দলে ‘ভাঙন’ অব্যাহত। তার মধ্যে ‘দ্বন্দ্ব’ও প্রকট। এই পরিস্থিতিতে বুধবার আলিপুরদুয়ারে দলনেত্রী কী বার্তা দেন, সে দিকেই তাকিয়ে তৃণমূল কর্মী-সমর্থকরা। মঙ্গলবার ফালাকাটায় গণবিবাহের মঞ্চে বক্তব্য রাখেন মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই মঞ্চে দলের রাজ্য সহ-সভাপতি তথা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, আরেক মন্ত্রী তথা কোচবিহার জেলা পার্টির চেয়ারম্যান বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ উপস্থিত ছিলেন। দলের কোচবিহার জেলার সভাপতি পার্থপ্রতিম রায়ও ছিলেন মঞ্চে। তিন নেতার নামই শোনা যায় নেত্রীর মুখে।
কর্মীদের অনেকেই মনে করছেন, দল যে সবাইকে গুরুত্ব দিচ্ছে তা নেত্রীর কথাতেই স্পষ্ট। কিন্ত তাঁদের অভিযোগ, দলের সংগঠন মজবুত করার কাজে কেউ ঐকবদ্ধ ভাবে কাজ করছেন না। অবশ্য কেউই দ্বন্দ্বের অভিযোগ মানতে নারাজ। তাঁদের কথায়, “দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। এ বার কোচবিহারের সব বিধানসভা তৃণমূলের দখলে থাকবে।”
তবে দলের অন্দরমহলের খবর, কোচবিহারে ৯টি বিধানসভা এলাকাতেই তৃণমূলে দ্বন্দ্ব চরমে উঠেছে। এক দিকে রবীন্দ্রনাথ-বিনয়কৃষ্ণ গোষ্ঠী, অন্য দিকে পার্থপ্রতিম-উদয়ন গুহের গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠেছে। শুধু তাই নয়, দলের নেতৃত্বের একটি অংশ মাঝেমধ্যে সোশ্যাল নেটওয়ার্কে ক্ষোভপ্রকাশও করছেন। এই অবস্থায় দলের সংগঠন মজবুত করার ক্ষেত্রে কর্মীদের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে। দলের একটি অংশের কর্মীরা নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়েছেন। কিছুদিন আগে দলের এক বিধায়ক মিহির গোস্বামী বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সবমিলিয়ে কোচবিহারে দল অনেকটাই চাপের মুখে রয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে আলিপুরদুয়ারে মমতার সভা নিয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। কোচবিহার থেকেও প্রতি বুথের ১০ জন করে তৃণমূলকর্মীকে ওই সভায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গেই যুব তৃণমূলও কর্মী-সমর্থক নিয়ে যাবে ওই সভায়। দলের কর্মীরা মনে করছেন, ওই মঞ্চ থেকে নেত্রীর দেওয়া বার্তা দলের কর্মীদের অনেকটাই চাঙ্গা করতে পারে। যাঁরা এখনও বসে রয়েছেন, তাঁরাও ময়দানে নামতে পারেন।
এরই মধ্যে কোন বিধানসভা থেকে কে টিকিট পাবেন তা নিয়েও গুঞ্জন শুরু হয়েছে রাজ্যের শাসক দলে। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, টিকিট নিয়েও দলের জেলা নেতাদের মধ্যে দড়ি টানাটানি রয়েছে। নামপ্রকাশে অনিছুক এক নেতা বলেন, ‘‘দলের কমিটি গঠনে দেখা যাচ্ছে একপক্ষ দায়িত্ব পাচ্ছে, অন্যপক্ষ বসে যাচ্ছে। দু’পক্ষ মিলে গিয়ে কোথাও ময়দানে নামছে না। এটা বড় ক্ষতি। সবাই একসঙ্গে না হতে পারলে এ বার ভাল ফল করা কঠিন হয়ে পড়বে।’’
দলের অন্দরের খবর, এ দিন ফালাকাটায় অনুষ্ঠানে তিন নেতাকেই ভাল করে কাজ করার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এখন প্রকাশ্য মঞ্চে কী বলেন, সেই অপেক্ষাতেই রয়েছেন সবাই।