Advertisement
E-Paper

ত্রিমুখী সমস্যায় সঙ্কটে চৈত্র সেল

সন্ধ্যে নামলেই ঝড়-বৃষ্টির ভ্রূকুটি। পুরভোট নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের একাংশের ব্যস্ততা। পাড়ায় পাড়ায় মিছিল-মিটিং। ও দিকে আলুর বাজার দর না পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলের চাষিদের হাত প্রায় ফাঁকা। বাংলা নববর্ষের দেড় সপ্তাহ বাকি। অথচ এমনই ত্রিফলা সমস্যার জেরে কোচবিহারে চৈত্র সেলের বাজার জমছে না। বেশির ভাগ দোকানে ক্রেতাদের ভিড় নেই। এই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের। লাভের আশা দূরঅস্ত্।

অরিন্দম সাহা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৫ ০৩:৪৪
পসার রয়েছে। নেই ক্রেতা। চৈত্র সেলের ভরা মরসুমেও কোচবিহারের ভবানীগঞ্জ বাজারের ছবিটা এমনই। হিমাংশুরঞ্জম দেবের তোলা ছবি।

পসার রয়েছে। নেই ক্রেতা। চৈত্র সেলের ভরা মরসুমেও কোচবিহারের ভবানীগঞ্জ বাজারের ছবিটা এমনই। হিমাংশুরঞ্জম দেবের তোলা ছবি।

সন্ধ্যে নামলেই ঝড়-বৃষ্টির ভ্রূকুটি। পুরভোট নিয়ে শহরের বাসিন্দাদের একাংশের ব্যস্ততা। পাড়ায় পাড়ায় মিছিল-মিটিং। ও দিকে আলুর বাজার দর না পাওয়ায় গ্রামাঞ্চলের চাষিদের হাত প্রায় ফাঁকা।

বাংলা নববর্ষের দেড় সপ্তাহ বাকি। অথচ এমনই ত্রিফলা সমস্যার জেরে কোচবিহারে চৈত্র সেলের বাজার জমছে না। বেশির ভাগ দোকানে ক্রেতাদের ভিড় নেই।

এই পরিস্থিতিতে মাথায় হাত পড়েছে ব্যবসায়ীদের। লাভের আশা দূরঅস্ত্। পোশাকের দোকান মালিকদের একাংশ, কর্মচারিদের টাকা মেটানো নিয়ে দুশ্চিন্তার কথাও জানিয়েছেন। কোচবিহার জেলা বস্ত্র ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক উত্তম কুণ্ডু বলেন, “সাঁড়াশির মতো এই সমস্যার বেড়াজালে চৈত্র সেলের বাজারে মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। বেশির ভাগ দোকানেই ক্রেতাদের ভিড় নেই। নববর্ষের বড় জোর দশ দিন বাকি। আবহাওয়ার উন্নতি না হলে শেষ আশাটুকুও মাটি হয়ে যাবে বলে উদ্বেগ বেড়েছে। আগে এক সঙ্গে এ রকম তিন সমস্যার মুখে পড়তে হয়নি।’’

ব্যবসায়ীরা জানান, কোচবিহার শহরের সুনীতি রোড, বিশ্বসিংহ রোড, ভবানীগঞ্জ বাজার, নতুন বাজার, দেশবন্ধু মার্কেট ছাড়াও বিভিন্ন এলাকা মিলিয়ে সাড়ে তিনশোর বেশি পোশাকের দোকান রয়েছে। ফুটপাথের অস্থায়ী পোশাকের দোকানের সংখ্যা আরও অন্তত পঞ্চাশটি। তার মধ্যে বহু দোকানে চৈত্র সেল উপলক্ষে ১০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় দেওয়া হচ্ছে। ক্রেতাদের টানতে বড়সড় হোর্ডিং করে তা দোকানের সামনে টাঙানও হয়েছে। কিছু দোকানে আবার কেনাকাটার বিনিময়ে লটারির সুযোগ দিয়েও ক্রেতাদের টানার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু পসরা সাজিয়ে বসে থাকলেও ক্রেতাদের ভিড় প্রায় নেই।

কোচবিহার শহরের ভবানীগঞ্জ বাজারের একটি পোশাকের দোকানের মালিক সুকুমার দেব বলেন, “প্রায় এক সপ্তাহ ধরে সন্ধের সময় কখনও ঝড়ের মতো দমকা হাওয়া, আবার কখনও বৃষ্টির দাপট রোজকার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ওপর পুরভোট নিয়ে ব্যস্ততা, পাড়ায় পাড়ায় মিছিল-মিটিংয়ের জন্যও শহরের বাসিন্দাদের বেশির ভাগই বাজারে বেরোনর ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। গ্রামাঞ্চল থেকে আসা ক্রেতারা মূলত দিনভর বাজার জমিয়ে রাখলেও আলু চাষিরা বিপাকে থাকায় তাদেরও দেখা নেই। কী ভাবে কর্মচারিদের বেতন দেব তাই ভাবছি।”

জেলা শহরেরই শুধু নয়, প্রায় এক ছবি কোচবিহারের তুফানগঞ্জ, মাথাভাঙা ও দিনহাটা পুরসভা এলাকার বাজারেও। তুফানগঞ্জে ইতিমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক গোলমালের অভিযোগও উঠেছে। তার বেশির ভাগ হয়েছে সন্ধের পর। রাজনৈতিক চাপানউতোরে উত্তেজনার পারদ চড়ছে সর্বত্র। দিনহাটা মহকুমা ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক রানা গোস্বামী বলেন, “আলু চাষিরা ভাল দাম পাওয়ায় গত বছর নববর্ষের মুখে চৈত্র সেলের বাজার জমজমাট ছিল। শুধু পোশাক ব্যবসায়ীরা ওই মরসুমে অন্তত তিন কোটি টাকার ব্যবসা করেছেন। এ বার ১৪ এপ্রিল চৈত্রসেল শেষ হবে, অথচ সিকিভাগ টাকার ব্যবসাও হয়নি।”

কোচবিহার জেলা আলু-ধান-পাট চাষি সংগ্রাম সমিতি সূত্রের খবর, গোটা জেলার গ্রামগঞ্জে এক লক্ষাধিক চাষি আলু চাষ করেন। আলু বিক্রি করেই তাঁরা ফি বছর চৈত্র সেলের বাজারে কেনাকাটা করেন। এ বার আলুর ফলন বেশি হওয়ায় বাজারে দাম নেই। অনেকে উৎপাদন খরচটুকুও তুলতে পারেননি। হিমঘরে জায়গা না পাওয়ায় বেশির ভাগ চাষির আলু মাঠে পড়ে রয়েছে। ওই সমিতির সম্পাদক নৃপেণ কার্জি বলেন, “আলু জেলার অন্যতম অর্থকরী ফসল। লক্ষাধিক চাষির রুটিরুজি আলুর বাজার দরের ওপর নির্ভর করে। যা অবস্থা, তাতে তাঁদের সংসার চালান মুশকিল হয়ে পড়েছে। চৈত্র সেলের কেনাকাটা করার সাধ থাকলেও সাধ্য কোথায়?’’

chaitra sale coochbehar market triple problem potato crisis potato sale crisis arindam saha
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy