E-Paper

পাহাড়ে মুখ থুবড়ে পড়ল যৌথমঞ্চ

ফল যত সামনে এসেছে, ‘মহাজোট’ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিজেপি কিছু আসন, কিছু পঞ্চায়েতে জিতলেও বিমল গুরুং, অজয় এডওয়ার্ড আর মন ঘিসিংদের অবস্থা শোচনীয়।

কৌশিক চৌধুরী

শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০২৩ ০৭:০৭
ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা সমর্থকদের উচ্ছাস।

ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা সমর্থকদের উচ্ছাস। কালিম্পং এর স্কটিশ ইউনিভার্সিটি মিশন ইন্সটিটিউশনে ভোট গণনা কেন্দ্রের বাইরে তোলা ছবি। ছবি: স্বরূপ সরকার।

গত বছরের শেষের দিকে দার্জিলিং পুরসভায় ক্ষমতার হাতবদল হতেই জোট বাঁধার সলতে পাকানো শুরু হয়েছিল। প্রথমে বিনয় তামাং, অজয় এডওয়ার্ড এবং বিমল গুরুংয়েরা এক সঙ্গে ‘পাহাড়ের গণতন্ত্র বাঁচাও’ বলে হাঁটা শুরু করেন। পরে, আসে বিজেপি। কিছু পরে বিনয় খানিকটা সরে যান। জোটের ঘোষণা করতে বিজেপি নেতৃত্বের লেগে যায় প্রায় পাঁচ মাস। পঞ্চায়েত ভোট ঘোষণার পরেই প্রকাশ্যে আসে ‘যৌথ গোর্খা মঞ্চ’। মঞ্চের তরফে পাহাড়কে দুর্নীতিমুক্ত করা ও উন্নয়নমুখী করার ডাক দেওয়া হয়। মঙ্গলবার ফল ঘোষণা শুরু হতেই বোঝা যায়, পাহাড়ের মানুষ একেবারেই গ্রহণ করেনি ‘মহাজোটকে’।

ফল যত সামনে এসেছে, ‘মহাজোট’ কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। বিজেপি কিছু আসন, কিছু পঞ্চায়েতে জিতলেও বিমল গুরুং, অজয় এডওয়ার্ড আর মন ঘিসিংদের অবস্থা শোচনীয়। বিনয় নিজের বাড়ির এলাকার পঞ্চায়েতেই শুধু জিতেছেন। কিন্তু সেখানেও শাসকের সঙ্গে পার্থক্য একটি আসনের। সকালের পর থেকে কার্যত সাড়াশব্দ নেই জোট নেতাদের। গুরুং সন্ধ্যার সময় পাতেলেবাসের বাড়ি থেকে বার হয়ে সিংমারি দলীয় দফতরে আসেন। পঞ্চায়েত ভোটে হাতেগোনা জয়ীদের সেখানে সংবর্ধনা জানানো হয়। রাত অবধি কিছু বলেননি গুরুং। গোর্খা ন্যাশনাল লিবারেশন ফ্রন্ট (জিএনএলএফ) প্রধান মন ঘিসিং আর হামরো পার্টির সভাপতি অজয় এডওয়ার্ডের দলের ফল খারাপ হওয়ায় তাঁরা মুখে আপাতত কুলুপ এঁটেছেন। সূত্রের খবর, দলের অন্দরে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।

রাতে জোটের নেতা তথা বিজেপি সাংসদ রাজু বিস্তা বলেন, ‘‘দল এবং জোট বেশ কিছু আসন পেয়েছে। আমাদের যাঁরা জিতলেন, তাঁরা কাজ করবেন। আর যাঁরা হেরেছেন, পঞ্চায়েতে কাজের নজরদারি করবেন। সাংসদ হিসাবে আমি সবাইকে নিয়েই কাজ করব।’’ জোটের একাংশের অভিযোগ, বিজেপি জোটসঙ্গীদের বিভিন্ন এলাকার নেতানেত্রীদের নিজেদের টিকিটে দাঁড় করিয়ে দেওয়ায় জোটের মধ্যে সব চেয়ে বেশি বিজেপি প্রার্থীই মনোনয়ন পত্র জমা দেন, যা জোটের অনেকেই ভাল ভাবে নেননি। বহু জায়গায় ওই প্রার্থীদের বিরুদ্ধে জোটসঙ্গীরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। দাবি, এর জেরেই ভোট কাটাকাটির সুবিধা পেয়েছে প্রজাতান্ত্রিক মোর্চা। সাংসদ আগামী লোকসভার টিকিটের কথা মাথায় রেখেই পঞ্চায়েতে ‘স্টেজ রিহার্সাল’ করতে নেমেছিলেন বলে জোটের কিছু নেতা আড়ালে বলতে শুরু করেছেন। তাঁদের বক্তব্য, ‘মহাজোট’ রাজু বিস্তার নেতৃত্বেই হয় এবং প্রথমেই বিনয় তামাংকে এড়িয়ে যাওয়া হয়। অজয় এডওয়ার্ড এবং বিমল গুরুংকে নিয়ে বৈঠক করলেও পরে তাঁদের আর এক সঙ্গে দেখা যায়নি। কেউ যৌথসভাও করেননি। রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করতে রাজু বিস্তাই জোটেরস্থানীয় নেতাদের নিয়ে গিয়েছিলেন।

অভিযোগ, বিজেপি ভোটের আগে জোট করে ‘বড়দা’র মতো আচরণ শুরু করায় বাকিরা তা পছন্দ করেনি। আর বিজেপির টানা জোটসঙ্গী জিএনএলএফ জোটে থাকার কথা বললেও, আদতে আলাদাই ছিল। ভোটের দিন সকালে ‘ভোট অবধি জোট’ গোছের মন্তব্য করেন গুরুং। তাঁর মন্তব্য গোটা পাহাড়ে সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। নেতারা মনে করছেন, দুর্নীতিমুক্ত এবং স্বচ্ছ পঞ্চায়েত গড়া ছাড়া, পাহাড়ের মানুষকে নতুন করে কিছু দেওয়ার কথা বিজেপি বা জোট বলতে পারেনি। পাশাপাশি, আলাদা রাজ্য, পাড়ার বিষয়ে স্থায়ী ‘রাজনৈতিক সমাধান’ সংক্রান্ত আশ্বাস, ১১ জনজাতির তফসিলি উপজাতির স্বীকৃতি না মেলাও বিজেপি তথা জোটের বিপক্ষে গিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

West Bengal Panchayat Election 2023 GTA Binay Tamang Ajoy Edwards

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy