কেউ হাতে কিছু ঢেঁকি শাক নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে। কারও হাতে সামান্য কিছু মাছ। সামনে দাঁড়িয়ে একগাল ফিক করে হেসে বলে, “নেবেন না কি শাক। দশ টাকায় আমি পাঁচ আঁটি দেব।” বাড়ি কোথায়? বলল, “চিনবেন না, এখান থেকে অনেকটা দূর।” মাছ বাজারে গেলেও চোখে পড়ে ওই বয়সের কিশোরদের। দিনে ৫০ থেকে ৬০ টাকা আয় করে পকেটে নিয়ে যারা বাড়ির পথে হাঁটা দেয়।
লকডাউনে স্কুল বন্ধ। কোচবিহারে শিশু-কিশোরদের অনেকেই পড়াশোনার পাট চুকিয়ে দিয়ে এমন ভাবেই শ্রমিকের কাজে নেমেছে। তাদের কারও কারও কথায়, “সংসারে টানাটানি চলছে। কী আর করব।” আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই লকডাউনে স্কুলছুটের সংখ্যা অনেকটাই বেড়ে যেতে পারে এই জেলায়। এমনকি, গোটা রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায়। শিশুশ্রমিকদের নিয়ে বেশ কয়েকটি স্কুল চালাত কোচবিহারের একটি বেসরকারি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তার সম্পাদক মইনুল হক বলেন, “চারদিকে যা দেখছি তাতে শিশু শ্রমিকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার একটা আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। বাড়তে পারে স্কুলছুট। আমরা খুব শীঘ্রই একটি সমীক্ষা করব।”
পাঁচ মাসে ঠিক কী অবস্থা হয়েছে কোচবিহারের মতো একটি প্রত্যন্ত এলাকার ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার? শিক্ষা দফতর সূত্রেই জানা গিয়েছে, পঞ্চম, অষ্টম এবং দশম শ্রেণিতে প্রত্যেক বছর স্কুলছুট হত বহু ছাত্রছাত্রী। সেই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতেই স্কুলে স্কুলে মিড-ডে মিল শুরু হয়। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মীরাও বাড়ি বাড়ি ঘুরে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ বাড়ানোর চেষ্টায় নামেন। তাতে স্কুলছুটের অনেকটাই কমতে শুরু করে। লকডাউনে এ বারে পরিস্থিতি একেবারেই অন্যরকম হয়ে উঠেছে।