Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দু’বছর পর বীরপাড়া চা বাগান খুলল

প্রায় দু’বছর পর খুলল ডুয়ার্সের ডানকানের বীরপাড়া চা বাগান। চা বাগান খোলার আনন্দে সকাল থেকে শ্রমিকরা জমা হন চা বাগানের কারখানার সামনে। বাগানের ম্যানেজার ও কর্মীরা এসে বাগান খোলার পুজো শুরু করতেই শত শত শ্রমিক বাগান খোলার আনন্দে নিতে ঢুকে পড়েন কারখানায়।

বাগান খোলার আনন্দে কারখানায় শ্রমিকরা। — রাজকুমার মোদক

বাগান খোলার আনন্দে কারখানায় শ্রমিকরা। — রাজকুমার মোদক

নিজস্ব সংবাদদাতা
বীরপাড়া শেষ আপডেট: ২৪ নভেম্বর ২০১৬ ০২:০৯
Share: Save:

প্রায় দু’বছর পর খুলল ডুয়ার্সের ডানকানের বীরপাড়া চা বাগান। চা বাগান খোলার আনন্দে সকাল থেকে শ্রমিকরা জমা হন চা বাগানের কারখানার সামনে। বাগানের ম্যানেজার ও কর্মীরা এসে বাগান খোলার পুজো শুরু করতেই শত শত শ্রমিক বাগান খোলার আনন্দে নিতে ঢুকে পড়েন কারখানায়। পুজো হওয়ার পর, আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোহন শর্মা ও ম্যানেজার ঋষি মালহোত্রা বাগান খোলার কথা ঘোষনা করেন। বাগান খুললেও বকেয়া মজুরি এখুনি পাচ্ছে না শ্রমিকরা। তবে এ দিন শ্রমিকদের হাতে অগ্রিম এক হাজার করে টাকা দেওয়া হয়। বাগানের ম্যানেজার ঋষি মালহোত্রা বলেন, “বাগান খুলল এটাই সবচেয়ে আনন্দের ব্যাপার। আজ শ্রমিকদের এক হাজার করে টাকা দেওয়া হচ্ছে। পাতা তোলা ও অন্যান্য কাজ চলবে। তবে ফ্যাক্টরির কিছু মেরামতের জন্য চা উৎপাদন এখুনি শুরু করা যাবে না। বকেয়া মজুরির ব্যাপারে আলোচনা করে ঠিক করা হবে।”

আলিপুরদুয়ার জেলা পরিষদের সভাধিপতি মোহন শর্মা বলেন, “বীরপাড়া চা বাগান খোলায় খুব খুশি হয়েছি। আগামি মার্চ মাসের মধ্যে ডানকানের সব বাগান খুলে দেওয়া হবে। তবে আজ থেকে ডানকানের সব বাগানেই বাগান পরিচর্যার কাজ শুরু হয়ে যাবে। পরিচর্যা দেখার জন্য লোক নিয়োগ করা হয়েছে। এ ছাড়া সরকার নোট অচলের জন্য এই সপ্তাহ থেকেই আলিপুরদুয়ার জেলার সব চা বাগানেই বিনা পয়সায় রেশন চালু করছে। নোট স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত বিবা পয়সায় রেশন চালু থাকবে।” বাগানে গেটের শ্রমিকদের সামনে বাগান খোলার ঘোষণা হওয়ার পরেই বাগানবাবুদের নিয়ে বিভিন্ন সেকশনে পাতা তুলতে চলে যায় শ্রমিকরা। আজ একবেলা কাজ হলেও বৃহস্পতিবার থেকে নির্দিষ্ট সময় মেনেই কাজ চলবে বলে জানান ম্যানেজার।

২০১৪ সালের এপ্রিল মাসে বাগান ছেড়ে চলে যায় ডানকান কর্তৃপক্ষ। বীরপাড়ার বাগানের দু’টি ডিভিশনে স্থায়ী অস্থায়ী মিলিয়ে শ্রমিক সংখ্যা ২১০০। কর্তৃপক্ষ বাগান ছেড়ে যাওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই বাগানের রেশন, মজুরি অনিয়মিত ছিল। মালিক বাগান ছেড়ে যাওয়ার পর, শ্রমিকরা দিশাহারা হয়ে পড়ে। কাজের তাগিদে কেউ কেউ অন্য রাজ্যে চলে যায়। বাগানের অপুষ্টিজনিত রোগে বিনা চিকিৎসায় শ্রমিকরা মরতে শুরু করে। শ্রমিকরা বীরপাড়া বাগান ছেড়ে অস্থায়ী কাজের জন্য বিভিন্ন বাগানে বাগানে ঘুড়েন।

বাগানের পোস্ট অফিস লাইনের শ্রমিক শুকুরমনি মুন্ডা বা রমণ লাইনের রন্তু ওড়াঁও বলেন, “ আজ অবশ্যই দারুন খুশি আমরা। কিন্তু গত দু’বছরের কথা মনে পড়লে চোখে জল আসে। আমরা চাই মালিক পক্ষ এখন বাগানে মন দিক। আমরা শ্রমিকরাও ভালবেসে বাগানের চেহারা পাল্টাতে শ্রম দেব।”

বাগান খোলার দিনে নিজেদের উপস্থিতি দেখাতে ডুয়ার্সের সব চা শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা ভিড় করেন বীরপাড়া চা বাগানে। চা বাগান ইউনিয়নের সর্বভারতীয় আইএনটিইউসি নেতা মনি ডার্নাল বলেন, “বাগান খোলায় খুব খুশি হয়েছি। বাগান খোলার জন্য অনেক দৌড়ঝাঁপ করেছি। ডানকান কর্তৃপক্ষ বাগান ছেড়ে চলে যাওয়ার পর ডুয়ার্সের বিভিন্ন বাগানে প্রায় ৫০০ জন শ্রমিকরা মারা গিয়েছে। বীরপাড়া চা বাগানেই প্রায় ৯০জন শ্রমিক মারা যায়। আজ বীরপাড়া খুলল, ধাপে ধাপে সবগুলি খুলবে। আশা করি, শ্রমিকদের আর অসুবিধা হবে না। ”

তবে অন্য বাগানগুলির শ্রমিকেরা এ দিন বীরপাড়া খোলার খবরে খুশি হলেও, সামগ্রিক ভাবে সব ক’টি বাগান খোলা নিয়ে চিন্তিত। এ দিনই সাম্প্রতিক নোট বিভ্রাটে মজুরি না পেয়ে রাস্তা অবরোধও করেছেন জলপাইগুড়ির চা শ্রমিকেরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Birpara tea garden
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE