E-Paper

লাইসেন্সহীন চলছে বহু নার্সিংহোমই

মালদহের জেলার সদর শহর ইংরেজবাজার এবং সংলগ্ন এলাকায় পর পর নার্সিংহোম গজিয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি পরিসংখ্যান বলছে, মালদহ জেলায় বেসরকারি নার্সিংহোমের সংখ্যা এখন ১০৬টি। এর পাশাপাশি আড়াইশোর কাছাকাছি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে।

জয়ন্ত সেন

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০২৫ ০৭:৩৩

— প্রতীকী চিত্র।

নার্সিংহোমে চিকিৎসা করাতে গিয়ে কখনও গ্রামীণ চিকিৎসকের খপ্পরে পড়তে হচ্ছে। কোথাও অ্যানাস্থেসিস্ট ছাড়াই চলছে রোগীর অস্ত্রোপচার। নার্সিংহোমের অস্ত্রোপচার কক্ষে থাকা ফ্রিজে মেয়াদোত্তীর্ণ রক্তের প্যাকেটও উদ্ধার হচ্ছে। একাধিক নার্সিংহোমে প্রশিক্ষিত নার্সিং-কর্মী না থাকার পাশাপাশি পরিকাঠামোর একাধিক ঘাটতি থাকছে। এমনকি ক্লিনিকাল এস্টাবলিশমেন্ট (সিই) লাইসেন্স ছাড়াই নার্সিংহোম থেকে শুরু করে ডায়াগনস্টিক সেন্টার রমরমিয়ে চলছে বলে অভিযোগ।

মালদহ জেলায় বেসরকারি স্বাস্থ্য পরিষেবার হাল অন্তত এমনই। প্রশাসনের ডিস্ট্রিক্ট সার্ভেল্যান্স টিম (ডিএসটি) অভিযান চালিয়ে এই ধরনের নানা বেনিয়ম খুঁজে পাচ্ছে বারবার। প্রশাসনের তরফে আর্থিক জরিমানা করা-সহ নার্সিংহোম ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ‘সিল’ থেকে শুরু করে একাধিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। মঙ্গলবারও কালিয়াচক ১ ব্লকের সুজাপুর এলাকার একটি নার্সিংহোমকে ৫ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয় এবং সেখানে নতুন করে রোগী ভর্তি বন্ধ করা হয়েছে। কিন্তু তার পরেও নার্সিংহোমগুলির বিরুদ্ধে একের পর এক অনিয়মের অভিযোগ উঠেই চলেছে। এই পরিস্থিতিতে মালদহে বেসরকারি ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য পরিষেবা কতটা সুরক্ষিত? প্রশ্ন এখানেই। এই প্রসঙ্গে জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া বলছেন, ‘‘সরকারি নিয়ম-নীতি মেনে নার্সিংহোমগুলি যাতে চলে ও চিকিৎসা ঠিকঠাক হয় সে ব্যাপারে ডিস্ট্রিক্ট সার্ভেল্যান্স টিম নার্সিংহোম ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়মিত পরিদর্শন করছে। গাফিলতি বা অনিয়মের অভিযোগ মিলছে প্রশাসনিক পদক্ষেপ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য পরিষেবায় অনিয়ম বরদাস্ত হবে না।’’

মালদহের জেলার সদর শহর ইংরেজবাজার এবং সংলগ্ন এলাকায় পর পর নার্সিংহোম গজিয়ে উঠেছে। স্বাস্থ্য দফতরের একটি পরিসংখ্যান বলছে, মালদহ জেলায় বেসরকারি নার্সিংহোমের সংখ্যা এখন ১০৬টি। এর পাশাপাশি আড়াইশোর কাছাকাছি ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে। কিন্তু হাতে-গোনা কয়েকটি নার্সিংহোম বা ডায়াগনস্টিক সেন্টার বাদ দিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই পরিষেবা দেওয়া নিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠছে। গত এক বছরে ডিএসটি যে সব নার্সিংহোম বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে হানা দিয়েছিল তাতে দেখা গিয়েছে কোনও নার্সিংহোমে চিকিৎসা করছেন গ্রামীণ চিকিৎসক। দীর্ঘ অপেক্ষা করার পরেও রেসিডেন্সিয়াল মেডিকেল অফিসারের (আরএমও) দেখা পাওয়া যায়নি। কোথাও তাঁরা এমনও অভিযোগ পেয়েছেন যে আল্ট্রাসোনোগ্রাফি এক জন টেকনিশিয়ান করছেন অথচ অন্য এক জন রেডিয়োলজিস্টের নাম স্বাক্ষর করা রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে। সেই রেডিয়োলজিস্ট জানেনই না, আল্ট্রাসোনোগ্রাফির রিপোর্টে তাঁর স্বাক্ষর ব্যবহার করা হচ্ছে।

ভুক্তভোগী রোগীদের পরিজনেরা বলছেন, ‘‘কোথায় যোগ্য চিকিৎসক, টেকনিশিয়ান বা নার্সিং কর্মী রয়েছেন তা আমাদের মতো সাধারণ মানুষের জানার কথা না। কিন্তু উন্নত পরিষেবা পাওয়া যাবে মনে করেই রোগীকে নার্সিংহোমে ভর্তি করা হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত পরিষেবা পেতে গিয়ে বিপদের মুখে পড়তে হচ্ছে। খরচ হচ্ছে টাকা। এ সব বন্ধ হওয়া দরকার।’’ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুদীপ্ত ভাদুড়ি বলেন, ‘‘নার্সিংহোম বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। সেগুলি যাতে ঠিকঠাক পরিষেবা দেয় সে ব্যাপারে আমাদের কড়া নজরদারি রয়েছে।’’ এই প্রসঙ্গে মালদহ জেলার বেসরকারি নার্সিংহোম মালিক সংগঠনের তরফে সম্পাদক সঞ্জয় শর্মা এই দিন বলেন, ‘‘বেশির ভাগ নার্সিংহোমই সরকারি নিয়ম মেনে সাধ্যের মধ্যে পরিষেবা দেওয়ার চেষ্টা করে চলেছে। কিন্তু কোনও ক্ষেত্রে যদি অভিযোগ ওঠে তবে প্রশাসন তা তদন্ত করে দেখবে।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nursing Homes Malda

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy