্ছে। তার সুযোগ নিচ্ছে বুদ্ধিমান পড়ুয়ারা।

দে-পাড়া বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অজিত ভট্টাচার্য বলেন, “কলা বিভাগ মানেই বিরাট রচনাধর্মী প্রশ্ন, সেই ধারণা এখন নেই। ছোট প্রশ্নের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া প্রচুর নম্বর পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া কলা বিভাগের পড়ুয়াদের প্রশ্নমালা অনেকটাই ‘সিলেক্টিভ’। বিজ্ঞান বিভাগের পড়ুয়াদের সেই সুযোগ কম। কলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীদের কাছে প্রশ্নের উত্তর লেখার ক্ষেত্রে খানিকটা শিথিলতা থাকলেও বিজ্ঞানের পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে উত্তর ভীষণ ভাবে সুনির্দিষ্ট হওয়া চাই।”

অনেকেই মনে করেছেন, বিজ্ঞান বিভাগের মেধাবী পড়ুয়াদের একটি বড় অংশ জয়েন্ট এন্ট্রান্সের মতো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক বেশি মনোযোগী হন। শান্তিপুর মিউনিসিপ্যাল হাইস্কুলের প্রধান কিংশুক চক্রবর্তী বলেন, “যেহেতু ওই ছাত্রছাত্রীরা ‘জেনারেল স্ট্রিমে’ পড়বে না তাই উচ্চ মাধ্যমিক নিয়ে তাদের মাথাব্যথা অনেক কম। এ সব নিয়ে ওরা বেশি ভাবে না।”

নবদ্বীপ হিন্দু স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্ত তুহিনশুভ্র আচার্য (৪৬৯) ইতিমধ্যে অল ইন্ডিয়া জয়েন্ট এন্ট্রান্স মেনস পরীক্ষায় ৯৮.১৫ নম্বর পেয়েছে। এখন রুরকি আইআইটি-তে কেমিক্যাল ইঞ্জিয়ারিং পড়ার লক্ষ্যে অ্যাডভান্সড জয়েন্ট এন্ট্রান্সের প্রস্তুতি নিচ্ছেন তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই, তার কাছে উচ্চ মাধ্যমিকের মেধা তালিকা ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয় বলে শিক্ষকদের অনেকেই মনে করছেন।

চকদহ রামলাল অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষক রিপন পাল আবার মনে করেন, বিষয় বৈচিত্রের কারণে এমনটা ঘটছে। তিনি বলেন, “এ বার যে প্রথম হয়েছে তার কম্বিনেশন দেখলেই এটা স্পষ্ট হবে। এমন বিষয় নিলে নম্বর তো বাড়বেই। পিওর সায়েন্স বা আর্টস বলে কিছু নেই এখন।” শিক্ষকেরা বলছেন, নতুন নতুন বিষয়ের কম্বিনেশনই নম্বর বাড়াতে সাহায্য করছে। অঙ্ক, ভৌতবিজ্ঞান ও রসায়নের পাশাপাশি ছাত্রছাত্রীরা এমন কিছু বিষয় নির্বাচন করছেন, যাতে কম পড়ে বেশি নম্বর পাওয়া যাচ্ছে। আর সেই কারণেই ফলাফলে এ হেন পরিবর্তন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

HS Result 2023 HUmanities Science

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy