Advertisement
১১ মে ২০২৪
NCPCR

তিলজলার পর উত্তপ্ত গাজোলও! কেন্দ্র, রাজ্যের দুই শিশু কমিশনের তরজা, তৃণমূল-বিজেপি মারপিট

কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগোকে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে ঘটনাস্থলেই ধর্নায় বসেছিলেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা।

Fight started between TMC and BJP supporters Malda’s gazole in front of NCPCR and WBCPCR officers.

নির্যাতিতার বাড়ির সামনে রাজ্যের শাসক এবং বিরোধী দলের মধ্যে হাতাহাতিতে রণক্ষেত্রে পরিণত হল এলাকা। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
গাজোল শেষ আপডেট: ০১ এপ্রিল ২০২৩ ১১:৩৬
Share: Save:

ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে শনিবার সকালে গিয়ে তরজায় জড়িয়েছিলেন কেন্দ্র এবং রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের আধিকারিকরা। এ বার সেই ঘটনার জেরেই নির্যাতিতার বাড়ির সামনে রাজ্যের শাসক এবং বিরোধী দলের মধ্যে হাতাহাতিতে রণক্ষেত্রে পরিণত হল এলাকা।

কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগোকে নির্যাতিতা ছাত্রীর বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না বলে ঘটনাস্থলেই ধর্নায় বসেছিলেন বিজেপির নেতা-কর্মীরা। উপস্থিত ছিলেন ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী এবং উত্তর মালদা মহিলা সমিতির সভানেত্রী ছন্দা চৌধুরী। পাশাপাশি রাজ্যের প্রতিনিধি দলের বিরুদ্ধে স্লোগান দেওয়া শুরু করেন বিজেপি কর্মী-সমর্থকেরা। সেই খবর পেয়ে সদলবলে ঘটনাস্থলে পৌঁছন তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য সাগরিকা সরকার। তিনি সেখানে পৌঁছনোর পর দু’পক্ষের মধ্যে মারামারি শুরু হয়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সাগরিকা-সহ তৃণমূলের সদস্যেরা যখন সেখানে পৌঁছন, তখন কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষার দল নির্যাতিতার বাড়ির ভিতরে ঢুকেছিল। তত ক্ষণে বেরিয়ে এসেছিলেন রাজ্যের শিশু সুরক্ষার কমিশনের প্রতিনিধিরা। অভিযোগ, এই পরিস্থিতিতে বিজেপি কর্মী-সমর্থকদের দিকে সদলবলে ঝাঁপিয়ে পড়েন সাগরিকা। দু’পক্ষই একে অপরের দিকে কিল-চড়-ঘুষি চালাতে থাকে। জুতো হাতে নিয়ে বিজেপি কর্মীদের শাসাতেও দেখা যায় সাগরিকাকে। তবে পুলিশি মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। বিনা প্ররোচনায় প্রথম ঝামেলার সূত্রপাত করার অভিযোগে সাগরিকাকে বাঁশ দিয়ে তাড়াও করতে দেখা যায় গ্রামবাসীদের। পুলিশের সঙ্গেও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয় স্থানীয়দের। স্থানীয়রা তাড়া করায় ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যান সাগরিকা। যদিও স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের তরফে বিনা প্ররোচনায় গন্ডগোল পাকানোর অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, শনিবার সকালে গাজোলে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তরজায় জড়ান কেন্দ্রীয় শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান প্রিয়ঙ্ক কানুনগো এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুদেষ্ণা রায়। নির্যাতিতার বাড়ির বাইরেই বাগ্‌বিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়েন তাঁরা। শনিবার কেন্দ্রীয় কমিশনের সমর্থনে আওয়াজ তুলে ঘটনাস্থলে পৌঁছে ধর্নায় বসেন ইংরেজবাজারের বিজেপি বিধায়ক শ্রীরূপাও।

কয়েক দিন আগেই মালদার গাজোলে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীকে স্কুলের মধ্যেই ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছিল। সেই নিয়েই তদন্ত করতে শনিবার সকালে নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যাওয়ার কথা ছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের। কিন্তু তার প্রায় আধ ঘণ্টা আগেই সেখানে পৌঁছয় রাজ্যের প্রতিনিধি দল।

অভিযোগ, নির্যাতিতার বাড়ির সামনে পৌঁছে সুদেষ্ণা এবং রাজ্য কমিশনের বাকিদের ‘গেট আউট’ বলে বাইরে বেরিয়ে যেতে বলেন প্রিয়ঙ্ক। নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে চান বলেও তিনি জানান। কেন ঘটনার ১০ দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর রাজ্যের দল সেখানে এসেছেন, সেই প্রশ্নও তোলেন প্রিয়ঙ্ক। তিনি জানান, রাজ্যের দল যত ক্ষণ না বাইরে বেরোচ্ছেন, তত ক্ষণ তিনি বাড়ির ভিতরে ঢুকবেন না। অন্য দিকে, সুদেষ্ণার দাবি, এই বিষয়ে রাজ্য এবং কেন্দ্রের কমিশনের এক সঙ্গে কাজ করার কথা থাকলেও বার বার বাধা সৃষ্টি করছেন কেন্দ্রীয় দলের সদস্যরা।

প্রিয়ঙ্ক বলেন, ‘‘শুক্রবারের পর শনিবারও কেন্দ্রীয় কমিশনের কাজে বাধা দিচ্ছে রাজ্য। নির্যাতিতা এবং তাঁর পরিবারের সঙ্গে আলাদা করে কথা বলতে দেওয়া হচ্ছে না। রাজ্যের মুখ্য সচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিব চান না যে নিরপেক্ষ ভাবে তদন্ত হোক। এখান থেকে কুড়ি কিলোমিটার দূরে শিশু কল্যাণ সমিতির অফিস রয়েছে। কিন্তু ওরা এসেছেন ১০ দিন পর। কিছু না কিছু লুকানো হচ্ছে। বাংলার কথা দিল্লি পর্যন্ত যাতে না পৌঁছয় তাই বাধা দেওয়া হচ্ছে। কাল তিলজলাতেও একই জিনিস হয়েছে। আমাদের ঢুকতে না দেওয়া পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করব।’’

অন্য দিকে, সুদেষ্ণার কথায়, ‘‘আমরা আমাদের কাজ ঠিকই করছি। তদন্তের রিপোর্ট পেয়ে সেই রিপোর্টের সত্যাসত্য সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে এসেছি। আমি ওঁদের বিরুদ্ধে কিছু বলছি না। কিন্তু যা করছেন সেটা ঠিক করছেন না ওঁরা। আমি কাউকে বাধা দিইনি। রাজ্য-কেন্দ্র এক সঙ্গে কাজ করার কথা। কিন্তু কেন্দ্রীয় কমিশনের চেয়ারম্যান অভব্য আচরণ করছেন। আমাকে ‘গেট আউট’ বলে বেরিয়ে যেতে বলছেন। কালকেও একই জিনিস করেছেন উনি। এটা তো হতে পারে না।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘অভিযুক্ত তিন জনকেই গ্রেফতার করা হয়েছে। ওর যা অবস্থা, ওকে আর প্রশ্ন করা যাবে না। ও এমনিতেই মানসিক যন্ত্রণায় ভুগছে। আর সেই কারণেই আমি বাইরে বসে রয়েছি। বার বার এ রকম এক জন নির্যাতিতাকে ঘটনার বিবরণ করতে বলা কি ঠিক?’’ পাশাপাশি বিজেপি বিধায়কের ঘটনাস্থলে থাকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সুদেষ্ণা।

তবে এর কিছু ক্ষণ পর নির্যাতিতার বাড়ি থেকে বাইরে বেরিয়ে যান সুদেষ্ণা এবং রাজ্য শিশু সুরক্ষা কমিশনের বাকি আধিকারিকেরা। কথা বলতে ভিতরে ঢোকেন কেন্দ্রীয় দল। সেই সময়ই মারামারি বাধে তৃণমূল এবং বিজেপি কর্মীসমর্থকদের মধ্যে।

প্রসঙ্গত, শুক্রবার তিলজলায় মৃত শিশুর বাড়ির সামনে একই ভাবে তরজায় জড়িয়েছিলেন কেন্দ্র এবং রাজ্যের শিশু সুরক্ষা কমিশনের আধিকারিকরা। সেখানেও সুদেষ্ণার বিরুদ্ধে কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনেন প্রিয়ঙ্ক। পাল্টা সুদেষ্ণার অভিযোগ ছিল, প্রিয়ঙ্ক অভব্য আচরণ করছেন এবং শিশুর পরিবারকে উসকানি দিচ্ছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

NCPCR WBCPCR TMC-BJP Conflicts Fight
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE