Advertisement
০৬ মে ২০২৪
Sandeshkhali Incident

‘বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসনের পরিস্থিতি’! সন্দেশখালি ঘুরে দ্রৌপদীর কাছে ৩৫৬ ধারার সুপারিশ এসসি কমিশনের

শুক্রবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে ওই সুপারিশ করেন জাতীয় তফসিলি কমিশনের চেয়ারম্যান অরুণ হালদার।। কী কারণে এই সুপারিশ তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অরুণ।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করলেন জাতীয় তফসিলি কমিশনের চেয়ারম্যান অরুণ হালদার।

রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করলেন জাতীয় তফসিলি কমিশনের চেয়ারম্যান অরুণ হালদার। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ ২৩:০৯
Share: Save:

বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার সুপারিশ করলেন জাতীয় তফসিলি কমিশনের চেয়ারম্যান অরুণ হালদার। শুক্রবার রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে দেখা করে ওই সুপারিশ করেন তিনি। কী কারণে এই সুপারিশ তার ব্যাখ্যাও দিয়েছেন অরুণ। পাল্টা তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেন, “ক্ষমতা থাকলে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে দেখান!”

বৃহস্পতিবার উত্তর ২৪ পরগনার সন্দেশখালি গিয়েছিল জাতীয় তফসিলি কমিশনের প্রতিনিধি দল। সেখানে ওই প্রতিনিধি দলকে নানা বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে বলে দাবি করেন অরুণ। সেখান থেকে ফিরে শুক্রবার রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করেন কমিশনের চেয়ারম্যান অরুণ এবং অন্য প্রতিনিধিরা। সেখানেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার সুপারিশ জানানো হয়। অরুণ বলেন, “ভারতের তফসিলি জনজাতির মানুষদের সুরক্ষার্থে মাননীয় রাষ্ট্রপতি এই কমিশন তৈরি করেছেন। তফসিলি সম্প্রদায়ের মানুষ কোথাও অত্যাচারিত বা নিপীড়িত হলে সেই বিষয়ে তদন্ত করে তাঁদের কথা সরকারে কাছে পৌঁছে দিয়ে সমস্যার সমাধান করার চেষ্টা করা এই কমিশনের কাজ। সন্দেশখালির ৮০ শতাংশ মানুষ তফসিলি সম্প্রদায়ভুক্ত। সন্দেশখালির ঘটনা সামনে আসার পর রাজ্য সরকারের কাছে সেই সংক্রান্ত রিপোর্ট চাওয়া হয়েছিল। রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব এবং পুলিশের ডিজিকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, কমিশনের একটি পূর্ণ দল সন্দেশখালি যাবে।” এর পর অরুণ দাবি করেছেন, রাজ্যের তরফ থেকে তাঁকে জানিয়ে দেওয়া হয় পরস্থিতি ‘উত্তপ্ত’ এখন কোনও ভাবেই সেখানে কোনও দল পাঠানো যাবে না। তিনি আরও বলেন, “বার বার বলা সত্ত্বেও রাজ্যের তরফ থেকে কোনও রকম সদুত্তর না পেয়ে আমরা নিজেরাই সন্দেশখালিতে পৌঁছই। সেখানো পৌঁছে দেখি থমথমে পরিস্থিতি।” তাঁর কথায়, “স্থানীয়দের অভিযোগ শোনার পর পুলিশের সঙ্গে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে গেলে কমিশনের প্রতিনিধিদের চরম হেনস্থার সম্মুখীন হতে হয়। এর পর কলকাতায় ফিরে দিল্লি যাওয়ার পথে সন্দেশখালি সংক্রান্ত রিপোর্ট তৈরি করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার জন্য সুপারিশ করা হবে।”

কেন রাষ্ট্রপতি শাসন তার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে অরুণ বলেন, “সংবিধানের ৩৩৮ ধারায় বলা হয়েছে, কোনও রাজ্যে তফসিলি জনজাতিভুক্ত মানুষদের যদি সেখানকার সরকার সুরক্ষা ও নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়, সে ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি চাইলে সেই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করতে পারেন। সন্দেশখালির ক্ষেত্রে প্রশাসন দুষ্কৃতীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে সেখানকার মানুষদের উপর অত্যাচার করেছে। তাঁদের জমি-জায়গা কেড়ে নিয়েছে। তাঁদের ‘নিগ্রহ’ করা হয়েছে। স্পষ্টতই, ৩৩৮ ধারা লঙ্ঘন হয়েছে সন্দেশখালিতে। এই কারণ দেখিয়েই রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করার সুপারিশ জানিয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রপতিকে।”

পাল্টা তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেন, “বাংলায় অবাধ গণতন্ত্র রয়েছে। বাংলা শান্তিপূর্ণ। রাজ্যে ৩৫৬ ধারা জারি করার কোনও জায়গা নেই। সবই বাজার গরম করার কথা। ক্ষমতা থাকলে বাংলায় রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করে দেখান!”

গত ৫ জানুয়ারি থেকে দফায় দফায় উত্তপ্ত হয়েছে সন্দেশখালি। সে দিন রেশন ‘দুর্নীতি’ সংক্রান্ত তদন্তের সূত্রে শাহজাহান শেখের বাড়িতে তল্লাশি চালাতে গিয়ে তাঁর অনুগামীদের হাতে নিগৃহীত হতে হয় ইডির আধিকারিকদের। এর পর থেকে ‘নিখোঁজ’ শাহজাহান ও তাঁর অনুগামী শিবু হাজরা। গত সপ্তাহে সন্দেশখালিতে রাস্তায় নেমে আন্দোলনে শামিল হন গ্রামের মানুষ। সেই সব বিক্ষোভকারীদের মধ্যে একেবারে সামনের সারিতে দেখা গিয়েছিল বহু মহিলাকে। তাঁদের অভিযোগ ছিল, এলাকার কম বয়সি সুন্দরী মহিলাদের ‘আলাদা’ চোখে দেখতেন শাহজাহানের শাগরেদ শিবপ্রসাদ হাজরার বাহিনীর লোকেরা। জোর করে তাঁদের মিটিং-মিছিলে ডেকে নিয়ে যাওয়া তো বটেই, রাতের দিকেও বাড়িতে ডেকে পাঠানো হত। না গেলেই দেওয়া হত হুমকি। শ্লীলতাহানিরও অভিযোগ তুলেছিলেন মহিলাদের একাংশ। এই অভিযোগ পেয়ে বৃহস্পতিবার সন্দেশখালিতে গিয়েছিলেন তফসিলি কমিশনের প্রতিনিধিরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE