Advertisement
E-Paper

বন্ধ হাট নিয়ে প্রচার বামেদের

কিসানমান্ডি চালু করতে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থানার তিওড় এলাকায় বহু পুরনো আমলের একটি চালু হাট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভোট প্রচারে সরব হয়েছে বামফ্রন্ট।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০৯
বন্ধ হওয়া হাটের বাইরে বসে বাজার।—নিজস্ব চিত্র

বন্ধ হওয়া হাটের বাইরে বসে বাজার।—নিজস্ব চিত্র

কিসানমান্ডি চালু করতে দক্ষিণ দিনাজপুরের হিলি থানার তিওড় এলাকায় বহু পুরনো আমলের একটি চালু হাট বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে ভোট প্রচারে সরব হয়েছে বামফ্রন্ট। পাল্টা প্রচারে উন্নয়নকে হাতিয়ার করে আসরে নেমেছে তৃণমূল। ফলে বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের হিলি ব্লকের তিওড় এলাকায় হাটকে ঘিরে ভোটের রাজনীতি আবর্তিত হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় সরকারের সীমান্ত এলাকা উন্নয়ন তহবিলের টাকায় ১৯৯৭ সালে নতুন করে কংক্রিটের ঘর, চাতাল ও টিনের বড় শেড এবং মুক্তমঞ্চের ব্যবস্থা করে ওই হাটটি গড়ে তোলা হয়েছিল। তিওড় এলাকার প্রাণকেন্দ্রে মূল বাজার বলে পরিচিত ওই হাটটি সম্প্রতি ব্লক প্রশাসন ও পঞ্চায়েত থেকে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। এতে বিপাকে পড়ে ওই হাটের একাংশ ব্যবসায়ী প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, গত মাসে পুলিশের সাহায্যে ওই হাটকে চার দিকে টিন দিয়ে ঘিরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাতে হাটকে কেন্দ্র করে রোজকার বেচাকেনা বন্ধ হয়ে ছোট দোকান ও ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়েছেন বলে অভিযোগ।

ইতিমধ্যে হাটের চারদিকে টিন দিয়ে ঘিরে দেওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদে নামলে এলাকার মোট ৬ জনকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। পরে আদালত থেকে তাঁরা জামিনে ছাড়া পান। ওই হাট চালুর দাবিতে জেলা বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে তিওড়ে পথসভা ও প্রতিবাদ মিছিল করে আন্দোলন হয়েছে। লিফলেট বিলি করে জনমত সংগ্রহ শুরু করেছেন বাম নেতারা। এলাকার বিদায়ী বিধায়ক তথা এবারের তৃণমূল প্রার্থী শঙ্কর চক্রবর্তী বলেন, ‘‘হাট বন্ধের বিষয়টি পঞ্চায়েত ও প্রশাসনের সিদ্ধান্ত। সাময়িক ভাবে হাটটি বন্ধ করে পরবর্তীতে সেখানে বড় প্রকল্প গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বড় কোনও কাজের জন্য সাময়িক স্বার্থত্যাগ করতে হয়। ভোটের জন্য এলাকার মানুষকে ভুল বোঝানোর চেষ্টা হচ্ছে।’’

আরএসপির জেলা সম্পাদক তথা এবারের এই কেন্দ্রের জোট প্রার্থী বিশ্বনাথ চৌধুরী এবং সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণ বিশ্বাস হাট থেকে উচ্ছেদ হয়ে পড়া ব্যবসায়ীদের পক্ষ নিয়ে তিওড়ে এক দফা প্রচার করে গিয়েছেন। এখন ভোট প্রচারে ওই হাট-ইস্যুকে তুলে ধরে ওই এলাকায় বিরোধী এবং শাসক দলের ভোটের প্রচার জমে উঠেছে। বামনেতা তথা বালুরঘাট বিধানসভা কেন্দ্রের প্রার্থী বিশ্বনাথবাবু অভিযোগ করেন, ‘‘কেন্দ্রের আর্থিক সহায়তায় গড়ে ওঠা সরকারি নথিভুক্ত তিওড় হাটকে কোনওভাবেই বন্ধ করা যায় না। ব্রিটিশ আমলে হাটটির সূচনা হয়। ১৯৮২ সালে তৎকালীন হিলি পঞ্চায়েত সমিতি প্রায় ৬৩ শতক জায়গা কিনে হাটের পূর্ণ রূপ দিয়েছিল। এরপর স্থানীয় বসিন্দাদের চাহিদা মেনে ১৯৯৭ সালের ১২ মে কেন্দ্রের টাকায় কংক্রিটের হাট চত্বর ও দোকান শেড গড়ে ওঠে। তা ছাড়া, পাইকারি ব্যবসার উদ্দেশ্য নিয়ে কিসানমান্ডি গড়া হয়েছে, তার সঙ্গে হাট কিংবা দৈনিক বাজারের আদৌ সম্পর্ক নেই বলে বিশ্বনাথবাবু দাবি করেছেন। সিপিএমের জেলা সম্পাদক নারায়ণবাবুর অভিযোগ, ‘‘জোর করে খুচরো ব্যবসায়ীদের কিসানমান্ডিতে যেতে বাধ্য করানো হচ্ছে। কিন্তু সেখানে বিক্রিবাট্টা না হওয়ায় ফের উচ্ছেদ হওয়া ছোট দোকানিরা টিন দিয়ে ঘেরা বন্ধ হাটের পাশে খোলা আকাশের নীচে বসে চরম দুর্ভোগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। ওই অন্যায়ের বিরুদ্ধে আমরা প্রচার প্রতিবাদ গড়ে তুলেছি।’’

তৃণমূল পরিচালিত হিলি পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি শিপ্রা মালি দাসের বক্তব্য, হাটটি এত দিন পঞ্চায়েত থেকে ব্যবসায়ীদের লিজ দেওয়া হত। কিসানমান্ডি চালু হওয়ার পরে ওই হাট চালাতে আর লিজ দেওয়া হবে না বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ওই হাটের জায়গায় কর্মতীর্থ গড়ে তোলার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তাতে ছোট ব্যবসায়ী নন, নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ ঘটবে বলে তিনি মনে করেন। জেলা কৃষি বিপণন দফতরের এক আধিকারিক জানান, তিওড়ের হাট থেকে মাত্র এক কিলোমিটার দূরে গড়ে ওঠা কিসানমান্ডিতে ছোট বড় কোনও ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোনও টাকা নেওয়া হচ্ছে না। বরং সিভিক ভলান্টিয়ারের পাহারা থেকে ক্রেতা বিক্রেতাদের জন্য স্নান, শৌচাগার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা সহ বেচাকেনার সব রকম সুযোগ সুবিধা রয়েছে। লিজ নেওয়া হাট মালিকেরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে রোজ ভাড়া বাবদ টাকা সংগ্রহ করেন। তা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় কিছু ব্যবসায়ীকে ভুল বুঝিয়ে কিসানমান্ডিতে যেতে দেওয়া হচ্ছে না বলে পাল্টা অভিযোগ তুলে তৃণমূলের তরফে প্রচারে পাল্টা জবাব দেওয়া হচ্ছে।

অবশ্য কিসানমান্ডি ফেরত ডিম বিক্রেতা প্রবীণ বিজয় সরকার, সবজি বিক্রেতা রণেন মাহাতো থেকে ছোট দোকানদার সুনীল রায়, চঞ্চল মহান্তরা বলেন, সপ্তাহে বুধ ও শনিবার দু’দিন বড় হাট বসলেও হাটকে কেন্দ্র করে ওই চত্বরে দৈনিক বাজার বসে। সঙ্গে মনিহারি, মুদি, চা মিস্টির দোকান থেকে বৈদ্যুতিন সামগ্রীর ছোট দোকানেও বিক্রিবাট্টার উপর দীর্ঘদিন ধরে চলছিল তাঁদের জীবন জীবিকা। এলাকাটি জমজমাট থাকায় স্থানীয় মহিলারাও নিশ্চিন্তে সন্ধ্যার পর দোকান থেকে জিনিসপত্র কিনতেন। এখন হাটের চারদিক টিন দিয়ে ঘিরে বন্ধ করে দেওয়ায় বিক্রি নেই। দোকান ভাড়ার টাকাও উঠছে না বলে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের দাবি। ওই হাট চত্বরের মধ্যে মুক্তমঞ্চটিও টিনবন্দি হয়ে পড়ায় এলাকার সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থেকে সামাজিক অনুষ্ঠানও বন্ধ হয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ তুলে আরএসপির তরফে ভোট প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছে।

left election campaign
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy