Advertisement
E-Paper

ভারতকে নতুন সম্বোধন আরএসএস প্রধানের! বর্ধমানের প্রকাশ্য সভায় ভাগবতের ‘সেতু’-বন্ধন

ভারতকে এক নতুন নামে তাঁর সম্বোধন নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। বর্ধমানের ময়দান থেকে ভারতের ভৌগোলিক বিন‍্যাসকে যে ভাবে বোঝালেন ভাগবত, তাতে সঙ্ঘের নিজস্ব সাংস্কৃতিক বিশ্বাসের ছাপ স্পষ্ট।

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত।

আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। ছবি: পিটিআই।

ঈশানদেব চট্টোপাধ্যায়

শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ ২১:৩০
Share
Save

ভারতের প্রতি দায়বদ্ধতার কথা বললেন। ভারতের সামনে এই মুহূর্তে অনেক সমস‍্যা রয়েছে বলে মন্তব্য করলেন। বেনজির দীর্ঘ বঙ্গ সফরে যখন রয়েছেন, তখন বাংলাদেশের চলতি পরিস্থিতি নিয়ে তিনি মন্তব‍্য করবেন বলেও অনেকের প্রত‍্যাশা ছিল। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতের ভাষণে তেমন আভাসও রবিবার অনেকে পেলেন। কিন্তু সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ ঠেকল ভারতকে এক নতুন নামে তাঁর সম্বোধন। ভারতের ভৌগোলিক বিন‍্যাসকে যে নামে ডাকলেন ভাগবত, তাতে সঙ্ঘের নিজস্ব সাংস্কৃতিক মান‍্যতার ছাপ স্পষ্ট।

রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ (আরএসএস)-এর ‘মধ্যবঙ্গ প্রদেশের একত্রীকরণ সমাবেশ’ ছিল রবিবার। সরসঙ্ঘচালকের দীর্ঘতম পশ্চিমবঙ্গ সফরে এটিই ছিল একমাত্র প্রকাশ‍্য কর্মসূচি। পূর্ব বর্ধমান জেলার তালিতে সাই-এর ময়দানে ভাগবতের ভাষণ শুনতে প্রথামাফিক স্বয়ংসেবকরা হাজির হয়েছিলেন সঙ্ঘের নিজস্ব পোশাকে। ভাগবত নিজেও তা-ই। স্বয়ংসেবকদের একত্রীকরণে হাজির হয়ে গোটা হিন্দু সমাজের একত্রীকরণের কথা বলছিলেন ভাগবত। তার পরেই সঙ্ঘ প্রধান ‘হিন্দু’ শব্দের সঙ্ঘীয় ব‍্যখ‍্যা দেন। বলেন, “হিন্দু কোনও উপাসনা পদ্ধতি বা কোনও সম্প্রদায় নয়। হিন্দু হল ভারতীয়দের পরিচয়।” ভাগবতের কথায়, “ভারতের নানা প্রান্তে নানা ভাষা, নানা রীতি, নানা সম্প্রদায়, নানা খাদ‍্যাভ‍্যাস। কিন্তু তবু তাদের মধ্যে একটা সাংস্কৃতিক মিল রয়েছে। একটা অভিন্ন সংস্কৃতি। এটাই ভারতের স্ব-ভাব। আর এর নামই হিন্দুত্ব।’’ আপামর ভারতে এই অভিন্ন ‘স্ব-ভাব’ প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই ভাগবত এ দিন ভারতকে নতুন নামে ডেকেছেন রবিবার।

ভারত মহাসাগর থেকে হিমালয় পর্বত পর্যন্ত ভারতের যে ভৌগোলিক বিন‍্যাস, তাকে এক কথায় বলতে গিয়ে ‘আসমুদ্রহিমাচল’ কথাটা ব‍্যবহার করা হয়। কিন্তু রবিবার আরএসএস প্রধান বলেছেন— ‘আসেতুহিমাচল’। অর্থাৎ সেতু থেকে হিমালয় পর্বত পর্যন্ত। ‘সেতু’ বলতে সঙ্ঘপ্রধান যে ‘রামসেতু’র কথা বোঝাতে চেয়েছেন, তা নিয়ে কারও কোনও সংশয় নেই। কারণ হিমাচল বা হিমালয় পর্বত ভারতের উত্তরতম প্রান্তে। সে ক্ষেত্রে সেতু শব্দের মাধ‍্যমে তিনি দক্ষিণতম প্রান্তের কথাই বুঝিয়েছেন। আর ভারতের দক্ষিণতম প্রান্তে যদি কোনও সেতুর কথা উল্লেখ করা হয়, তা হলে যে সেতুবন্ধ বা রামসেতুর কথাই বলা হচ্ছে, তা নিয়ে কোনও দ্বিমত নেই।

ভাগবতের এই শব্দচয়ন রবিবার অনেকেরই নজর কেড়েছে। তবে আরএসএসের কোনও পদাধিকারী এ নিয়ে একটা শব্দও খরচ করতে রাজি নন। তাঁদেরই একজন বললেন, “সরসঙ্ঘচালক আমাদের সর্বোচ্চ মার্গদর্শক। তাঁর বক্তব্য নিয়ে কাটাছেঁড়া করা আমাদের অধিকারের মধ‍্যে পড়ে না।” কিন্তু সঙ্ঘ প্রধানের এই শব্দচয়নে যে সঙ্ঘ খুশি, তা পদাধিকারীদের মুখমণ্ডলের রেখায় স্পষ্ট। খুশি অবশ্য হওয়ারই কথা। সঙ্ঘ যে ‘সাংস্কৃতিক রাষ্ট্রবাদের’ কথা বলে, তার অন‍্যতম মূল উপাদান ভারতীয় মহাকাব্য এবং পূরাণ। ‘আসেতুহিমাচল’ শব্দবন্ধও সেই পৌরাণিক বোধ থেকেই আসা। এই শব্দবন্ধে ভারতের ভৌগোলিক বিন্যাসের বিকৃতি ঘটছে না। আবার রামরাজ‍্য সংক্রান্ত সঙ্ঘীয় স্লোগানও এই শব্দে সম্পৃক্ত হয়ে যাচ্ছে।

টানা ১১ দিনের পশ্চিমবঙ্গ সফর কোনও সরসঙ্ঘচালক কখনও করেননি। এ বার তেমনই বেনজির সফর। তা-ও আবার বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতির আবহে। সীমান্তের ও-পারের পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে এ পারের বাস্তবতা সঙ্ঘের জন‍্য আগের চেয়ে অনুকূল বলে আরএসএস মনে করছে। ভাগবতের এই সফরে সেই ‘অনুকূল’ স্রোতের সুবিধা নেওয়ার পরিকল্পনা তৈরি হবে বলেও সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষকদের ধারণা ছিল। তাই রবিবারের প্রকাশ্য সমাবেশ থেকে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ভাগবতের বয়ান সামনে আসবে বলে অনেকের আশা ছিল। ভাগবত তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করেননি। কিন্তু বাংলাদেশের পরিস্থিতির মোকাবিলা ভারত কী ভাবে করবে, তার ইঙ্গিত তিনি দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করছেন। মহাভারতের কাহিনি উল্লেখ করে ভাগবত রবিবার সাত‍্যকি, অর্জুন এবং শ্রীকৃষ্ণের শিকারে যাওয়ার এক আখ‍্যান শোনান। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের পর কী ভাবে শিকারে গিয়ে তাঁরা তিন জন বনে রাত কাটিয়েছিলেন, সেই আখ‍্যান। রাতে সকলে একসঙ্গে ঘুমোননি। দু’জন করে ঘুমোচ্ছিলেন। এক জন জাগছিলেন পালা করে। সে রাতে কী ভাবে এক হানাদার রাক্ষস সাত‍্যকি এবং অর্জুনের নির্বুদ্ধিতায় আঙুলের আকার থেকে বাড়তে বাড়তে তালগাছের আকারে পৌঁছয় এবং শেষে শ্রীকৃষ্ণের বুদ্ধিমত্তায় সে আবার কী ভাবে ছোট হয়ে গিয়ে বন্দি হয়, সেই কাহিনি শোনান ভাগবত। তার পরে তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বলেন, “আমাদেরও এ ভাবে বুঝে নিতে হবে, আমাদের শক্তি কিসে এবং তাকে কী ভাবে আরও বাড়াব। বুঝে নিতে হবে রাক্ষসের শক্তি কিসে বাড়ে। বুঝে নিয়ে সে ফাঁদে আর পা দেব না।”

ভাগবত আরও বলেন, “ভারতের সামনে এই মুহূর্তে অনেক সমস‍্যা। আমাদের ধৈর্য ধরেই তার মোকাবিলা করতে হবে। সমস‍্যা আগেও ছিল। ভবিষ্যতেও থাকবে। কিন্তু মোকাবিলার আদর্শ কৌশল কোনটা, সেটা আমাদেরই বুঝে নিতে হবে।” সঙ্ঘপ্রধানের এই মন্তব্যে অনেকে বাংলাদেশ সংক্রান্ত বিষয়ে ভারতের সম্ভাব‍্য কৌশলের আভাস খুঁজে পেয়েছেন। সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ বিশ্লেষকদের মতে, “ভাগবত বুঝিয়ে দিয়েছেন, সামরিক সমাধান নয়, কূটনৈতিক ভাবে অনেক সহজে বাংলাদেশের পরিস্থিতিকে কব্জায় আনা যেতে পারে।” কেউ কেউ অবশ‍্য সঙ্ঘপ্রধানের এই মন্তব্যে ভারতের অভ‍্যন্তরীণ পরিস্থিতির মোকাবিলার কৌশলও খুঁজে পেয়েছেন।

RSS Mohan Bhagwat Bangladesh Situation

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}