জঙ্গলঘেরা এলাকায় হাতির হামলা প্রায় নিত্য দিনের ঘটনা। বুনোদের তাণ্ডব থেকে ফসল বাঁচাতে গিয়ে নাজেহাল চাষিরা। হাতির খাদ্য তালিকায় রয়েছে, এমন কোনও ফসলই চাষ করে ঘরে তুলতে পারেন না কৃষকেরা। তাই কয়েক’শো বিঘা জমিতে সর্ষে চাষ করছেন কালচিনি ব্লকের জলদাপাড়া ও বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে ঘেরা এলাকার বাসিন্দারা। কৃষকেরা জানিয়েছেন, সর্ষে খেতে প্রচুর মৌমাছি ঘুরে বেড়ায়। তাই, হাতিরা খেতমুখো হতে ভয় পায়। ফলে খেতের ফসল বাঁচাতে বিশেষ বেগ পেতে হয় না কৃষকদের। হস্তী বিশেষজ্ঞ পার্বতী বড়ুয়াও বলেন, ‘‘হাতি অন্যান্য ফসল খেলেও, সর্ষে তার পছন্দের খাদ্য তালিকায় পড়ে না।। ফলে সর্ষে চাষ করলে হাতির হানার সম্ভাবনা কম।’’
আলিপুরদুয়ার জেলা উদ্যানপালন দফতরের এক আধিকারিক দীপক সরকার বলেন, ‘‘মৌমাছিকে বরাবরই ভয় পায় হাতি। কারণ, মৌমাছিরা এক জোট হয়ে হামলা করে। মৌমাছির ঝাঁক এগিয়ে এলে হাতি ভয় পেয়ে পিছু হটে যায়। এই কারণে জঙ্গলকেন্দ্রিক বিভিন্ন এলাকায় আমরা কৃষকদের মৌমাছি পালনেও প্রশিক্ষণ দিচ্ছি।’’
স্থানীয় কৃষকেরা জানিয়েছেন, লোকালয়ে বন্যপ্রাণীর তাণ্ডবের কারণে অন্য ফসল চাষে আগ্রহ নেই কৃষকদের। তার বদলে প্রতি বছর কালচিনি ব্লকে সর্ষে চাষের জমির পরিমাণ বাড়ছে বলে দাবি। এ বিষয়ে মেন্দাবাড়ি এলাকার এক কৃষক সন্দীপ কার্যী বলেন, ‘‘মূলত এই এলাকার কৃষকেরা ধান চাষ করার পরে বছরের বাকি সময় কৃষিজমি খালি পড়ে থাকত। এখন এলাকার কয়েক’শো বিঘা জমিতে সর্ষে চাষ হচ্ছে। বন্যজন্তুর জ্বালায় গৃহপালিত পশুগুলিকে বাঁচাতে পারি না। বিকল্প আয় হিসেবে তাই সরষে চাষকে বেছে নিয়েছি। এ বছর আমি ছাড়াও অনেক কৃষক সরষে চাষ করছে এবং লাভের মুখ দেখেছে।’’
আর এক কৃষক নবুল ঠাকুর বলেন, ‘‘এখন অনেকেই সরষে চাষ করছেন এবং লাভবানও হচ্ছেন। সর্ষে খেতের পাশে বনভোজন করতে আসছেন অনেকে। সেখানে ছবি তোলার জন্যও পর্যটকদেরভিড় বাড়ছে।’’
কৃষি দফতর জানিয়ে, সর্ষে মূলত হাতির খাদ্য তালিকায় না থাকায় তা হাতি নষ্ট করে না। এ বিষয়ে জেলা উপ কৃষি অধিকর্তা (প্রশাসন) নিখিল মণ্ডল বলেন, ‘‘সর্ষে ফুলে সব সময়ে মৌমাছি ঘুরে বেড়ায়। ফলে হাতি তা নষ্ট করে না। এ ছাড়া আদা, হলুদও হাতির খাদ্য নয়। তাই জঙ্গল ঘেরা এলাকার কৃষকদের এই সব চাষে আরও উৎসাহ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’’
এই খবরটি পড়ার জন্য সাবস্ক্রাইব করুন
5,148
1,999
429
169
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)