সমব্যথী: অসহায়ের পাশে সুমি দাস। কোচবিহারে। নিজস্ব চিত্র।
এ বারেও সময় নেই সুমির হাতে। ফোন ঘন ঘন বেজে চলেছে। কখনও ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটসঅ্যাপেও ফোন আসছে। ওপাশ থেকে কেউ বলছেন, “খাবারের খুব কষ্ট হচ্ছে। যদি একটু সাহায্য করতেন।” কেউ বলেছেন, “একটু স্যানিটাইজার, মাস্ক যদি পাঠাতে পারতেন।” ছোট্ট ডায়েরিতে ঠিকানা লিখে রাখছেন সুমি দাস। এক-দু’দিনের মধ্যেই সেই ঠিকানায় পৌঁছে যায় ‘সুমির কিট’। কোচবিহার শহরের কাছে ঘুঘুমারিতে সুমির ভাড়া বাড়ি। তিনি তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ। তাই আর পাঁচ জনের থেকে তাঁর লড়াই অনেক কঠিন। সুমির কথায়, “শুধু আমি নই, আমার মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের বেঁচে থাকা বড় কষ্টের। করোনা কালে তা আরও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। অবশ্য অনেকে রয়েছেন আমাদের সঙ্গে। আমি চেষ্টা করছি দুর্গতদের সবার কাছে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পৌঁছে দেওয়ার।’’
আদতে দিনহাটার বাসিন্দা সুমি। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হওয়ায় দিনরাত নানা ‘কটূক্তি’ শুনতে হত তাঁকে। তাচ্ছিল্য করতেন পথচলতি মানুষ। সেই থেকেই লড়াইয়ের মানসিকতা নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েন। তার পরে ‘কঠিন’ সময়ের মধ্যে দিয়ে গিয়েছে তাঁর জীবন। কখনও রাতে শোওয়ার জায়গা পাননি, কখনও অভুক্ত কাটিয়েছেন। সেই সুমি একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা তৈরি করে নিজেদের দাবি আদায়ে ময়দানে নেমে পড়েন। তাঁর লড়াইয়ের কথা কোচবিহার শহর ছাড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ে অনেক দূর।
গত বছর লকডাউনের সময় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন সুমি। চাল-ডাল-তেল-নুন তুলে দিয়েছিলেন গরিব পরিবারের হাতে। এ বারেও করোনার প্রকোপ বাড়তেই মাঠে নেমে পড়ে ‘টিম সুমি’। শিলিগুড়ি-আলিপুরদুয়ার-কোচবিহার থেকে শুরু করে গোটা উত্তরবঙ্গেই নিজেদের কাজের পরিসর ছড়িয়ে দিয়েছেন।
সুমি জানান, প্রথম কয়েক দিন মেডিক্যাল কিট বিলি করেছেন তাঁরা। সেখানে স্যানিটাইজার, মাস্ক, ডেটলের সঙ্গে দেওয়া হয় ভিটামিন ‘সি’ ও ‘ডি’ ট্যাবলেট। এর পরে খাদ্যসামগ্রী বিলি শুরু করেন তাঁরা। চাল-ডাল-তেল-নুন-সয়াবিনের প্যকেট তুলে দেওয়া বাসিন্দাদের হাতে।
শিলিগুড়িতে তৃতীয় লিঙ্গের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা রয়েছেন। তাঁরা বিহারে নাচের দলে ছিলেন। লকডাউনে সেখানে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁরা এখন বাড়িতে রয়েছেন। তাঁদের একজন অভাবের কথা জানান সুমির কাছে। তাঁদের প্রত্যেককে সাহায্য করেন তিনি। কোচবিহারে গোসানিমারিতে একজন বিউটিসিয়ানের কাজ করেন। তাঁর কাজও আপাতত বন্ধ। তাঁকেও খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন সুমি। তিনি জানান, সব মিলিয়ে ২৭০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে সহযোগিতা করেছেন। সুমির কথায়, “এখন আমরা অনেকে একসঙ্গে হয়েছি। সব জেলাতেই আমাদের সদস্যরা রয়েছেন। অসহায় মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছি। কোভিডবিধি মেনে চলতে সবার কাছে আবেদন করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy