Advertisement
E-Paper

কম্পিউটারে ধুলোর আস্তরণ, থমকে শিক্ষা

কাগজে-কলমে শিক্ষার হার বাড়লেও মান বদলায়নি। সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা আখেরে যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। তাদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষার দৃষ্টান্ত সারা জেলা জুড়েই এক। মেয়ে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে অবস্থাটা ছেলেদের চেয়েও খারাপ। একটি বেসরকারি ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত ২০০১ সালের জনগণনায় দেখা যায়, মালদহ জেলায় সাক্ষর মহিলার সংখ্যা ৪১.২৫ শতাংশ।

সায়নী মুন্সি

শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৫ ০৪:৪৪

কাগজে-কলমে শিক্ষার হার বাড়লেও মান বদলায়নি। সংখ্যালঘু পড়ুয়ারা আখেরে যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। তাদের জন্য আধুনিক প্রযুক্তি বিষয়ক শিক্ষার দৃষ্টান্ত সারা জেলা জুড়েই এক।

মেয়ে পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে অবস্থাটা ছেলেদের চেয়েও খারাপ। একটি বেসরকারি ওয়েবসাইট থেকে প্রাপ্ত ২০০১ সালের জনগণনায় দেখা যায়, মালদহ জেলায় সাক্ষর মহিলার সংখ্যা ৪১.২৫ শতাংশ। ২০১১ সালে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৬.৯৬ শতাংশতে। সাক্ষরতার হার বাড়লেও বাস্তবের ছবি একেবারে উল্টো।

যেখানে মালদহ শহরের সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে পঞ্চম শ্রেণি থেকেই কম্পিউটার শেখানো হয়, সে দিক থেকে মাদ্রাসাগুলির পড়ুয়ারা কার্যত বঞ্চিত। জেলার সংখ্যালঘু বিষয়ক দফতর সূত্রে জানা যায়, ২০১১-১২ আর্থিক বর্ষে দশটি মাদ্রাসার কম্পিউটার ল্যাবের উন্নতিকল্পে আনুমানিক ৪২ লক্ষ টাকা দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাতে কাজের কাজ হয়নি বলে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের দাবি। নামমাত্র কম্পিউটার ল্যাবে কম্পিউটারগুলি ধুলোর আস্তরণে সাদা হয়ে রয়েছে। এ দৃশ্য সব মাদ্রাসাতেই আদতে এক।

শহর থেকে একটু দূরে সুজাপুরের নয়মৌজা মাদ্রাসার ছবি আরওই খারাপ। প্রধান শিক্ষক মহম্মদ আদিল হোসেন জানালেন, ২০০৮-০৯ সালে তাঁরা ৪-৫টি কম্পিউটার পেয়েছিলেন। তার পর থেকে আর তাঁদের ভাগ্যে কিছুই জোটেনি। তাঁর আরও অভিযোগ, “আমাদের এক-একটি ক্লাসে কম পক্ষে ১০০-১৫০ জন পড়ুয়া। সেখানে মাত্র ওই ক’টি কম্পিউটারে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হয় না।” অন্য দিকে, সুজাপুর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকা জানালেন, তাঁদের স্কুলে বিষয় হিসেবে কম্পিউটার পঞ্চম শ্রেণি থেকেই পাঠ্যসূচিতে আছে। সেখানে মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষের অনগ্রসরতার পেছনে তাঁদের উদাসীনতাকেই দায়ী করতে চান তিনি।

মাদ্রাসার উত্তরবঙ্গ আঞ্চলিক কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত আসিফ ইকবালের মতে, “কোনও স্কুলেই পঞ্চম শ্রেণি থেকে কম্পিউটার শেখানো বাধ্যতামূলক নয়। তাই এই বিষয়টি স্কুলগুলির হাতেই ছেড়ে দেওয়া হলেও বাস্তবে মাদ্রাসাগুলিতে এ রকম কোনও উদ্যোগই নেওয়া হয় না।” জেলার সর্বশিক্ষা অভিযান দফতরের কর্মীদের একাংশ জানালেন, ২০১১-১২ সালে পাঁচটি মাদ্রাসা, ২০১২-১৩ সালে ছ’টি মাদ্রাসা এবং ২০১৩-১৪ সালে আবারও পাঁচটি মাদ্রাসায় মাত্র চারটি করে কম্পিউটার ও একটি করে প্রোজেক্টর দেওয়া হয়। যাতে সংখ্যালঘু পড়ুয়াদের শিক্ষার হাল এতটুকু বদলায়নি।

একই অবস্থা বয়স্ক শিক্ষার ক্ষেত্রেও। কম পক্ষে ৪-৫টি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষকেরা জানান, সরকারি কোনও নির্দেশ এ ব্যাপারে নেই। তাই তাঁরা কোনও উদ্যোগ এখনও পর্যন্ত নেননি। সরকারি আদেশ পেলেই তাঁরা পদক্ষেপ করবেন। এক কথায়, গ্রাম থেকে শহর সব জায়গাতেই সংখ্যালঘু শিক্ষায় গাফিলতি আর অবহেলার চিহ্ন স্পষ্ট।

মালদহ শহরের বুকেই মালদহ মডেল মাদ্রাসা। সেখানকার সহ-প্রধান শিক্ষক মোস্তাফা কামাল জানান, তাঁদের মাদ্রাসায় একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণি ছাড়া কোনও শ্রেণিতেই কম্পিউটার আলাদা বিষয় হিসেবে শেখানো হয় না। গত দু-বছরে কোনও সরকারি সাহায্য তাঁরা পাননি বলেও অভিযোগ করেন। ওই মাদ্রাসারই দশম শ্রেণির দুই ছাত্র জানায়, তারা কোনও দিনই সে ভাবে কম্পিউটার শেখার সুযোগ পায়নি।

আবার অচিনতলা মাদ্রাসা হাই স্কুলের এক শিক্ষক অভিযোগ করেন, তাঁদের স্কুলে সম্পদ এবং শিক্ষক দুয়েরই অভাব রয়েছে। তাই শিক্ষায় সার্বিক মানোন্নয়ন তাঁদের পক্ষে সম্ভব নয়। কাজেই মাদ্রাসাগুলির কর্তৃপক্ষের দাবি, সরকারি তরফে যতই জোর গলায় উন্নতির দাবি করা হয়ে থাকুক না কেন, আখেরে তা সাইকেল বিতরণেই আটকে।

computer education north bengal Madrasa teacher Malda
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy