Advertisement
০৭ মে ২০২৪
ষষ্ঠীর বাজারে আগুন

ইরাবতীর ইলিশ ১৬০০ থেকে শুরু

জামাইয়ের পাতে ভাল মাছের দাবি পূরণ করতে গিয়ে ‘পথের দাবি’র কথা মনে পড়ে যাচ্ছে শিলিগুড়ির উত্তরাঞ্চলের প্রৌঢ় শিক্ষকের।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

অঙ্কন: ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্য।

কিশোর সাহা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০২:২৬
Share: Save:

জামাইয়ের পাতে ভাল মাছের দাবি পূরণ করতে গিয়ে ‘পথের দাবি’র কথা মনে পড়ে যাচ্ছে শিলিগুড়ির উত্তরাঞ্চলের প্রৌঢ় শিক্ষকের।

হবে না কেন?

কোথায় শিলিগুড়ি! আর কোথায় সেই পথের দাবির বিবরণের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা রেঙ্গুন (এখনকার ইয়াঙ্গুন)? ফারাক তো প্রায় আড়াই হাজার কিলোমিটারের। তাতে কী! জামাইষষ্ঠীর প্রাক্কালে মাছের দুনিয়া কাঁপাতে শিলিগুড়িতে হাজির সেই রেঙ্গুন ছুঁয়ে বয়ে যাওয়া ইরাবতীর স্বাদু ইলিশ।

পথের দাবির সেই বিবরণ এখনও মনে পড়ে যায়, ইরাবতী নদীর প্রকাণ্ড স্টিমার তীরে ভি়ড়বার চেষ্টা করছিল। পাঁচ-সাত জন পুলিশকর্মী আগে থেকেই সেখানে দাঁড়িয়েছিল। তাদের চোখের ইঙ্গিত থেকে অপূর্ব বুঝতে পারে, তারা পুলিশের লোক। সেই ইরাবতীর মাছ ইলিশ।

মাছ বিক্রেতার হাঁক, ‘‘কোলাঘাট ফেল, গঙ্গায়-পদ্মায় মিলচে কম, এখন ইরাবতীই ইলিশের সব পদের স্বাদ মেটাতে হাজির।’’ বৃহস্পতিবার সকালে তা শুনে চোখ কচলে ইসলামপুরের অবসরপ্রাপ্ত কলেজ শিক্ষককে বলতে শোনা গেল, ‘‘ইলিশের জন্যই সাত সকালে শিলিগুড়ি এসেছিলাম। পাইকারি বাজার থেকেই কিনলাম। কোথায় সেই রেঙ্গুন, ইরাবতী নদী। সেখানকার ইলিশ এখন আমার হাতে। জামাইষষ্ঠীর মাছের দাবির দৌলতে আরেকবার পথের দাবির স্মৃতি মনে পড়ে গেল।’’ যা শুনে পাশ থেকে শিলিগুড়ির এক প্রবীণ চিকিৎসকের সংযোজন, ‘‘আর ১০টা বছর গেলেই ‘পথের দাবি’ প্রকাশের ১০০ বছর হবে। সেই ১৯২৬-এ লেখা বইয়ের বিবরণ যেন চোখের সামনে আজও ভাসে।’’

বস্তুত, কোলাঘাট কিংবা ডায়মন্ডহারবারের চেয়ে এখন জামাইষষ্ঠীর বাজারে উত্তরবঙ্গে বেশি প্রাসঙ্গিক যেন ইরাবতী নদীটিই। কারণ, মাছের দুনিয়ার তাবড় ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, জামাইষষ্ঠীর জন্য কলকাতায় যে ঢাউস কন্টেনার ইরাবতীর হিমায়িত ইলিশ নিয়ে পৌঁছেছে তার একাংশ উত্তরবঙ্গে আনা হয়েছে। শিলিগুড়ির চম্পাসারির পাইকারি বাজারে সেই ইলিশের ছড়াছড়ি। ইতিউতি অন্য জায়গার ইলিশ যে নেই, তা নয়। পাইকারি বাজারের অন্যতম ব্যবসায়ী সুমিত আনেজা বললেন, ‘‘এখন টাটকা ইলিশ পাওয়া মুশকিল। ইরাবতীর হিমায়িত ইলিশই ভরসা। আকারে প্রায় সওয়া কেজি। স্বাদও ভাল।’’ আর দাম! তা শোনার পরে অবশ্যই মধ্যবিত্ত বাঙালির কানে আগুনের হলকা লাগার কথা।

কোথাও ১৬০০ টাকা কেজি। আবার কোথাও ২০০০ টাকাও দর পৌঁছেছে। আজ, শুক্রবার সেই দর আরও চড়তেও পারে। জলপাইগুড়ির মাছের আড়তদারদের সংগঠনের তরফে মিঠু শাহও মানছেন, ‘‘এখন বাজারে যে ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, তার বেশির ভাগই ইরাবতী নদীর। তবে কোনটা ইরাবতীর কোনটা পদ্মার, সেটা ইলিশের সমঝদার ছাড়া বুঝতে পারবেন না।’’

তবে ইলিশ হাতে নিলেই বুঝতে পারেন, এমন বুঝদার মানুষও কম নেই। যেমন, দিনহাটার বাসিন্দা প্রাক্তন কংগ্রেস বিধায়ক কেশব রায়। তিনি বলেন, “ইলিশ হাতে নিলেই বুঝতে পারি তার বৃত্তান্ত।’’ হেসে যোগ করেন তিনি, ‘‘ভাল জামাইয়ের জন্য ভাল ইলিশ তো খুঁজতেই হবে।’’ তৃণমূলের মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির কোচবিহার জেলা সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ও ঘ্রাণেই আসল ইলিশ কি না, বুঝতে পারেন। তাঁর মন্তব্য, ‘‘শাশুড়ি-মাকে বলে দিয়েছি, মেনুতে আসল ইলিশই দেখতে চাইছি। তবে এটা রসিকতাই। আন্তরিকতা থাকলে মাছ বা মেনু বড় হয়ে ওঠে না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Hilsa Fish
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE