প্রতীকী ছবি।
৬৭ বছর বয়স। তার উপরে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রয়েছে। আলিপুরদুয়ার রবীন্দ্রনগরের এই বাসিন্দা যখন জেলা হাসপাতালে আসেন, তখনই জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট শুরু হয়েছে। এর পরে লালারস পরীক্ষায় রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে তপসিখাতার কোভিড হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেটা ৯ অগস্ট। চার দিন পরে ১৩ অগস্ট অবস্থা সঙ্কটজনক হয়ে পড়ে। ভেন্টিলেশনে দিতে হয় তাঁকে। পরে চিকিৎসকেরা জানান, কোমায় চলে গিয়েছিলেন রোগী। রক্তে অক্সিজেন থাকার কথা ৯৫ শতাংশ। তা নেমে গিয়েছিল ৬০ শতাংশে। রক্তে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল বলেও হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়।
এক চিকিৎস জানান, তখন ওই রোগীর শারীরিক অবস্থা যে পর্যায়ে পৌঁছয়, ডাক্তারি পরিভাষায় তাকে বলে ‘অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ডিসট্রেস সিনড্রোম’।
এই রোগীকে শেষ পর্যন্ত সুস্থ করে তুলেছেন কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসকেরা। পনেরো দিন এতটাই হতাশ হয়ে পড়েছিল পরিবার যে, কোমা থেকে রোগীর আবার জ্ঞান ফিরে এসেছে, এই কথাটা প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারেননি তাঁর স্ত্রী ও মেয়ে। এক স্বাস্থ্যকর্তও বলেন, ‘‘এটাকে এক কথায় বলা যায় অসাধ্য সাধন করা। জ্বর, শ্বাসকষ্টের সঙ্গে হাইপার টেনশন আর ডায়াবেটিসের মতো কোমর্বিডিটি নিয়ে রোগী যখন কোমায় চলে যায়, সেই অবস্থা থেকে তাঁকে সুস্থ করে তোলাটা অসম্ভবকে সম্ভব করার মতো।’’ সেটাই করেছেন চিকিৎসকেরা, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সহায়তায়। তাই বৃদ্ধের বাড়ির লোক বলছেন, ‘‘আমাদের কাছে ওঁরাই ঈশ্বরের সমতুল।’’
কী অবস্থা ছিল রোগীর? ডাক্তারদের কথায়, দ্রুত ফুসফুসের অবস্থা খারাপ হচ্ছিল, রোগীও সঙ্কটজনক অবস্থায় ঢুকে পড়ছিলেন। হাল ছাড়েননি কোভিড হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, সিসিইউ-র টেকনিশিয়ান এবং স্বাস্থ্যকর্মীরা। টানা সাত দিন চিকিৎসা চালানোর পর সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। কোভিড রিপোর্ট আসে নেগেটিভ। ওই বৃদ্ধ বলেন, ‘‘আমি যেন মৃত্যুর দেখা পেয়েছিলাম। এটা আমার দ্বিতীয় জন্ম। আর এই হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মীরা আমার জীবনদাত্রী ঈশ্বর।’’
আলিপুরদুয়ার জেলা সদর হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মণ বলেন, ‘‘সকলে মিলে কোভিড হাসপাতালে ইতিহাস গড়লেন।’’ কোভিড হাসপাতালের গোটা টিমকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন জেলাশাসক সুরেন্দ্রকুমার মিনা। তিনি বলেন, ‘‘জেলায় করোনা মোকাবেলায় খুব ভাল কাজ হচ্ছে, এটা তার বড় প্রমাণ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy