এত দিন মৌখিক হুঁশিয়ারি-হুমকি ছিল। এ বার ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন অফিসারদের (ইআরও, যাঁরা এসআইআর-এ সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ অফিসার) আইনি বৃত্তে ঢুকিয়ে দিল জাতীয় নির্বাচন কমিশন। তাদের নির্দেশ, ১ ডিসেম্বরের মধ্যে ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের সব ইআরও-কে শংসাপত্র দিয়ে জানাতে হবে, ডিজিটাল মাধ্যমে ভোটারের তথ্য নথিভুক্ত করার কাজে কোনও বেসরকারি বা চুক্তিভিত্তিক ডেটা এন্ট্রি অপারেটর (ডিইও) নিয়োগ করা হয়নি। সেই শংসাপত্র জেলাশাসকেরা জমা দেবেন কমিশনকে। চলতি এসআইআর-এ বেসরকারি ডিইও নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে ওঠার সঙ্গেই এই বার্তা অর্থবহ বলে মত প্রশাসনের একাংশের।
অফিসারদের একাংশের মতে, লিখিত ভাবে নিজের দায়িত্ব স্বীকার করা ইআরও-দের কাছে কার্যত উভয় সংকটের। কারণ, তাঁরা স্বীকার করলে তা কমিশনের বিধির সঙ্গে মানানসই হবে না। অস্বীকারের ক্ষেত্রে কমিশন পাল্টা প্রমাণ দেখালে মিথ্যা তথ্য দেওয়ার দায় বর্তাতে পারে সেই ইআরও-র উপরে। কমিশন আরও জানিয়েছে, বাড়ি-বাড়ি ঘুরে অনুপস্থিত, ঠিকানা বদল, মৃত এবং ডুপ্লিকেট যে ভোটারদের চিহ্নিত করা হয়েছিল, তাঁদের অনেককে নথিবদ্ধ করা হয়নি! এমনকি, কমিশন এমন অনেকগুলি অভিযোগ হাতে পেয়েছে, যেখানে এমন ধরনের ভোটারদের ফর্ম সংগ্রহ করাও হয়েছিল ভিন্ন ঠিকানা বা এলাকা থেকে।
ঘটনাচক্রে, বহু ভোটারের তথ্য কমিশন পাচ্ছে, যার বাস্তব ভিত্তি থাকা কার্যত অসম্ভব। যেমন, মা-বাবার পদবি যেখানে সরকার, সেখানে সন্তানের পদবি সাহা! ১৮-১৯ বছরের কোনও যুবতীর মা-বাবার যা তথ্য, তা মিলে যাচ্ছে সত্তরোর্ধ কোনও ব্যক্তির সংশ্লিষ্ট তথ্যের সঙ্গে। আবার একদিকে একাধিক ভোটারের মা-বাবার নামে মিল থাকছে, অন্যদিকে সেই সম্পর্কগুলির উল্লেখ করা হয়েছে ‘অন্য বা আদার্স’ হিসাবে। সম্প্রতি এমন অনেক তথ্য জেলায়-জেলায় পাঠিয়ে রিপোর্ট চাওয়া হয়েছে। প্রসঙ্গত, ইতিমধ্যেই বেসরকারি ডিইও-র হস্তক্ষেপ নিয়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে বিভিন্ন এলাকায়। তার খবর পৌঁছেছিল কমিশনের কাছে। তারপরেই ইআরও-দের থেকে কার্যত মুচলেকা নেওয়ার ‘অভিনব’ পদক্ষেপ করা হয়েছে।
বিএলও-রা যে তথ্য কমিশনের পোর্টালে আপলোড করবেন, তা খতিয়ে দেখার কথা ইআরও-দের। ভোটারদের যোগ্যতা বাছাইয়েও তাঁরা একমাত্র দায়িত্বপ্রাপ্ত। যদিও বিহারের এসআইআর-এ বিএলও-রাই সেই যাচাইয়ের মূল স্তম্ভ ছিলেন। আবার এলাকায় এলাকায় বিএলও-দের সহযোগিতা এবং চাহিদা পূরণের দায়িত্বও থেকে যায় ইআরও-র উপরে।
রাজ্যে বহু বিএলও-র অভিযোগ ছিল, তাঁরা অফলাইনে কাজ শেষ করে ফেললেও, অনলাইনের কাজে সড়গড় নন। ফলে তাতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক বেশি সময় লাগছে। এমনকি, এক বিএলও-র আত্মহত্যার নথিতেও এ কথার উল্লেখ ছিল। এই অবস্থায় ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের চাহিদা বেড়েছে। কমিশন অবশ্য এসআইআর শুরুর আগেই বলে দিয়েছিল, এ কাজে চুক্তিভিত্তিক বা বেসরকারি কাউকে নিয়োগ করা যাবে না। কারণ, অতীতে এমন অপারেটরদের একাংশের বিরুদ্ধে ভোটার তালিকায় অসাধু কাজকর্মের অভিযোগ এবং প্রমাণ আছে। তাই স্থায়ী সরকারি কর্মীদের থেকেই অপারেটর নিয়োগ করার কথা বলেছিল কমিশন। তা অবশ্য এখনও করা যায়নি। এ নিয়ে রাজ্য-কমিশনের টানাপড়েনও অব্যাহত। অথচ, এমন প্রতিকূলতার পরেও প্রায় ৯০ শতাংশ ফর্ম ডিজিটাইজ় হয়ে গিয়েছে। কমিশনের বক্তব্য, তাদের না জানিয়েই এ কাজে জেলায়-জেলায় বহু অপারেটর নিযুক্ত হয়েছেন, যাঁরা সরকারি কর্মী নন।
আধিকারিকদের একাংশের ধারণা, কমিশন অসাধু কাজের প্রমাণ পেলে ডেটা এন্ট্রি অপারেটরদের ভূমিকা ফের চর্চায় আসবে। তখনই খতিয়ে দেখা হবে ইআরও-র শংসাপত্র। তেমন পরিস্থিতিতে সংশ্লিষ্ট ইআরও-র বয়ান কমিশনের কাছে হাতিয়ার হয়ে উঠতে পারে।
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)