Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Vulture

Vulture: বিলুপ্ত হচ্ছে শকুন, নিজের জমিতে ভাগাড় বানিয়ে আশ্রয় দিচ্ছেন জটিয়াকালীর আব্দুল

শকুন বিশেষজ্ঞ সচিন রানাডে জানিয়েছেন, মারণ ওষুধ ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহারের কারণে দু’দশকে ভারতে শকুনের সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে।

শকুন বাঁচাতে ভাগাড় গড়েছেন ফুলবাড়ির আব্দুল।

শকুন বাঁচাতে ভাগাড় গড়েছেন ফুলবাড়ির আব্দুল। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২৬ এপ্রিল ২০২২ ২০:২৬
Share: Save:

এ এক অন্য রকম শখ। অস্তিত্বের প্রান্তসীমায় চলে যাওয়া শকুনদের বাঁচানোর জন্য নিজের জমিতেই ভাগাড় বানিয়েছেন ফুলবাড়ির ইন্দো-বাংলা সীমান্তের জটিয়াকালী এলাকার বাসিন্দা আব্দুল সুভান।

শিলিগুড়ি শহরের অদূরে গড়ে ওঠা ওই ভাগাড়ে ২০০৭ সাল থেকে শকুনদের আশ্রয় দিচ্ছেন তিনি। ইতিমধ্যেই হিমালয়ান গ্রিফ্ন ভালচার প্রজাতির জমজমাট কলোনি গড়ে উঠেছে সেখানে। এই শখের উৎপত্তি সম্পর্কে আব্দুল বলেন, ‘‘আগে গ্রামেরই যে সব পশু মারা যেত, তাদের মাটিতে পুঁতে দেওয়া হত। কৃষিভিত্তিক এলাকা। কাজেই গবাদি পশু প্রায় সব বাড়িতেই রয়েছে। তারা মারা গেলে হঠাৎ এ দিক ও দিক কেউ ফেলেও দিতেন। দেখা যায় এক-দু’টি শকুন এসে হাজির হচ্ছে। আস্তে আস্তে তা বাড়তে থাকে। একটা সময় সংখ্যা এসে দাঁড়াল প্রায় ৩০০-তে। কাজেই তাদের আশ্রয়ের কথা মাথায় রেখে খাদ্যের জোগান দিতে আমি কথা বলেছিলাম শিলিগুড়ি পুরসভা কর্তৃপক্ষের সঙ্গে।’’

কিন্তু জায়গা কে দেবে? আব্দুল নিজের জমিতেই তাই গড়ে তোলেন ভাগাড়। শহর বা শহরতলি এলাকা থেকে মৃত গবাদি পশুর দেহাংশ নিয়ে ফেলতে থাকে নিজের জমিতে। শকুনের সংখ্যা আরও বাড়তে থাকে। ২০১১ সাল থেকে শকুনদের দেখভাল করছেন আব্দুল। কোন শকুনের ডানা ভাঙা, কে বেশি দৌঁড়তে পারে এ সবও তাঁর নখদর্পণে। বর্ষার সময় যদিও বা এই প্রজাতির শকুন এখানে থাকে না। বৃষ্টির জলে ডানা ভারী হয়ে যায়। সমস্যা হয় চলা ফেরায়। তখন তারা হিমালয়ের কোলে আশ্রয় নেয়। বর্ষা মিটতেই আবার এসে হাজির হয় ফুলবাড়িতে।

কিন্তু শুধুমাত্র শকুনের খাদ্যের জোগান দিলেই হল না। তাদের দেখভালের প্রয়োজন। যে এলাকায় শকুনের আস্তানা, সেখান দিয়েই চলে গিয়েছে হাইটেনশন বিদ্যুতের লাইন। কখনও কখনও তাই মারাও পড়ে তারা। বিষাক্ত দেহাংশ খেয়ে অসুস্থ হওয়ার ঘটনাও ঘটে। তখন তিনি যোগাযোগ করেন বন দফতরের সঙ্গে। পাশাপাশি, বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ সংগঠন ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া (ডব্লিউটিআই), সোসাইটি ফর নেচার অ্যান্ড অ্যানিম্যাল ফাউন্ডেশন (স্ন্যাপ) থেকেও মেলে সাহায্য। গ্রামবাসীদেরও শকুন সংরক্ষণে উৎসাহী করে তুলতে নিরন্তর চেষ্টা চালান আব্দুল।

অসুস্থ শকুনদের উদ্ধার করে বক্সার রাজাভাতখাওয়া শকুন প্রজনন কেন্দ্রেও নিয়ে যান আব্দুল। সেখানকার শকুন বিশেষজ্ঞ তথা বম্বে ন্যাচারাল হিস্ট্রি সোসাইটি (বিএনএইচএস)-র অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর সচিন রানাডে জানিয়েছেন, মারণ ওষুধ ডাইক্লোফেনাকের ব্যবহারের কারণে দু’দশকে ভারতে শকুনের সংখ্যা ৯০ শতাংশেরও বেশি কমে গিয়েছে। হোয়াইট ব্যাক্‌ড, স্লেন্ডার বিল্‌ড, লং বিল্‌ড প্রজাতির শকুন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমেছে হিমালয়ান গ্রিফন প্রজাতিও।

আইনগত ভাবে গবাদি পশুর দেহে ব্যথা উপশমের ওষুধ ডাইক্লোফেনাক ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও লুকিয়ে তা ব্যবহার হয় বলে পরিবেশপ্রেমীদের অনেকেরই অভিযোগ। স্ন্যাপ-এর ডিরেক্টর কৌস্তভ চৌধুরী জানান , ৮০-র দশকে শেষ শকুন গণনা অনুযায়ী গোটা বিশ্বে প্রায় চার লক্ষ শকুন ছিল। যা এই মুহুর্তে প্রায় চল্লিশ হাজারে নেমে এসেছে। প্রকৃতির ভারসাম্য বজার রাখতে এই প্রানীটির বেঁচে থাকা অত্যন্ত জরুরি। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য বন দফতরের সহযোগিতায় এদের সংরক্ষণের কাজ চলছে। আব্দুল মত উৎসাহী মানুষদের শকুন সংরক্ষণে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Vulture Vulture Conservation Siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE