রবিবার বিজেপিতে যোগ দিলেন রাজ্যের মন্ত্রী উদয়ন গুহর ভাগ্নি উজ্জ্বয়িনী রায় (বিজেপির পতাকা হাতে)। — নিজস্ব চিত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের ডেপুটি নিশীথ প্রামাণিকের কোচবিহারের বাড়িতে ‘ঘেরাও’ কর্মসূচি করেছে তৃণমূল। এই কর্মসূচিতে অন্যতম মুখ্য ভূমিকা নিয়েছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ। সেই উদয়নের ভাগ্নি উজ্জ্বয়িনী রায় এ বার যোগ দিলেন বিজেপিতে। জানালেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আদর্শকে সামনে রেখে নিশীথের সহযোগিতায় বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন তিনি। উত্তরবঙ্গের জন্য কাজ করতে চান। মামা উদয়ন অবশ্য ভাগ্নিকে ‘সাবধান’ হওয়ার পরামর্শ দিলেন।
রবিবার সকালে তৃণমূল যখন নিশীথের ‘বাড়ি ঘেরাও’ কর্মসূচি করছে, তখনই উদয়নের ভাগ্নি উজ্জ্বয়িনী যোগ দিলেন বিজেপিতে। আর বার বার জানিয়ে দিলেন, রাজনীতি তাঁর রক্তে থাকলেও নিশীথের সহযোগিতাতেই এই যোগদান। তাঁর কথায়, ‘‘মাননীয় সাংসদ নিশীথ প্রামাণিকের সহযোগিতায় বিজেপিতে যোগ দিলাম। নরেন্দ্র মোদীর আদর্শ পালন করে সবার সমর্থনে আমি এই দলকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। সকলে আমায় সহযোগিতা করবেন।’’
তাঁর মামা উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী। অথচ শাসকদলের পরিবর্তে রাজ্যের বিরোধী দলে যোগ দিলেন উজ্জ্বয়িনী। কাজে করতে কি সমস্যা হবে না? জবাবে উজ্জ্বয়িনী বলেন, ‘‘উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী উদয়ন গুহ আমার মামা। তিনি তাঁর জায়গায় রয়েছেন। আমি নরেন্দ্র মোদীর আদর্শকে মেনে চলতে চাই। আমি সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে চাই। কাজ করতে চাই।’’ তিনি জানিয়েছেন, স্বামীর কর্মসূত্রে এত দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় কাটিয়েছেন। উত্তরবঙ্গের মেয়ে হিসাবে এখন সেখানকার জন্য কাজ করতে চান। পুরো সময় রাজনীতিতে দিতে চান।
আর এই বিষয়ে তাঁকে সহযোগিতা করেছেন যে নিশীথ, সে কথাও জানিয়েছেন উজ্জ্বয়িনী। তিনি বলেন, ‘‘আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট নিশীথ প্রামাণিক উত্তরবঙ্গের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমারও ইচ্ছা হল, উত্তরবঙ্গের মেয়ে হয়ে নিজে কিছু করি। সেটা এক মাত্র সম্ভব বিজেপিতে যোগ দিয়ে।’’ এমনকি তিনি এ-ও জানিয়েছেন যে, এ ক্ষেত্রে মামা বাধা হয়ে দাঁড়ালে তিনি ‘অতিক্রম’ করে এগিয়ে যাবেন। উদয়নের বাবা কমল গুহ বামফ্রন্টের আমলে দীর্ঘ ২৫ বছর রাজ্যের মন্ত্রী ছিলেন। সেই দাদুও যে তাঁকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন, তা-ও জানিয়েছেন উজ্জ্বয়িনী। তাঁর কথায়, ‘‘আমার দাদু অনেক উন্নয়ন করেছেন। ওই সময় যতটা উন্নয়ন হয়েছে, এখন হচ্ছে না। তাই বিজেপিতে যোগদান।’’
বিরোধী দলে ভাগ্নির যোগদানের বিষয়টিকে যদিও খুব একটা আমল দিতে চাননি শাসকদলের দুঁদে নেতা উদয়ন। তিনি বলেন, ‘‘বলার কিছু নেই। কত মহিলা তো যোগ দিচ্ছেন বিজেপিতে। আবার কত মহিলা দল থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আর ১০ জন মহিলা যোগ দিলে যেমন প্রতিক্রিয়া হবে যে, বিজেপিতে না যাওয়াই ভাল, এ ক্ষেত্রেও তা-ই বলব। বলব, বিজেপিতে না গেলেই পারতেন!’’
উজ্জ্বয়িনী জানিয়েছে, দাদুর অনুপ্রেরণায় যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। এই মন্তব্যকেও কটাক্ষ করতে ছাড়েননি উদয়ন। তিনি বলেন, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে ওঁর বিষয়। দাদুকে সম্মান জানিয়ে যদি বিজেপিতে যাওয়া ঠিক মনে করে, ওঁর ব্যাপার। আমি তো আর দাদুর ঠিকে নিয়ে বসে নেই। ওগুলো নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই।’’ তবে একটা পরামর্শ তিনি দিতে চান বলে জানিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক। উদয়নের কথায়, ‘‘কখনও সামনে দেখা হলে বলব বয়স অল্প, দেখতেও ভাল। বিজেপির বিষয়ে যেন সাবধান থাকেন। নিশীথ প্রামাণিকের কাজে অনুপ্রাণিত হওয়া বিপদের বিষয়। দেখা হলে সাবধান করে দেব।’’
বিজেপি জেলা সভাপতি সুকুমার রায় অবশ্য জানিয়েছেন, তৃণমূলের অনেকেই বিজেপিতে যোগ দিতে চাইছেন। অনেক নেতার আত্মীয়েরাও রয়েছেন। কিন্তু বিজেপি এ ক্ষেত্রে বাছাই করে নিচ্ছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমরা কোচবিহারে যোগদান করাতে থাকলে তৃণমূল ফাঁকা হয়ে যাবে। বেছে বেছে যোগদান করাচ্ছি। অনেক তৃণমূল নেতার আত্মীয় যোগদানের জন্য যোগাযোগ করছেন। আমরা সকলকে নেব না।’’
সম্প্রতি কোচবিহার শহরে গিয়ে বিএসএফ জওয়ানের গুলিতে এক স্থানীয় যুবকের মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তাঁর ডেপুটি তথা বিজেপি সাংসদ নিশীথকে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন অভিষেক। এর পরেই নিশীথের ‘বাড়ি ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করে কোচবিহার তৃণমূল। রবিবার সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় তৃণমূলের কর্মসূচি। পাল্টা মিছিল করে বিজেপিও। কোচবিহার জেলা পার্টি অফিস থেকে কোচবিহার টাউন পর্যন্ত হয় সেই মিছিল। তার মাঝেই উদয়নের পরিবারে এই ভাঙন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy