Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

বোনেদের বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু

দুই বোন সিঁটিয়ে বসে আছেন স্কুটির পিছনের সিটে। রোমিওদের মোটরবাইক কখনও এগিয়ে আসছে স্কুটির কাছাকাছি, কখনও বা পিছন থেকে দুই বোনের মুখে তীব্র আলো ফেলে ফেলে ছুঁড়ে দিচ্ছে অশ্লীল ইঙ্গিত— তাদের দৌরাত্ম্য এড়াতে গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন গোলাম।

আহত দুই বোন।

আহত দুই বোন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
দেবগ্রাম শেষ আপডেট: ১৪ জানুয়ারি ২০১৭ ০১:০১
Share: Save:

দুই বোন সিঁটিয়ে বসে আছেন স্কুটির পিছনের সিটে। রোমিওদের মোটরবাইক কখনও এগিয়ে আসছে স্কুটির কাছাকাছি, কখনও বা পিছন থেকে দুই বোনের মুখে তীব্র আলো ফেলে ফেলে ছুঁড়ে দিচ্ছে অশ্লীল ইঙ্গিত— তাদের দৌরাত্ম্য এড়াতে গতি বাড়িয়ে দিয়েছিলেন গোলাম।

তাতেও অবশ্য রেহাই মেলেনি। তিন সওয়ারি বাইক ছুটিয়ে এসে সটান ধাক্কা মারে হাল্কা স্কুটিতে। ছিটকে পড়ে রাস্তাতেই মারা যান গোলাম মোর্তাজা (৩৬)।

বৃহস্পতিবার রাতে, কালীগঞ্জ-দেবগ্রাম সড়কে চট্টগ্রাম কলোনির ওই ঘটনার পরে চব্বিশ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও ওই তিন রোমিও’র হদিসই করতে পরেনি পুলিশ। নদিয়ার পুলিশ সুপার শীষরাম ঝাঝারিয়া বলছেন, “মৃতের বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তিন অজ্ঞাতপরিচয়ের বিরুদ্ধে ৩০৪ ধারায় মামলা করা হয়েছে তবে রাত পর্যন্ত ওই মোটরবাইকটির খোঁজ মেলেনি।”

মৃত গোলাম মোর্তাজা।— নিজস্ব চিত্র

আহত দুই বোন, বিলকিস ইয়াসমিন আর আইরিনের হাত-হাঁটুতে চোট। তবে দেবগ্রাম প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র থেকে তাঁদের আপাতত ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।

বেশ কিছু দিন ওমানে চাকরি করে সদ্য গ্রামে ফিরেছিলেন গোলাম। তাঁর মামা নাসিরুদ্দিন জানান, দুই বোনকে নিয়ে রাতে সে গিয়েছিল দেবগ্রামের সম্প্রিতী উৎসব দেখতে। ফিরতে একটু রাতই হয়ে গিয়েছিল, প্রায় দশটা। আইরিন বলছেন, ‘‘দাদা প্রথমে আস্তেই স্কুটি চালাচ্ছিলেন। আমরা দুই বোন দাদার স্কুটি করে রাত দেবগ্রাম চৌমাথা ছাড়াতেই একটি মোটরবাইকে আমাদের পিছু নেয়। তিন জন ছিল।’’ তিনি জানান, মোটরবাইকের গতি বাড়িয়ে তারা কখনও স্কুটির আগে চলে যাচ্ছিল, আবার কখনও গতি কমিয়ে তাদের পিছনে আসছিল ধীর গতিতে। তিনি বলেন, ‘‘ভয় পেয়ে দাদা গতি বাড়াতেই চট্টগ্রাম কলোনির কাছে ওরা আমাদের ধাক্কা মারে। দাদা ছিটকে পড়ে। মুখ-নাক দিয়ে গলগল করে রক্তা বেরোচ্ছিল।’’ ইয়াসমিন ফোন করে গ্রামে খবর দিলে তাঁরাই এসে দেবগ্রাম হাসপাতালে নিয়ে যান গোলামকে। সেখানে, কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান গোলাম।

ইয়াসমিন বলেন, “ওদের আমরা চিনতে পারিনি। শীতকাল, মাথায় হেলমেট ছিল, চেনার উপায় ছিল না। তা ছাড়া ধাক্কা মারার পরে ওরা আর দাঁড়ায়নি।’’

গোলামের মামা হাবিবুল্লা বিশ্বাস বলছেন, ‘‘যা শুনলাম, সমানে ভাগ্নিদের উত্যক্ত করছিল ওই যুবকেরা। তার পরেই ধাক্কা মেরে ফেলে দেয়। দিন দিন গ্রামের পথে এ ঘটনা বাড়ছে। এ বার এর বিহিত চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Youth Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE