‘‘ছেলেমেয়েগুলো সকাল হলেই খাওয়ার জন্য কান্নাকাটি করে। তাই সকাল হলেই পাটের জমিতে গিয়ে শাকপাতা জোগাড় করি। চুরি করে আম নিয়ে আসি, সেদ্ধ করে দিই। কতবার ব্লকে, পঞ্চায়েতে সাহায্যের জন্য গিয়েছি। সবাই ফিরিয়ে দিয়েছে। লকডাউন কবে উঠবে জানি না, কী করব আমরা’’—এক নিঃশ্বাসে কথাগুলো বলে থামলেন রীতা দাস। তার পর তাঁর উদাস দৃষ্টিতে ফের দুঃশ্চিন্তার কালোমেঘ। যদিও ঢিল ছোড়া দূরত্বেই বিডিও অফিস। ‘‘সাহায্য পাননি?’’ প্রশ্ন করায় জানালেন, রেশন পেয়েছিলেন, কিন্তু শেষ হয়ে গিয়েছে, ব্যস ওইটুকুই।
রীতা হরিশ্চন্দ্রপুরের খন্তা তিওড়পাড়ার বাসিন্দা। বাড়ির সামনে রাস্তায় উঠলেই বিডিও অফিস দেখা যায়। কিন্তু অভিযোগ, কাছেই প্রশাসনের কর্তারা থাকলেও রীতার মতোই অনটনে দিন কাটছে তিওড়পাড়ার বহু বাসিন্দার। অধিকাংশই দিনমজুর। সবারই কাজ বন্ধ। তার পরেও পঞ্চায়েত-প্রশাসনের তরফে সাহায্য করা হয়নি বলে জানালেন তাঁরা।
চাঁচলের মহকুমাশাসক সব্যসাচী রায় বলেন, ‘‘প্রশাসনের তরফে অনেককেই সাহায্য করা হচ্ছে। বিডিওকে ব্যবস্থা নিতে বলছি।’’
বারদুয়ারিতে হরিশ্চন্দ্রপুর ২ বিডিও অফিসের অদূরে মালিওর বাঁধের পাশে বসবাস শতাধিক পরিবারের। ঘরদোর বলতে ভাঙাচোরা মাটি বা বেড়ার বাড়ি। অভিযোগ, বাসিন্দাদের অধিকাংশই সরকারি সুযোগ বা বিধবা-বার্ধক্য ভাতাও পাননি। অথচ কাছেই বিডিও অফিস, পঞ্চায়েত দফতর।
খন্তা তিওড়পাড়ার বাসিন্দাদের যে ত্রাণ দেওয়া হয়নি তা মেনে নিয়েছেন সুলতাননগর পঞ্চায়েতের প্রধান ওয়াহেদা খাতুনও। তিনি বলেন, ‘‘ওখানে এখনও দিইনি। তবে দ্রুতই ত্রাণ বিলি করা হবে।’’
রীতার প্রতিবেশী বেবি পরিহারের স্বামী তপন সিভিক ভলান্টিয়ার। মালদহে আবার সিভিক কর্মীদের দু’টো প্যানেল থাকায় ছ’মাস করে কাজ মেলে। তপনের আপাতত কাজ নেই। যখন কাজ থাকে না তখন তিনি দিনমজুরি করেন। বাড়িতে দুই নাবালক ছেলেমেয়ে ছাড়াও মা রয়েছেন। একাধিক বার আবেদন করেও বিধবা ভাতা মেলেনি। তাঁদেরই প্রতিবেশী ফণী পরিহার বলেন, ‘‘অসুস্থ হওয়ায় কাজ করতে পারি না। দুই ছেলে ভিন্রাজ্যে আটকে। তাঁদের পৃথক সংসার, আমাকে দেখে না।’’ প্রশাসনের কাছে তাঁর আর্জি, ‘‘সাহায্য না পেলে এ বার না খেয়ে মরতে হবে।’’
হরিশ্চন্দ্রপুর ২ ব্লকের বিডিও প্রীতম সাহা বলেন, ‘‘বেশ কিছু পরিবারকে সাহায্য করা হয়েছে। যাঁরা পাননি তাঁদেরও দেওয়া হবে।’’