Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus in North Bengal

করোনা ভয় হারিয়ে জয় মাতৃস্নেহের

করোনা হলেই যে কাউকে পর করে দেওয়া নয়— সেটা বুঝিয়ে দিলেন আলিপুরদুয়ার শহরের পুরনো পুলিশ ফাঁড়ি পাড়ার মানুষজন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

পার্থ চক্রবর্তী
আলিপুরদুয়ার শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০২০ ০৮:২০
Share: Save:

দিন কয়েক আগেই করোনায় আক্রান্ত একরত্তির একটি শিশুকে মাতৃদুধের জোগান দিতে এগিয়ে এসেছিলেন অন্য মায়েরা। এ বার করোনায় আক্রান্ত হয়ে হোম আইসোলেশনে থাকা এক ছাত্রীর জন্মদিন পালন করতে ঝাঁপিয়ে পড়লেন পাড়ার লোকেরা। কোভিড হাসপাতালে ভর্তি থাকা মায়ের অভাব বুঝতে না দিয়ে প্রতিবেশী কাকিমারা ছাত্রীর কুড়িতম জন্মদিনে বানালেন পায়েস, ইলিশ ভাপা আর বিরিয়ানি। করোনা হলেই যে কাউকে পর করে দেওয়া নয়— সেটা বুঝিয়ে দিলেন আলিপুরদুয়ার শহরের পুরনো পুলিশ ফাঁড়ি পাড়ার মানুষজন।

সেখানে বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকেন জলপাইগুড়ি আইন কলেজের তৃতীয় বর্ষের ওই ছাত্রীটি। কিছুদিন আগে ছাত্রীর মা জ্বরে আক্রান্ত হন। তারপর করোনা পরীক্ষায় তিনজনেরই রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে। উপসর্গ থাকায় ছাত্রীর মা-কে তপসিখাতার কোভিড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ছাত্রী ও তাঁর বাবা হোম আইসোলেশনে থাকতে শুরু করেন। বাড়ির গেটে কনটেনমেন্ট জ়োনের পোস্টার সাঁটিয়ে দেয় স্বাস্থ্য দফতর।

ছাত্রীর কথায়, “লকডাউনের ঠিক আগে জলপাইগুড়ি থেকে আলিপুরদুয়ারে বাড়িতে ফিরে আটকে গিয়েছিলাম। তারপর দেখতে দেখতে গত রবিবার আমার জন্মদিনটাও এসে গিয়েছিল। প্রতিবারের মতো এ বছরও মা জন্মদিন নিয়ে অনেক পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। কিন্তু করোনাই সব পরিকল্পনা ভেস্তে দিয়েছিল।”

তবে ওই ছাত্রীর জন্মদিন ভেস্তে দিতে দেননি পাড়ার তিন গৃহবধূ ঐন্দ্রলা দত্ত, অরুন্ধতী চক্রবর্তী ও অমৃতা বিশ্বাস। যাঁদের প্রত্যেককে কাকিমা বলে ডাকেন ওই ছাত্রী। তাঁরাই ছাত্রীর জন্য পায়েস, ইলিশ ভাপা ও বিরিয়ানি রান্না করেন। সেইসঙ্গে গেটের বাইরে থেকেই ছাত্রীর হাতে কেক, বেলুন ও চকলেট তুলে দেন পাড়ার আরও অনেকে।

ছাত্রীটি বলেন, “কাকিমারা সমেত বাকিরাও যে এভাবে আমার জন্মদিন পালন করবেন তা ভাবতেও পারিনি। হাসপাতালের বেডে শুয়ে ফোনে এ খবর শুনে মা-ও খুশিতে কেঁদে ফেলেছিলেন।” ঐন্দ্রিলা দত্ত বলেন, “আমার ঘরেও মেয়ে রয়েছে। ও তো তার মতোই একজন। করোনা হয়েছে বলে ওর জন্মদিন পালন হবে না!”

এখানেই শেষ নয়। গত কয়েকদিন ধরে পাড়ার ছেলে অভিজিৎ দত্ত, সৌগত বসুরা প্রতিদিন সকাল-বিকাল ছাত্রীর বাড়ির সামনে ছুটে যাচ্ছেন। তাদের কী প্রয়োজন শুনে নিয়মিত তা এনে দিচ্ছেন। ছাত্রীর বাবা বলেন, “পাড়ার বাসিন্দাদের পাশাপাশি আমার বন্ধু ও পরিচিতরা যেভাবে আমাদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছেন, তা কোনওদিন ভুলতে পারবনা।”

আলিপুরদুয়ারের ডেপুটি সিএমওএইচ সুবর্ণ গোস্বামী বলেন, ‘‘পুরানো পুলিশ ফাঁড়ি এলাকার বাসিন্দারা করোনা আক্রান্ত একটি পরিবারের জন্য যা করছেন, তা অত্যন্ত প্রশংসনীয়। তাঁদের কাজ বাকিদেরও উদ্বুদ্ধ করবে।’’

(জরুরি ঘোষণা: কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের জন্য কয়েকটি বিশেষ হেল্পলাইন চালু করেছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার। এই হেল্পলাইন নম্বরগুলিতে ফোন করলে অ্যাম্বুল্যান্স বা টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত পরিষেবা নিয়ে সহায়তা মিলবে। পাশাপাশি থাকছে একটি সার্বিক হেল্পলাইন নম্বরও।

• সার্বিক হেল্পলাইন নম্বর: ১৮০০ ৩১৩ ৪৪৪ ২২২
• টেলিমেডিসিন সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-২৩৫৭৬০০১
• কোভিড-১৯ আক্রান্তদের অ্যাম্বুল্যান্স পরিষেবা সংক্রান্ত হেল্পলাইন নম্বর: ০৩৩-৪০৯০২৯২৯)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus in North Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE