E-Paper

‘মোহন’ নিয়ে বিষণ্ণ বাণেশ্বর, ভোট-লগ্নে প্রশ্ন

কোচবিহারের বাণেশ্বর। জেলা শহর থেকে কিলোমিটার পনেরো দূরে ওই গ্রাম। গ্রামের শিবমন্দির ঘিরে রয়েছে একটি দিঘি। যা শিবদিঘি নামে পরিচিত।

নমিতেশ ঘোষ

শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪ ০৯:২১
‘মোহন’ কচ্ছপ।

‘মোহন’ কচ্ছপ। নিজস্ব চিত্র।

চৈত্রের দুপুরে যেন বিষণ্ণতার ছায়া। মৃদু হাওয়া বইছে। সেই হাওয়ার তালে-তালে দুলছে দিঘির জল। সেই দোলাতেও যেন বিষাদ। দিঘির পাড়ে চুপটি করে বসে থাকা এক বৃদ্ধ বলে উঠলেন, ‘‘চুপ করে শুনুন। শুনতে পাবেন মোহনদের বিপন্নতার কথা।’’

কোচবিহারের বাণেশ্বর। জেলা শহর থেকে কিলোমিটার পনেরো দূরে ওই গ্রাম। গ্রামের শিবমন্দির ঘিরে রয়েছে একটি দিঘি। যা শিবদিঘি নামে পরিচিত। সেই দিঘিতেই ‘মোহন’দের বসবাস। ‘মোহন’ অর্থাৎ কাছিম। ওই কাছিম অতিবিপন্ন প্রজাতির তালিকাভুক্ত। যার পোশাকি নাম ‘ব্ল্যাক সফ‌্ট শেল টার্টেল’। বাণেশ্বরের বাইরে, ওই কাছিম বাংলাদেশ ও অসমের একটি জায়গায় পাওয়া যায়। বাণেশ্বরের মানুষ ওই মোহনদের ‘দেবতা’ রূপে পূজা করেন। সেই ‘মোহন’ ঘিরে তাঁদের আবেগ অপরিসীম। আবার একটি ভোট এসেছে আর বাণেশ্বর জুড়ে শুরু হয়েছে ‘মোহনদের’ বিপন্নতার কথা।

স্থানীয় বাসিন্দাদের ক্ষোভ, ‘মোহনদের’ নিয়ে ভাবনা নেই কারও। অনেকেই অনেক কিছু প্রতিশ্রুতি দেন। কাজ হয়নি কিছুই। ‘মোহন রক্ষা কমিটি’র সাধারণ সম্পাদক রঞ্জন শীল বলেন, ‘‘যা-যা প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, তার কোনওটি হয়নি। রাস্তায় স্পিড ব্রেকার বসানো হয়নি। মোহন যাতায়াতের জন্য টানেল তৈরি করা হয়নি। পথবাতি নেই। কচ্ছপদের চিকিৎসার জন্য একটি হাসপাতাল তৈরির কথা থাকলেও, তা হয়নি। দিঘির জীববৈচিত্র রক্ষায় একটি বোর্ড টাঙানো হয়েছে। তার বাইরে, কিছুই হয়নি।’’

বিজেপির কোচবিহার জেলা সভাপতি সুকুমার রায় ওই এলাকার বিধায়ক। অভিযোগ, বিধায়ক বা কেন্দ্রীয় প্ৰতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিক মোহনদের নিয়ে কখনও কোনও উৎসাহ দেখাননি। যা শুনে সুকুমার বলেন, ‘‘সিপিএম আমলে মোহনদের মৃত্যু শুরু হয়। যা চলছে তৃণমূল আমলেও। এই দুই সরকার মোহন রক্ষায় কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। দায়িত্ব তো তাদের।’’ জেলা পরিষদের সদস্য তৃণমূলের পরিমল বর্মণ ‘মোহন রক্ষা কমিটি’র সভাপতি। বাম আমল থেকেই তিনি ‘মোহন’-রক্ষার আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। তিনি স্বীকারও করে নেন মূল দায়িত্ব রাজ্য সরকারের। তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের যে দায়িত্ব, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। রাজ্য কিছু-কিছু কাজও করেছে। বাকি কাজ দ্রুত করার জন্যে আমরা চাপ তৈরি করেছি। এলাকায় ধর্মঘট করেছি। বিজেপির নেতা-মন্ত্রীরা তো মোহনদের খোঁজ নিতেও আসেন না।’’ বাম নেতা তথা সিপিএমের কোচবিহার জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য মহানন্দ সাহা দাবি করেছেন, ‘‘বাম আমলে কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়াতে মোহনরা ভাল ছিল। এখন আর নেই।’’ সন্ধ্যা নেমে এসেছে। শিবদিঘির পাড়ে ভিড় বাড়ছে ‘মোহনদের’। বৃদ্ধ বলছেন, ‘‘ওরা গল্প করে। বিপন্নতার গল্প।’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Lok Sabha Election 2024

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy