Advertisement
২১ মার্চ ২০২৩
Mid Day Meal

খুঁটিয়ে সব খোঁজ নিলেন তদন্তকারীরা

রাঁধুনিদের মাস্ক, টুপি, গ্লাভস, এপ্রন পরে রান্না করতে দেখা গিয়েছে। রাঁধুনিদের দাবি, কেন্দ্রীয় দল আসার কিছু দিন আগে থেকেই প্রশাসনের আধিকারিকেরা ঘুরে দেখেছিলেন।

তদন্ত: কেমন হয়েছে খাবার, পরীক্ষা তদন্তকারী সদস্যদের। রান্নাঘরেও পরীক্ষা। ছবি: স্বরূপ সরকার।

তদন্ত: কেমন হয়েছে খাবার, পরীক্ষা তদন্তকারী সদস্যদের। রান্নাঘরেও পরীক্ষা। ছবি: স্বরূপ সরকার।

নীতেশ বর্মণ 
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ ০৭:০৯
Share: Save:

কাঠের উনুনে মুখ-খোলা হাঁড়িতে তখন ভাত রান্না হচ্ছিল। মিড-ডে মিলের তদন্তে আসা কেন্দ্রীয় দলের প্রধান অনুরাধা দত্ত তা দেখেই দাঁড়ালেন। কাঠের উনুনে রান্না কেন, জানতে চাইলেন। রাঁধুনিরা জানালেন, গত মঙ্গলবার রান্নার গ্যাস শেষ হয়েছিল। তাই এ দিন কাঠের উনুনেই রান্না। তবে গ্যাস যে নেই তা নয়। পাশেই গ্যাসে রান্না হচ্ছিল আলুর ঝোল। তা হলে কাঠ কেন? পরে, জানা গেল, একটি মাত্র রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার। দ্রুত রান্না সারতেই আলাদা করে ভাত বসানো হয়েছে।

Advertisement

বুধবার দুপুর ১২টা নাগাদ বাগডোগরায় নামেন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের ১১ সদস্য। এর পরে, তাঁরা ভাগ হয়ে যান। একটি দল সোজা শিলিগুড়ি শিক্ষা জেলার বাগডোগরা শুভমায়া সূর্যনারায়ণ হাইস্কুলে চলে যায়। অন্য দলটি যায় জলপাইগুড়ি জেলায়। বাগডোগরার এই স্কুলে কেন্দ্রীয় দল আসার আগেই প্রস্তুত ছিলেন সবাই। রাঁধুনিদের মাস্ক, টুপি, গ্লাভস, এপ্রন পরে রান্না করতে দেখা গিয়েছে। রাঁধুনিদের দাবি, কেন্দ্রীয় দল আসার কিছু দিন আগে থেকেই প্রশাসনের আধিকারিকেরা ঘুরে দেখেছিলেন। তখনই এ সব নিয়ে সচেতন করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় দলের সদস্যেরা রাঁধুনিদের আঙুলের নখের পরিচ্ছন্নতা থেকে শুরু করে চাল রাখার ড্রাম পরীক্ষা করেন এবং খাবারও চেখে দেখেন। পড়ুয়াদের স্বাস্থ্যবিধির খুঁটিনাটিও খেয়াল করেন তাঁরা। কয়েক জন পড়ুয়ার সঙ্গে কথা বলতেও দেখা গিয়েছে দলের প্রধান অনুরাধাকে। দু’জন অভিভাবকের সঙ্গেও কথা বলেছেন। মিড-ডে মিলের চালে নিয়ম মেনে পরিমাণ মতো পুষ্টিকর চাল মেশাতে দেওয়া হয়। তা মেশানো হয়েছে কি না, জানতে চান। অবশ্য রাঁধুনিরা তা জানাতে পারেননি বলে দাবি। চালের বস্তা দেখতে চাইলেও সেখানে ছিল না। পড়ুয়াদের উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কেমন তা-ও মেপে দেখেছেন তদন্তকারীরা। অনুরাধা দত্ত বলেন, ‘‘জয়েন্ট রিভিউ মিশনের (‌জেআরএম) নির্ধারিত নিয়ম মেনেই তদন্ত করা হচ্ছে। সেগুলিই খতিয়ে দেখছি।’’

শিলিগুড়ি শিক্ষা-জেলার স্কুল পরিদর্শক রাজীব প্রামাণিক বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি কাজের একটা মূল্যায়ন হওয়া প্রয়োজন। আমরা আশাবাদী, কোনও ত্রুটি ধরা পড়েনি।’’

পাশেই বাগডোগরা হিন্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়। সেখানেও একই ভাবে তদন্ত করেন আধিকারিকেরা। অভিযোগ, সেখানে ডিপ টিউবওয়েলের জলে রান্না হয় এবং রান্না ঘরের পাশে আবর্জনা জমে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে শিক্ষকদের।

Advertisement

বাগডোগরা থেকে ফেরার পথে কেন্দ্রীয় দল পৌনে ৪টে নাগাদ আঠারোখাই বালিকা বিদ্যালয়ে ঢোকে। ততক্ষণে পঞ্চম এবং ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়াদের ছুটি হয়েছিল। অন্য ক্লাসগুলি ছিল বলে দাবি। রাঁধুনিরা তাঁদের মজুরি বৃদ্ধির দাবি করেন। সেখানকার প্রধান শিক্ষিকা সুলগ্না গুপ্ত বলেন, ‘‘আনাজের খোসা থেকে জৈব সার তৈরির ব্যবস্থা এবং কিচেন গার্ডেন দেখে প্রশংসা করেছেন কেন্দ্রীয় দলের আধিকারিকেরা।’’

সূর্যনারায়ণের শিক্ষক ও তৃণমূল নেতা সুপ্রকাশ রায় মিড-ডে মিল তদন্তে রাজনীতির অভিযোগ তুলেছেন। তবে তাঁর বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় দল আসতেই পারে। কিন্তু শুধু এ রাজ্যে কেন? এ রাজ্যের মডেল হয়তো অনুসরণ করতে চাইছে কেন্দ্র।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, Twitter এবং Instagram পেজ)
Follow us on: Save:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE
Popup Close
Something isn't right! Please refresh.