E-Paper

আটকে মহাসড়কের কাজ, নাভিশ্বাস পথচারীদের

ফালাকাটার বিধায়ক তথা বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণের অভিযোগ, ঠিকাদার সংস্থাগুলির থেকে মোটা টাকা ‘তোলা’ চাইছে তৃণমূল।

অরুণাংশু মৈত্র

শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৩
বেহাল মহাসড়ক, ধুলোয় ঢেকেছে আকাশ।

বেহাল মহাসড়ক, ধুলোয় ঢেকেছে আকাশ। —নিজস্ব চিত্র।

বহু বছর ধরে অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে ফালাকাটা থেকে সলসলাবাড়ি মহাসড়কের কাজ। যা নিয়ে শুরু হয়েছে তৃণমূল-বিজপি তরজা। ফালাকাটার বিধায়ক তথা বিজেপির রাজ্য সাধারণ সম্পাদক দীপক বর্মণের অভিযোগ, ঠিকাদার সংস্থাগুলির থেকে মোটা টাকা ‘তোলা’ চাইছে তৃণমূল। তৃণমূলের অবশ্য পাল্টা দাবি, বিজেপির সদিচ্ছার অভাবেই রাস্তার কাজ এগোচ্ছে না। এর পরেও আবার রয়েছে রাস্তার দু’ধারে থাকা বসতি এবং দোকানের ব্যবসায়ীদের ক্ষতিপূরণের দাবিতে আন্দোলন। যার জেরে কাজে বাধা আসছে বলে অভিযোগ। রাস্তার কাজ শেষ না হওয়ায় চরম দুর্ভোগে নিত্যযাত্রীরা।

বিজেপি দীপক বর্মণ বলেন, ‘‘তৃণমূলের এক বড় নেতার অত্যাচারে প্রথম ঠিকাদার সংস্থাটি চলে গেল। এর পরে যারা এল, তাদের থেকে মোটা টাকা চাওয়া হয়েছিল। ফলেও সেটিও চলে গিয়ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয়ে কাজ শুরু হলেও রাস্তাটার এই অবস্থা হয়ে পড়ে আছে।’’ অভিযোগ অস্বীকার করে তৃণমূলের ফালাকাটা টাউন ব্লক সভাপতি শুভব্রত দে বলেন, ‘‘আমাদের বিধায়ক, সাংসদ (মনোজ টিগ্গা) বিজেপির। তাঁরা এলাকায় কোনও উন্নয়নমূলক কাজ করছেন না।’’

২০১৯ সালে জলপাইগুড়ির এক সভায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই ৪১ কিলোমিটার রাস্তার শিলান্যাস করেছিলেন। তার পর থেকে শুরু হয়েও দফায়-দফায় বন্ধ হয়ে গিয়েছে রাস্তার কাজ। অভিযোগ, দুর্গাপুজোর পরে বন্ধ কাজ শুরু করার কথা থাকলেও উপনির্বাচনের জন্য তা শুরু হয়নি। কিন্তু চলছে জরিপের কাজ। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, এই রাস্তার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গা ভাঙাচোরা। সে সব জায়গাতেই ছোট-বড় যানবাহন উল্টে গিয়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। দোলং ডাইভারশনের মুখেও ভাঙাচোরা অংশে গাড়ি-টোটো উল্টে দুর্ঘটনা ঘটছে। পুরো রাস্তা জুড়ে
রয়েছে বড়-বড় গর্ত। উঠে গিয়েছে পিচের প্রলেপ।

অভিযোগ, সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি বালুরঘাটের চরতোর্সা ডাইভারশনের। এখানে ডাইভারশনের পশ্চিম দিকের একাংশ বর্ষায় ভেঙে যায়। দীর্ঘ আন্দোলন সত্ত্বেও ডাইভারশন মেরামত করা হয়নি। পাশেই বালি ফেলে একটি অস্থায়ী রাস্তা তৈরি হয়। শুখা মরসুমে নদীর ধারে এই রাস্তায় যানবাহন চলাচল করলেই ধুলোয় নাজেহাল হতে হচ্ছে সকলকে। বেহাল পলাশবাড়ির সঞ্জয় ডাইভারশনও। ফালাকাটা থেকে আলিপুরদুয়ার চল্লিশ কিলোমিটার রাস্তায় যেতে মোট পাঁচটি সেতু পড়ে। অভিযোগ, তার মধ্যে চারটি সেতুই ভাঙা।

সূত্রের খবর, মূলত ঠিকাদার সংস্থা নিয়ে গোলমালের জেরেই আটকে রয়েছে কাজ। বর্তমানে হরিয়ানার একটি সংস্থা বরাত পেয়েছে। এ ছাড়া, রাস্তার দু’ ধারে যে ব্যবসায়ীরা দোকান চালাচ্ছিলেন, তাঁরাও ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন চাইছেন বলে অভিযোগ। এ নিয়ে আন্দোলনও হয়েছে। ফালাকাটা পঞ্চায়েত সমিতির বন ও ভূমি কর্মদক্ষ দীপক সরকার বলেন, ‘‘কী কারণে বার বার ঠিকাদারি সংস্থা বদল হচ্ছে বুঝতে পারছি না। এর ফলে রাস্তা অর্ধসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। ব্রিজগুলোও হচ্ছে না। রাস্তার ধারে বসবাসকারী ও ব্যবসায়ীরা অনেকে ক্ষতিপূরণ দাবি করে আন্দোলন শুরু করেছে।’’

এ প্রসঙ্গে মহাসড়ক গণসংগ্রাম কমিটির যুগ্ম সম্পাদক তপন কুমার বর্মণ বলেন, ‘‘আমরা মহাসড়ক নির্মাণের জন্য একটি কমিটি গঠন করে আন্দোলন শুরু করি। পথ অবরোধ করা হলে ‘প্রজেক্ট ডাইরেক্টর ব্লক প্রশাসন, পুলিশ এসে আমাদের আশ্বাস দেয় এবং কাজও শুরু হয়। কিন্তু উপনির্বাচন শুরু হওয়ার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। এখন হরিয়ানার একটি সংস্থা কাজ নিয়েছে। তারা দু’বছরে কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এই বিষয়ে কেন্দ্রীয় সড়ক পরিবহন মন্ত্রী নিতিন গডকড়ির কাছে চিঠিও দিয়েছি।’’ এনএইচএআই (জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ)-এর প্রোজেক্ট ডিরেক্টর প্রদ্যুৎ দাশগুপ্তকে এই বিষয়ে জানতে ফোন করা হলেও, তিনি ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজের।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

tender TMC BJP

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy