চলছে পাহাড় কাটা। নিজস্ব চিত্র
মিরিক শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে পাহাড়ের কোলে আঁকা-বাঁকা রাস্তা আর চা বাগান ঘেরা ছবির মত একটি জনপদ। দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক যার টানে বারবার ছুটে আসেন মিরিকে। প্রাকৃতিক সম্পদের উপর এখানকার অর্থনীতির প্রায় পুরোটাই নির্ভর করে। তা সত্ত্বেও নির্বিচারে সেই সম্পদ নষ্ট করার অভিযোগ উঠছে স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের উপর। একটি চক্র মোটা টাকার বিনিময়ে অবৈজ্ঞানিকভাবে মিরিকের যেখানে সেখানে পাহাড় কেটে বাড়ি, দোকান তৈরি করছে বলে অভিযোগ।
নিয়ম বলছে পাহাড় কাটতে হলে প্রশাসনিক প্রক্রিয়া মেনে অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক। সেই অনুমতি ছাড়াই দেদারে পাহাড় ও গাছ কাটা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন দার্জিলিং জেলা প্রশাসনের একাধিক আধিকারিক। এই ঘটনায় বড়সড় প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন পরিবেশকর্মীদের একাংশ। পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ মিরিক লেক। গবেষকদের মতে দেদারে পাহাড় কাটায় বেশি পরিমাণ মাটি ধুয়ে জমতে পারে লেকে। তার জেরে গভীরতা কমে লেকে জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি হতে পারে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের।
ভূমি সংস্কার আইন বিশেষজ্ঞ ও মিরিকের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট মৃদুল শ্রীমানি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত মালিকানার জমি হলেও কেউ নিজের খেয়ালখুশি মতো পাহাড় কাটতে পারেন না। শুধু প্রশাসনিক স্তরে অনুমতি নিতে হবে তাই নয়, বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে পরিস্থিতি যাচাই করতে হবে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে আইন ভেঙে পাহাড় কাটা হচ্ছে।’’ যথেচ্ছভাবে পাহাড় কাটলে কী ক্ষতি হতে পারে ? গবেষক তপন মিশ্রের মতে, সেক্ষেত্রে পাহাড়ের প্রাকৃতিক ঢাল নষ্ট হয়ে জলের স্রোতের দিক পাল্টে যেতে পারে, যার প্রভাবে হতে পারে ধস। পাশাপাশি গাছ কাটায় মাটি আলগা হয়েও বাড়তে পারে ধস। তপন বলেন, ‘‘প্রয়োজনে পাহাড় কাটতে হলে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ও পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা দরকার।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুধু মিরিক লেকের আশেপাশেই শেষ ছ’মাসে পাহাড় কেটে ৭০টিরও বেশি বাড়ি, দোকান তৈরি হয়েছে। মিরিক পুরসভার চেয়ারম্যান লাল বাহাদুর রাই বলেন, ‘‘যেখানে সেখানে পাহাড় কাটা বন্ধ করতে আমাদের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক প্রচার চালান হচ্ছে।’’ জিটিএর চেয়ারম্যান অনীত থাপা বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হতে পারে এমন কোনও কাজ করা উচিত নয়। আইন ভেঙে কাজ হলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy